আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বাংলাদেশ ইস্যুতে ভারতের গণমাধ্যমে অপপ্রচার (প্রোপাগান্ডা) চলছেই। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর ফেসবুক, এক্স (সাবেক টুইটার) ইউটিউবের মতো সোশ্যাল প্লাটফর্মের পাশাপাশি ‘রিপাবলিক বাংলা’র মতো কথিত গণমাধ্যমে অপপ্রচার চলেছিল।
কিন্তু দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে এই অপপ্রচারের প্রতিযোগিতায় নেমেছে অন্য গণমাধ্যমগুলোও। এমনকি ভারতের যেসব গণমাধ্যমকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ‘দায়িত্বশীল’ মনে করা হতো, তাদেরই এ ধরনের ভুল সংবাদ প্রচারে নেমে যেতে দেখা গেছে।
ভুল সংবাদ প্রচারের সবশেষ ঘটনাটি ঘটেছে জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় গ্রেপ্তার সাবেক ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের আইনজীবীকে নিয়ে। ইসকন কলকাতার মুখপাত্র রাধারমণ দাস গত সোমবার (২ ডিসেম্বর) তার এক্স অ্যাকাউন্টে একটি পোস্টে দাবি করেন, চিন্ময় দাসের আইনজীবী রমেন রায়ের ওপর হামলা হয়েছে। পোস্টটিকে বিশ্বাসযোগ্য করতে আহত একজনের একটি ছবিও জুড়ে দেওয়া হয়।
তার সেই পোস্ট মুহূর্তেই ভারতীয় গণমাধ্যম লুফে নেয়। এটির ওপর ভিত্তি করেই প্রচার হতে থাকে ‘সংবাদ’। ভুয়া এসব সংবাদে প্রচার হতে থাকে, ‘মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) আদালতে আসার কথা ছিল তার। কিন্তু তার আগেই রমেন রায়ের বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে এবং তাকে নৃশংসভাবে মারধর করা হয়েছে। ’
রাধারমণের এক্স আইডির ওপর ভিত্তি করে এই ভুল সংবাদটি সোশ্যাল মিডিয়ায় যাচ্ছেতাইভাবে ছড়ানোর পাশাপাশি ভারতের ‘দায়িত্বশীল’ গণমাধ্যমকেও একইভাবে প্রচার করতে দেখা গেছে। এই ভুল সংবাদ প্রচারে জি নিউজ, এবিপি লাইভ, দ্য ওয়াল যেমন ছিল, তেমনি ছিল টাইমস অব ইন্ডিয়া, এনডিটিভি, বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, হিন্দুস্তান টাইমস, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ইন্ডিয়া টুডের মতো প্রতিষ্ঠানও।
ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার ও ফ্যাক্টওয়াচ এই খবরটি যাচাই করে দেখেছে, রমেন রায় নামে চিন্ময় দাসের কোনো আইনজীবীই নেই। চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের ওকালতনামা অনুসারে, তার আইনজীবী হিসেবে মামলাটিতে লড়ছেন শুভাশিস শর্মা।
ফ্যাক্টওয়াচের তথ্য
সংবাদটি যাচাই করে ভুল বলে প্রমাণ করেছে ফ্যাক্টওয়াচ। এ বিষয়ে তাদের ওয়েবসাইটে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।
এতে বলা হয়, ভারতীয় মিডিয়ার দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করে ফ্যাক্টওয়াচ। তিনি বলেন, ‘ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের আইনজীবী রমেন রায়ের ওপর হামলার দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয়। এই নামে চট্টগ্রামে কোনো আইনজীবী নেই। ’
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির তালিকা খুঁজেও এমন কোনো আইনজীবীর নাম পাওয়া যায়নি। আর চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের ওকালত নামা থেকে দেখা যায়, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের আইনজীবী হিসেবে তাঁর মামলাটি লড়ছেন শুভাশিস শর্মা।
রিউমর স্ক্যানারের তথ্য
এ বিষয়ে রিউমর স্ক্যানার তাদের অনুসন্ধানের তথ্য জানিয়ে এক প্রতিবেদনে বলেছে, ছড়ানো ছবির আহত ব্যক্তি তথা রমেন রায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের আইনজীবী নন। যে আহত রমেন রায়ের ছবি ছড়িয়েছে, তিনি আইনজীবী হলেও চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের মামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত নন৷
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২৫ নভেম্বর শাহবাগে চিন্ময়কে গ্রেফতারের প্রতিবাদে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কর্মসূচিতে দুর্বৃত্তদের হামলায় রমেন রায় আহত হন। তবে তার বাড়ি ভাঙচুরের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
বিষয়টি অধিকতর যাচাইয়ের জন্য সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের প্রতিনিধি গৌরাঙ্গ দাসের সঙ্গে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। তিনি বলেন, ভারতীয় গণমাধ্যম বিষয়টি মিথ্যাভাবে উপস্থাপন করছে। রমেন রায় গত ২৫ নভেম্বর শাহবাগে আহত হয়েছেন। আহত রমেন রায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের আইনজীবী নন।
পশ্চিমবঙ্গের মন্দিরের অনুষ্ঠানকে বাংলাদেশে ভাঙচুরের বলে প্রচার
ভারতের গণমাধ্যমে অপপ্রচারের ধারাবাহিকতায় গত ২ ডিসেম্বর আরটি-ইন্ডিয়ার ভেরিফায়েড এক্স আইডি থেকে একটি ভিডিও পোস্ট দেওয়া হয়। যেখানে ক্যাপশনে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে হিন্দু মন্দির আক্রান্ত। এটিকে হামলাকারীদের দেবীর মূর্তি ভাঙার ফুটেজ বলা হচ্ছে। ’
একই ফুটেজ সেখানকার আরও কিছু গণমাধ্যম এবং সোশ্যাল মিডিয়ার প্লাটফর্মে বাংলাদেশে মন্দিরে আক্রমণ দাবিতে প্রচার হয়।
অথচ রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, ভিডিওটি ভারতেরই পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব বর্ধমান জেলার সুলতানপুরে আয়োজিত কালী পুজোর প্রতিমা প্রাক-বিসর্জনের মুহূর্তের।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।