বিনোদন ডেস্ক : আমাদের মধ্যে দক্ষিণী সিনেমা গুলো নিয়ে সবসময় একটা আলাদা জায়গা থাকে। থাকবে নাই বা কেন। তাদের অভিনয় এবং গল্প। সবসময় আমাদের মন কেড়েছে। বেশিরভাগ নায়ক নায়িকাদেরকে, নামে চেনা হলেও তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পর্কে আমাদের তেমন কিছু জানা নেই। আজকে সেরকমই এক অভিনেত্রী। যার নাম হলো সাই পল্লবী সেনথামারাই কান্নান তাকে নিয়ে কথা বলবো। দক্ষিণের অনেক অ্যাক্ট্রেস রয়েছে কিন্তু তার কথা কেন বলছি। সেটাই তো আপনার প্রশ্ন তাই না। কিছু বিষয় রয়েছে।
যা সাউথের এই অভিনেত্রীকে বিশেষ করে তোলে। বলা হয় তিনি নাকি দক্ষিণী অভিনেত্রীদের মধ্যে সবথেকে সুশীল। তার বেশিরভাগ বলতে সমস্ত সিনেমাগুলোতেই তাকে সুশীল পোশাক আশাকে দেখা গিয়েছে। তাছাড়াও তেমন কোন আপত্তিকর বিষয়ে তিনি কখনোই রাজি হননি। কোন ছোট পোশাক বা কোন অতি ঘনিষ্ঠ মুহুর্তের শুটিংয়ে তিনি সবসময়ই নিষেধাজ্ঞা রেখেছেন। যেটা তাকে সবার থেকে আলাদা করে। ইদানিং শোনা যাচ্ছে তিনি নাকি তার অভিনয় ক্যারিয়ার থেকে সম্পূর্ণ বের হয়ে আসতে পরিকল্পনা করছেন। তবে কেন কি কারনে ।আজ আলোচনা হবে সে বিষয়গুলো নিয়ে এবং তাকে নিয়ে। কিভাবে তিনি তার এক্টিং ক্যারিয়ারে ঢুকেছিলেন। কিভাবেই বা এতো কম সময়ে এতোটা জনপ্রিয় হয়ে উঠলেন সে বিষয় জানাতে চলেছি আজ। । তার অতীত থেকে শুরু করে বর্তমান পর্যন্ত যা তথ্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। সে সবগুলোই একত্রে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করা হবে আজকের ভিডিওতে। বিষয়টায় যদি ইন্টারেস্টেড হয়ে থাকেন। তাহলে শেয়ার করতে পারেন আপনার বন্ধু-বান্ধবদের সাথে। তো চলুন শুরু করি।
শুরু করা যাক তার জন্ম এবং তার পরিবার নিয়ে। তিনি ১৯৯২ সালের ৯ই মে তামিলনাড়ুর নীলগিরি জেলায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন। জাতীয়তার দিক থেকে তিনি একজন ভারতীয়। পূজা কান্নান নামের তার এক বোন আছে। বলে রাখা ভালো তার মা ছিলেন একজন নৃত্যশিল্পী। অর্থাৎ এখানেই বোঝা যাচ্ছে ভারতীয় এই অভিনেত্রী। নাচের দিক থেকে এত পারদর্শী কিভাবে। ছোট থেকে সে কখনো নাচ শিখতে প্রতিষ্ঠান এর উপর নির্ভর করেননি। প্রাতিষ্ঠানিক অনুশীলন ছাড়াই তিনি তার নৃত্য দিয়ে বিশাল সংখ্যক মানুষের মন জয় করেছিলেন। ২০১৫ সালের প্রেমাম সিনেমাটা তার প্রথম জনপ্রিয় সিনেমা ছিলো। যেখানে তিনি মেইন অভিনেএী হিসেবে অভিনয় করেছিলেন।
তিনি তার অ্যাক্টিং ক্যারিয়ারে মোট ২২ টা সিনেমায় অভিনয় করেছেন। কিন্তু তার মধ্যে মেইন ক্যরেক্টার হিসেবে যে কয়টা সিনেমায় অভিনয় করেছেন। তার সাংখ্যা হলো ১৪টি। বাকিগুলোতে এস এ সাইড ক্যারেক্টার হিয়েবে তার অভিনয় ছিলো। তার সাকসেসফুল সিনেমা গুলো হলো। ২০১৬ সালের কালনী। ২০১৭ সালের ফিদা, ২০২১ সালের লাভ স্টোরি । তাছাড়াও মারি টু, অ্যাথিরান ,পাভা কাধাই গাল এর মত সিনেমাগুলো তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে। জানলে অবাক হবেন। অভিনয় শুধুমাত্র তার একমাত্র পেশা নয়। ২০১৬ সালে ভারতের মেডিকেল কাউন্সিল কর্তৃক স্বীকৃত। ত্রিবিলিসি টেস্ট মেডিকেল ইউনিভার্সিটি থেকে তার মেডিকেল অধ্যায়ন শেষ করেছিলেন তিনি। । তামিল হিন্দি জর্জিয়ান ইংলিশ এই ভাষা গুলো তিনি সাবলীল ভাবে বলতে পারেন।
