জুমবাংলা ডেস্ক : অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের জাতিসঙ্ঘে দুর্দান্ত কূটনৈতিক সাফল্যে চিন্তায় পড়ে গেছে ভারত। সাধারণ সম্মেলনে নিজে বক্তৃতা দেয়ার পাশাপাশি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সাথে বৈঠক করেছেন ইউনূস। এর মাধ্যমে ধারণা করা হচ্ছে যে শেখ হাসিনা-পরবর্তী বাংলাদেশের সরকারি নেতৃত্বের প্রতি পশ্চিমি দুনিয়া এবং আমেরিকার পূর্ণ সমর্থন এবং সহযোগিতা থাকবে ভবিষ্যতে। আর এই সহায়তার কৌশলগত, বাণিজ্যিক এবং অর্থনৈতিক ভূমিকা রয়েছে। ফলে ভারত আশঙ্কা করছে, ভারতের প্রতি দ্বিপক্ষীয় নির্ভরতার জায়গা সঙ্কুচিত করাই এই মুহূর্তে ইউনূস সরকারের লক্ষ্য কি না, সেই প্রশ্নও উঠে আসছে দিল্লির কূটনৈতিক মহলে। কলকাতাভিত্তিক আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদনের শুরুতে ভারতের পররাষ্ট্র দফতরের ক্ষোভের কথা উল্লেখ করে বলা হয়, বাংলাদেশের মাটিতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর নিপীড়ন রুখতে নতুন অন্তর্বর্তিকালীন সরকার উপযুক্ত ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে ক্ষোভ বাড়ছে সাউথ ব্লকে। সে কারণে মুহাম্মদ ইউনূস চাইলেও জাতিসঙ্ঘ সাধারণ সম্মেলনে তার সাথে বৈঠক প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এড়িয়ে গিয়েছিলেন বলে সূত্রের খবর। তবে মোদির সাথে বৈঠক না হলেও আমেরিকার সিলমোহর নিয়ে সফলভাবেই আন্তর্জাতিক দৌত্য সারলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস। যা দিল্লির আশঙ্কা বাড়িয়েছে।
এতে বলা হয়, সাধারণ সম্মেলনে নিজে বক্তৃতা দেয়ার পাশাপাশি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সাথে বৈঠক করেছেন ইউনূস। পাশাপাশি, ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট, বিশ্ব ব্যাংকের প্রধান এবং এডিবি-র শীর্ষকর্তার সাথেও আলাদা করে আলোচনা হয়েছে তার। এই সব আলোচনার মূল সূর একটাই। শেখ হাসিনা-পরবর্তী বাংলাদেশের সরকারি নেতৃত্বের প্রতি পশ্চিমি দুনিয়া এবং আমেরিকার পূর্ণ সমর্থন এবং সহযোগিতা থাকবে ভবিষ্যতে। যে সহায়তার কৌশলগত, বাণিজ্যিক এবং অর্থনৈতিক ভূমিকা রয়েছে। এক কথায়, ভারতের প্রতি দ্বিপক্ষীয় নির্ভরতার জায়গা সঙ্কুচিত করাই এই মুহূর্তে ইউনূস সরকারের লক্ষ্য কি না, সেই প্রশ্নও উঠে আসছে কূটনৈতিক মহলে।
আনন্দবাজার জানায়, ভারতের পররাষ্ট্র দফতরের চিন্তা বাড়িয়ে নিউ ইয়র্কে ইউনূসের দৌত্য তালিকা প্রসারিত হয়েছে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এবং চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-র সাথেও। সূত্রের খবর, সার্ক-কে জাগিয়ে তোলা ও বাংলাদেশ-পাকিস্তান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে পুনরুজ্জীবিত করা নিয়ে কথা হয় ইউনূস-শরিফের। ভারত-সংশ্লিষ্ট কূটনৈতিক মহলের বক্তব্য, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত ১০০ দিনে কাজকর্মের খতিয়ানে বাংলাদেশের প্রসঙ্গ না রাখলেও এই মুহূর্তে ঢাকার সাথে সম্পর্কের কৌশল রচনাই মোদি সরকারকে অগ্রাধিকারের মধ্যে রাখতে হবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তানের সাথে ঘনিষ্ঠতার বার্তা থেকে স্পষ্ট, বাংলাদেশ এখন তার নীতির কেন্দ্রে জামায়াতে ইসলামীকে আরো বেশি করে রাখতে চাইছে। যা স্বস্তির নয় নয়াদিল্লির কাছে। আপাতত দু’টি বিষয় স্পষ্ট। এক, এই অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক বৈধতা পেয়ে গেছে সে দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মধ্যে। দুই, ঢাকার সাথে ইসলামাবাদের সম্পর্ক আগামী দিনে এগোলে তা নিয়ন্ত্রণ করার মতো কূটনৈতিক অস্ত্র এখন ভারতের হাতে নেই। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, জাতিসঙ্ঘে বাংলায় বক্তৃতা দিয়েছেন ইউনূস। এই বার্তাই তিনি দিতে চেয়েছেন, ক্ষমতার বদল হলেও তাকে শুধু ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা ঠিক নয়। বাংলাদেশের জাতিসত্তার স্বকীয়তাতেই তিনি বিশ্বাসী।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।