জুমবাংলা ডেস্ক : বিদেশে ৪৪তম মিশন হিসেবে মালয়েশিয়ায় ই-পাসপোর্ট সেবা চালু করেছে বাংলাদেশ হাইকমিশন। সেখানে ই-পাসপোর্ট সেবা নিতে আসা প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছ থেকে আবেদন ও তথ্য গ্রহণ থেকে শুরু করে পুরো প্রক্রিয়া সম্পাদনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এক্সপাট সার্ভিসেস কুয়ালালামপুর (ইএসকেএল) নামের একটি আইটি প্রতিষ্ঠানকে। এতে মালয়েশিয়ায় থাকা প্রায় ১৫ লাখ প্রবাসীর তথ্য চলে যাচ্ছে বেসরকারি এই প্রতিষ্ঠানের হাতে।
জানা গেছে, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সঙ্গে একটি চুক্তির মধ্য দিয়ে ই-পাসপোর্ট সেবা কার্যক্রমের অংশ হয় এক্সপাট সার্ভিস। পাসপোর্টের নানামুখী সেবা দিতে এরই মধ্যে মালয়েশিয়ার ১৩টি প্রদেশে কার্যক্রম শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। তারা সেবাগ্রহীতা বাংলাদেশি নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, ছবিসহ সব ধরনের তথ্য নিজেদের সার্ভারে সংরক্ষণ করছে। এমনকি ফিঙ্গারপ্রিন্টের মতো বায়োমেট্রিক তথ্যও নিয়ে রাখছে তারা।
একটি বেসরকারি সার্ভারে দেড় মিলিয়ন মানুষের সংগ্রহের ক্ষেত্রে যথাযথ সুরক্ষা নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলেছেন, তথ্য যেন পাচার না হয়, সে ব্যাপারটি নিশ্চিত করতে হবে। সরকার যদি ডেটা সুরক্ষা নিশ্চিত না করে, তবে পরবর্তী সময়ে জটিলতা তৈরি হবে।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হাতে এভাবে তথ্য তুলে দেওয়াটা বড় ধরনের নিরাপত্তা-ঝুঁকি বলে মনে করেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির শিক্ষক ও সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ তানভীর হাসান জোহা। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, এটা বড় ধরনের নিরাপত্তাঝুঁকি। পরবর্তী সময়ে এসব তথ্যের যেকোনো ধরনের অপব্যবহার রোধ করা সম্ভব হবে না। কোনো কূলকিনারাও থাকবে না।
তানভীর হাসান আরও বলেন, যেকোনো ধরনের তথ্যই বিভিন্নভাবে বিভিন্ন ইস্যুতে ব্যবহৃত হতে পারে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার, এই যে তথ্য নিচ্ছে, এটা কিন্তু ব্যক্তিগত সুরক্ষা আইনের পরিপন্থী।
জানতে চাইলে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের কাউন্সেলর (ভিসা ও পাসপোর্ট) মিয়া মো. কেয়াম উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মালয়েশিয়ায় মোট ১৩টি প্রদেশে আমাদের বিপুলসংখ্যক শ্রমিক রয়েছেন; সেসব স্থানে আমাদের হাইকমিশনের পক্ষ থেকে সার্ভিস অফিস খুলে সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাই শুধু আবেদনপত্র পূরণের জন্য একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা আবেদন প্রসেস করবে এবং হাইকমিশনের সাক্ষাতের সময় নির্ধারণ করে দেবে, কোনো ধরনের ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা অন্যান্য কাজ করতে পারবে না। এতে নাগরিকের সব তথ্য অন্যদের কাছে চলে যাবে, তা কিন্তু নয়।’