যদি তার ডান্স ক্যারিয়ার নিয়ে কথা বলতে যাই। সেখানে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন। যদিও তিনি একজন প্রশিক্ষিত নৃত্যশিল্পী ছিলেন না। তবে তিনি সব সময় এমন কিছু করতে চেয়েছিলেন। যার সাথে তার এই নৃত্য জড়িয়ে থাকবে। স্কুল লাইফে তিনি এমন অনেক অনুষ্ঠানে নিজের নাম দিয়েছিলেন। যেখানে সবাইকে তিনি তার নৃত্যের মাধ্যমে মুগ্ধ করেছিলেন। সেখান থেকেই তার এই দক্ষতার প্রতি চর্চা শুরু হয় সবার মুখে মুখে।
তারপর আসা যাক তার অভিনয় জগতে। ২০০৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত কাস্তরিমান। এবং ২০০৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ধামধুম সিনেমায়। তিনি প্রথম এক শিশু শিল্পী হিসেবে অভিনয় করেছিলেন। তারপর তার সর্বপ্রথম যে সিনেমায় তিনি একজন মেইন ক্যারেক্টার হিসেবে অভিনয় করেছিলেন। সেটা হলো ২০১৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত প্রেমাম। তবে তখন তিনি ছিলেন একজন স্টুডেন্ট । সিনেমার শুটিং তিনি তার লেখাপড়ায় ছুটির মধ্যে শেষ করেছিলেন। আর শুটিং এরপর আবারো তার লেখাপড়ার জীবনে ফিরে আসেন তিনি। তবে তিনি সে বছরই তার দক্ষতার কারণে। বেশ কিছু পুরস্কার পান। তার মধ্যে একটা ছিল ফিল্মফেয়ার। তার পরবর্তী সময়ে ২০১৫ সালে তার কাছে পরবর্তী সিনেমার প্রস্তাব এসেছিল। তবে তখন তিনি তার ডাক্তারি লেখাপড়ার কারণে সেটাকে প্রত্যাখ্যান করেন। কিন্তু তার পরবর্তী সময়ে তিনি তার দ্বিতীয় সিনেমা কালোনির শুটিং এর জন্য। লেখাপড়া থেকে এক মাসের বিরতি নেন। বলা যায় এভাবেই শুরু হয়েছিল তার অভিনয় জগত।
তারপর বেশ কিছু সিনেমাতে তার পারদর্শিতা এবং দক্ষতা। তাকে নতুন একটা অধ্যায়ের মুখ দেখিয়েছিল। তার জনপ্রিয়তার কারণগুলোর মধ্যে একটা হল। তিনি সুশীল থাকতে পছন্দ করেন। কথাবার্তায় তার সাবলীলতা তাকে যেন দর্শকদের কাছে পছন্দনীয় করে তুলেছিল। যেখানে বাকি অভিনেত্রীগণ শক্ত মেকাপের আড়ালে নিজের আসল চেহারা লুকান। সেখানে তিনি তার গালের রুক্ষ কিছু দাগ নিয়েই সবলীলভাবে অভিনয় করেছেন। যেটা পরবর্তীতে তার জনপ্রিয়তার একটা মুখ্য কারণ হয়ে দাঁড়ায়। জনপ্রিয় তারকাদের মধ্যে একজন হয়ে উঠেছিলেন তিনি। তাছাড়াও তার রয়েছে প্রতিবাদের এক বিরল সাহস। তাকে তৎকালীন সময়ে একটা এড করার জন্য দু কোটি রুপির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। সেই এড ছিল একটা ত্বকে ব্যবহার করা ক্রিম নিয়ে। যেখানে তাকে প্রমোশন করতে হবে এই ক্রিমটা ব্যবহার করলে নাকি গায়ের রং উজ্জ্বল হবে। শুধুমাত্র এই প্রমোশনের জন্য তাকে দুই কোটি রুপির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল তৎকালীন সময়ে। কিন্তু সে সরাসরি সেটাকে সে ঠুকরে দেয়। তিনি বিশ্বাস করেন গায়ের রং কখনোই ম্যাটার করে না। যেটা আমরা তার অভিনয় তেই দেখতে পাই।
তিনি কখনোই তার শারীরিক ত্রুটির কারণে লজ্জিত হননি। তিনি জানিয়েছিলেন এসব ক্রিম নাকি ধোঁকাবাজির একটা রূপ। আর কখনোই নিজের গায়ের রঙের উপর নিজেকে বিচার করতে হয় না। তাছাড়াও শুটিং এর আগে যে শর্তগুলো তিনি দিয়ে রাখেন। সেগুলোর মধ্যে একটি হলো কোন প্রকার ছোট পোশাক এ তিনি অভিনয় করবেন না। খুব বেশি প্রয়োজন না হলে তিনি সবসময় সাবলীল পোশাকেই থাকতে চান। তার ক্যারিয়ারে তিনি একবার ডান্স শেখার জন্য জর্জিয়ানের এক প্রতিস্ঠানে।
