আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের উপজাতি সম্প্রদায় এবং বাঙালিদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে জাতিগত সহিংসতার ঘটনা ঘটলেও, ২০১৮ সালে মোদির বিজেপি ভারতের ক্ষমতায় আসার আগে পর্যন্ত পার্বত্য রাজ্যটিতে হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে সঙ্ঘর্ষের ইতিহাস ছিল না।
কিন্তু, সাম্প্রতিক মাসগুলিতে ত্রিপুরার অনেক জেলা জুড়ে, বিশেষ করে উত্তর ত্রিপুরার কদমতলায়, যেটির বাংলাদেশের সাথে ৯৬ কিলোমিটার দীর্ঘ (৬০ মাইল) সীমান্ত রয়েছে, অতি-ডানপন্থী গোষ্ঠীগুলির সাথে সম্পৃক্ত বৃহত্তর হিন্দু জনতা মুসলমানদের বাড়ি এবং মসজিদে হামলা চালিয়েছে।
হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ উত্তর ত্রিপুরাতে ঐতিহ্যগতভাবে হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে সম্প্রীতির চিহ্ন হিসেবে মুসলমানরা পূজার জন্য অর্থ প্রদান করতো। কিন্তু এবার কদমতলা এবং পার্শ্ববর্তী এলাকার মুসলমানরা দুর্গাপূজার জন্য স্থানীয় হিন্দু ক্লাবে চাঁদা দিতে অস্বীকার করার পর স্থানীয় হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে প্রথমে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। দুর্গা পূজা আয়োজক ক্লাবের এক সদস্য ফেসবুকে নবী মুহাম্মদ (সা:) সম্পর্কে অশালীন মন্তব্য করার পর উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়।
এরপর, মুসলমানরা হিন্দু দেবদেবীদের অবমাননা করেছে এমন অভিযোগে গত ৬ অক্টোবর হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) এর সাথে সম্পৃক্ত গোষ্ঠিগুলি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) আদর্শিক উৎস, যেটি ত্রিপুরাতেও ক্ষমতাসীন, ভারতের উত্তর ত্রিপুরার কদমতলা বাজারের মুসলিম দোকানগুলি ভাংচুর ও ল্টপাট করে। সহিংস হিন্দুত্ববাদীরা এলাকাটির মসজিদে হামলা চালায় এবং মুসলমানদের ব্যবসা বানিজ্য ও ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়।
আগস্ট এবং অক্টোবরে সঙ্ঘটিত এই সংঘর্ষগুলি ভারতের আন্ত:ধর্মীয় সহিংসতার সর্বশেষ উদাহরণ। দেশটির বিরোধী দল কংগ্রেস পার্টির বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন বলেছেন যে, কদমতলার সহিংসতা বিজেপি সরকারের মদদপুষ্ট। কদমতলা জামে মসজিদ কমিটির উপদেষ্টা আব্দুল মতিন আল জাজিরাকে বলেন, ‘তারা সব ধর্মীয় বই পুড়িয়ে দিয়েছে।
ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির (মার্ক্সবাদী) স্থানীয় বিধায়ক ইসলাম উদ্দিন দাবি করেন, ‘চাইলে তারা (পুলিশ) হিন্দুদের ঠেকাতে পারত। সব দেখে মনে হল তারা একটা পক্ষ বেছে নিয়েছে।› সোহেল খান, যার দোকানটিও লুট করে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে, বলেন, ‹তারা আমাদের মানসিক ও অর্থনৈতিকভাবে ধ্বংস করে দিয়েছে। যে সম্প্রীতি ছিল, তা ফিরে আসতে অনেক বছর লাগবে, হয়তোবা কখনোই আসবে না।›
যদিও ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আন্ত:ধর্মীয় সহিংসতার পরিসংখ্যান প্রকাশ করা বন্ধ করে দিয়েছে, ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত রাজ্যব্যাপী দাঙ্গার বিষয়ে ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো থেকে পাওয়া তথ্য দেখায় যে, ত্রিপুরায় সাম্প্রদায়িক সহিংসতার মাত্র যে দুটি ঘটনা ঘটেছে সেগুলি ২০১৯ সালের। হিন্দুত্ববাদী দলটি প্রায় একটি সাম্প্রদায়িক বিভেদ উস্কে দেয়ার চেষ্টার সাথে সাথে সংখ্যাটি ২০১৮ সাল থেকে তীব্রভাবে বেড়ে ডজনখানেকে পৌঁছেছে।
ত্রিপুরার ঘটনাগুলির মধ্যে রয়েছে হিন্দুত্ববাদী দলগুলি মুসলমানদের মালিকানাধীন রাবার বাগানগুলিতে আক্রমণ করা এবং দাবি করা যে, একটি প্রাচীন মসজিদ আসলে একটি মন্দির। কদমতলাতে বিজেপির সংখ্যালঘু শাখার প্রাক্তন সদস্য আব্দুল হকের জন্য সাম্প্রতিক সহিংসতাগুলি একটি বৃহত্তর পরিবর্তনের প্রতীক ছিল।
হক বলেন, ‹আগে হিন্দুদের উৎসবের সময় তারা লাউডস্পিকার এমনভাবে ঠিক করত যাতে মুসলমানদের অসুুবিধা না হয়, কিন্তু এখন তারা লাউডস্পিকার বাজিয়ে উস্কানিমূলক গান বাজায়। এখানে হিন্দুরা বদলে গেছে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।