তবে আজকের পত্রিকার পক্ষ থেকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ই-পাসপোর্ট সেবাগ্রহীতাদের বায়োমেট্রিকসহ সব ধরনের তথ্যই নিচ্ছে এক্সপাট সার্ভিসেস। প্রতিষ্ঠানটির ফেসবুক পেজে মো. সোহাগ মুন্সি নামের এক প্রবাসী জানতে চান, ‘ফিঙ্গারপ্রিন্ট আর ছবি তোলার কাজটি হাইকমিশন করবে, নাকি এক্সপাট সার্ভিস করবে?’ উত্তরে এক্সপাট সার্ভিসেস বলেছে, ‘সবকিছু তারা করবে ওয়ানস্টপ সার্ভিস হিসেবে।’ আবু বক্কর ছিদ্দিক নামের আরেক প্রবাসী ফেসবুক লাইভে জানান, প্রতিষ্ঠানটি তাঁর ছবি তোলা আর ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেওয়ার কাজটিও করেছে। ফলে সেবাগ্রহীতার বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহ নিয়ে হাইকমিশনের পক্ষ থেকে যা বলা হচ্ছে, তার সত্যতা পাওয়া যায়নি।
এক্সপাট সার্ভিসেস কীভাবে কাজটি করে, তা জানতে তাদের কল সেন্টারে যোগাযোগ করা হলে জান্নাতুল নামের একজন ফোন রিসিভ করেন। পরিচয় গোপন করে কথা হয় এই কর্মকর্তার সঙ্গে। পাসপোর্ট বা ভিসা আবেদনের জন্য কোনো তৃতীয় পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ না করার অনুরোধ জানিয়ে এ তথ্য কর্মকর্তা বলেন, ভিসা নেই এমন কেউ পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারবেন না। কারও পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে সে ক্ষেত্রে আগের পাসপোর্টের ফটোকপি, এনআইডি ও পুলিশের অনাপত্তিপত্র প্রয়োজন হবে। আগে যে ভিসা ছিল, সে ভিসার ফটোকপিও লাগবে। এসব না থাকলে পাসপোর্টের জন্য কেউ আবেদন করতে পারবেন না।
এদিকে দূতাবাসের পক্ষ থেকে এ-সংক্রান্ত যে অফিস আদেশ দেওয়া হয় সেখানে বলা হয়েছে, আবেদন ফরম পূরণ, নথি প্রস্তুতকরণ, সাক্ষাৎকার, বায়ো এনরোলমেন্ট, স্ক্যানিং এবং পাসপোর্ট ডেলিভারির জন্য অনলাইন অ্যাপয়েন্টমেন্ট বাবদ নির্দিষ্ট সার্ভিস চার্জ দিতে হবে এক্সপার্ট সার্ভিসেসকে। এই ফির পরিমাণ সাধারণ শ্রমিক ও ছাত্র-ছাত্রীদের ক্ষেত্রে ৩২ মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত এবং অন্যদের ক্ষেত্রে তা ৬০ রিঙ্গিত। ই-পাসপোর্ট আবেদন দাখিলের জন্য আবেদনকারীকে এক্সপার্ট সার্ভিসেসের মাধ্যমে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়া বাধ্যতামূলক বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
প্রসঙ্গত, ১৮ এপ্রিল ই-পাসপোর্ট সেবা চালু করে মালয়েশিয়া হাইকমিশন। রাজধানী কুয়ালালামপুরের সাউথ গেট কমার্শিয়াল সেন্টারে ‘এক্সপাট সার্ভিসেস’-এর অফিসে এ সেবা কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনার মো. শামীম আহসানের সভাপতিত্বে ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী। এ সময় আবদুল্লাহ আল মাসুদ বলেন, বিদেশে ৪৩টি মিশনে ই-পাসপোর্টের কার্যক্রম চালু হওয়ার পর ৪৪তম মিশন হিসেবে মালয়েশিয়ায় ই-পাসপোর্ট চালু হলো। আরও ৩৬টি মিশনে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম চালু প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
মালয়েশিয়ায় হাইকমিশনার মো. শামীম আহসান বলেন, মালয়েশিয়ায় প্রায় ১৫ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশি বসবাস করেন; সংখ্যার বিচারে যা সৌদি আরবের পর বিশ্বে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কমিউনিটি। তাঁদের দাবি অনুধাবন করে ‘ই-পাসপোর্ট ও স্বয়ংক্রিয় বর্ডার নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের’ মাধ্যমে এ কর্মসূচি চালু করা হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।