এক বিশেষ ছোট পোশাক পড়েছিলেন। তিনি এর জন্য তার বাড়ি থেকেও অনুমতি নিয়েছিলেন। তবে তার প্রেমাম সিনেমার পর সেই ডান্স শেখার ভিডিওটা ভাইরাল হবার পর। অনেক নেগেটিভ রেসপন্স পেয়েছিলো। তারপর থেকে তিনি কখনোই কোন ছোট পোশাকে দর্শকদের সামনে আসেননি। তাছাড়াও তার আরেকটি শর্ত হলো সিনেমায় কোন ঘনিষ্ঠ মুহূর্তে। ক্যারেক্টারের সাথে চুম্বনের বিষয়টা সে শক্তভাবে না করেন। যেটা তার পার্সোনালিটি কে কয়েক গুণ উপরে উঠিয়ে দিয়েছে। সাউথের সমস্ত অভিনেত্রীদের মধ্যে তিনি একজন। যিনি নাকি এতটা কম সময়ে এতটা সফলতা পেয়েছিলেন।
তিনি তার বাহ্যিক চেহারা নিয়ে বর্তমানে তেমন পরোয়া না করলেও। কোন এক সময় তার মুখভর্তি ব্রণ নিয়ে তিনিও ছিলেন খুবই চিন্তিত। কনফিডেন্স পেতেন না কোনখানে। তবে সেই ২০১৪ সালে প্রেমাম সিনেমা মুক্তি পাবার পর। সে সিনেমার সফলতা দেখে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন। বাহ্যিক সৌন্দর্য তেমন বিশেষ কোনো বিষয় নয়। আর সেখান থেকেই তার সেই হীনমন্যতা একদম দূর হয়ে গিয়েছিল। তবে শোনা যাচ্ছে বর্তমানে তিনি নাকি তার অভিনয় ক্যারিয়ার ছাড়তে চলেছেন। কারণটা হলো তার ডাক্তার হবার স্বপ্ন। তিনি অভিনয় জগত থেকে বের হয়ে তার ডাক্তারি পেশাটাকে আঁকড়ে ধরতে চান। ইতোমধ্যে আমাদের জানা হয়েছে তার লেখাপড়ায় তিনি ডাক্তারিতে অনেক এগিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু মাঝখানে সিনেমা জগতে এসে তার সে দিকটায় একটু কমতি পড়ে গিয়েছিল। তাই সেই আসল লক্ষ টাকে পূরণ করতে তিনি ছাড়তে চলেছেন তার অভিনয় জগত। নিজের বাসস্থান তামিলনাড়ুতে একটা হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা ও করবেন তিনি। তার ছোট বোন পূজাকে সে নিজের সাথে রাখতে চায়। তবে বিষয়টা নিয়ে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য তিনি প্রকাশ করেননি। এই কথা পরিবর্তিতও হতে পারে।
তারপর পরবর্তী যে বিষয়টা নিয়ে কথা সেটা হল সাই পল্লবীর বয়স এখন ৩০। তবে এখনো তিনি বিয়ে করার প্রতি আগ্রহী হননি। সচরাচর সমস্ত রোমান্টিক সিনেমা গুলো হাতে নিলেও। কখনো তাকে নিয়ে কোন প্রেমের গুঞ্জন বা এই টাইপের বিষয়গুলো প্রকাশ পাইনি মিডিয়াতে। এখনো বিবাহিত জীবন থেকে সিঙ্গেল আছেন তিনি। তবে তার ফ্রেন্ডসদের মনে সব সময় এই প্রশ্নটা অবশ্যই ঘুরপাক খেয়েছে কেমন ছেলে পছন্দ তার। যার উত্তর তিনি নিজেই দিয়েছিলেন। তিনি জানান। তার এমন ছেলে পছন্দ যে নাকি সমস্ত সময় সবার সাথে সংবেদনশীল থাকবে । এমন কেউ নয় যে নাকি অহংকারের উচ্চ সীমানায় নিজেকে দাঁড় করিয়ে রাখে। যদি বডি ফিট থাকে তাহলেই ঠিক আছে। বডি বিলডিং করার কোন প্রয়োজন নেই। এমন ছেলে পছন্দ তার। অর্থাৎ তিনি জানিয়েছেন যার কোন উপরি উপরি ভাব থাকবে না। এমন ছেলে।
তাছাড়াও তার ব্যাপারে এমন আরো কিছু গুঞ্জন সোনা গিয়েছিল যা সত্য নাকি মিথ্যা সেটার প্রমাণ পাওয়া দায়। তার প্রেগনেন্সি নিয়েও একটা গুন্জন শোনা গিয়েছিলো। কিন্তু বিষয়টার কোন তেমন সত্যতা পাওয়া যায়নি। তাই সেই বিষয়টা নিয়ে আমিও তেমন কিছু বলতে চাচ্ছি না। আমাদের কারোরই উচিত নয় কোন উড়ে আসা কথাকে আকড়ে ধরার।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।