মতিন আব্দুল্লাহ : নগরায়ণের নামে ঢাকার খোলা ও সবুজ জায়গায়ও কংক্রিটের স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে। ফলে শহরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নষ্ট হয়েছে। বেড়েছে নানা দূষণ ও তাপমাত্রা। শহরের জনঘত্ব বৃদ্ধি পাওয়ায় সুস্থ পরিবেশে মানুষের সময় কাটানোর জায়গার সংকট তৈরি হয়েছে। বাসযোগ্যতার মানদণ্ডে ঢাকার অবস্থান তলানিতে পৌঁছেছে। প্রাণহীন এ অবস্থার উত্তরণে রাজধানীতে নতুন ৮৮টি নতুন পার্ক তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই পার্কগুলো বাস্তবায়িত হলে ঢাকা এবং আশপাশের এলাকা অনেকাংশে বাসযোগ্য হয়ে উঠবে। এমন অভিমত পার্ক স্থাপনের পরিকল্পনাকারী সংস্থা রাজউক ও বিশেষজ্ঞদের।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) ২০২০ সালে ঢাকা শহরের সবুজ এলাকা, জলাশয়, খোলা উদ্যান ও কংক্রিট আচ্ছাদিত এলাকার বিদ্যমান অবস্থা এবং বিগত ২০ বছরে পরিবর্তন শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই গবেষণায় বলা হয়, ২০১৯ সালের জরিপে দেখা যায়, ঢাকার ৮২ ভাগ এলাকা কংক্রিটে ঢেকে গেছে। দুই দশক আগেও যা ছিল ৬৪ দশমিক ৯৯ ভাগ। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকায় ১৯৯৯ সালে জলজ ভূমি ছিল ১৪ দশমিক ২৫ শতাংশ, ২০০৯ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছিল ৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ। আর ২০১৯ সালে তা আরও কমে দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৩৮ শতাংশে। সবুজ এলাকা ১৯৯৯ সালে ছিল ৬ দশমিক ৬৯ শতাংশ, ২০০৯ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৯ দশমিক ২৯ শতাংশ এবং ২০১৯ সালে তা আবার কমে হয়েছে ৯ দশমিক ২০ শতাংশ। কংক্রিট আচ্ছাদিত এলাকা ১৯৯৯ সালে ছিল ৬৪ দশমিক ৯৯ ভাগ, ২০০৯ সালে বেড়ে হয় ৭৭ দশমিক ১৮ ভাগ আর ২০১৯ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ৮১ দশমিক ৮২ শতাংশে। ঢাকায় ১৯৯৯ সালে খোলা জায়গা ছিল ১৪ দশমিক ৭ ভাগ, ২০০৯ সালে ছিল ৭ দশমিক ৮০ শতাংশ; ২০১৯ সালে এসে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৪ দশমিক ৬১ শতাংশে। ওই গবেষণা প্রতিবেদনের সুপারিশে ঢাকাকে বাসযোগ্য রাখতে পার্ক, মাঠ ও উন্মুক্ত জায়গা সৃষ্টির সুপারিশ করা হয়।
এ প্রসঙ্গে বিআইপির সাবেক সভাপতি এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর অঞ্চল ও পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ জানান, পার্ক অনুধাবন করার বিষয়। খাবার যেমন আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, পার্ক এর চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। বাসযোগ্য পরিবেশ ঠিক রাখতে হলে উন্মুক্ত স্থান, পার্ক, খেলার মাঠ তৈরি করতে হবে। প্রয়োজনে বাজারমূল্যে জমি কিনে হলেও উন্মুক্ত জায়গা সৃষ্টির সুপারিশ করা হয়। এজন্য খাসজমিগুলো বেছে নেওয়া যেতে পারে। কোথাও খাসজমি পাওয়া না গেলে অধিগ্রহণ বা বাজারমূল্যে জমি কিনে হলেও পার্ক তৈরি করতে হবে।
এ বিষয়ে রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ এবং বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) প্রকল্পের পরিচালক মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, ধারণক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি মানুষ বসবাস করছে ঢাকায়। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় ন্যূনতম উন্মুক্ত স্থান নেই। এজন্য ঢাকায় এখন বসবাস করা দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। সেসব দিক বিবেচনা করে ঢাকাকে বাসযোগ্য করতে পার্ক তৈরির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে ড্যাপে। সেগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব। ইতোমধ্যে রাজউক, সিটি করপোরেশনসহ অন্যান্য সংস্থা পার্ক বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছে।
পাঁচ আঞ্চলিক পার্ক : রাজউকের পরিকল্পনায় ৫টি আঞ্চলিক পার্কের মধ্যে আছে নারায়ণগঞ্জে আলীরটেকে ১৪৬ একর জায়গায় নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পার্ক, সাভারের ইয়াহিয়াপুরের ২০৭ একর জায়গায় সাভার আঞ্চলিক পার্ক, কায়েতপাড়ার ৬৪৫ একর জায়গায় রূপগঞ্জ ও কালীগঞ্জ পার্ক, রুহিতপুর ও কলাতিয়ার মুগারচর ও চরচামারদাহা মৌজায় ৫৪৬ একর জায়গায় কেরানীগঞ্জ আঞ্চলিক পার্ক এবং সিটি করপোরেশনের সারুপাইতালি ও সুরাবাড়ী মৌজার ২৮২ একর জায়গায় গাজীপুর আঞ্চলিক পার্ক।
জলকেন্দ্রিক ৫৫ পার্ক : শহর এলাকার জলাশয়গুলো এখন আর পরিত্যক্ত থাকবে না। হাতিরঝিলের আদলে গড়ে তোলা হবে বিনোদনকেন্দ্র। সেই চিন্তা থেকে জলকেন্দ্রিক পার্ক গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জলকেন্দ্রিক পার্কের তালিকায় রয়েছে গোড়ান চটবাড়ীর ৫৮৭ একর জায়গায় জলকেন্দ্রিক পার্ক, ২৭ একর জায়গায় রূপনগর শিয়ালাবড়ী পার্ক, ১০০ একর জায়গায় কালশী-মাটিকাটা পার্ক, ৫৫ একর জায়গায় হেমায়েতপুর পার্ক, গাবতলী বাসটার্মিনালসংলগ্ন ১৫৮ একর জায়গায় গাবতলী পার্ক, হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের কাছাকাছি ৩৯ একর জায়গায় বাউনিয়া পার্ক, ঢাকা সেনানিবাসের পাশে ৪৩ একর জায়গায় পার্ক, গাজীপুর মিরেরগাঁও এলাকায় ৫২ একর জায়গায় বিনোদন পার্ক-১, মিরেরগাঁও মৌজায় ৬২ একর জায়গায় বিনোদন পার্ক-২, গাজীপুরের জয়ারটেক ও বেগমপুরে ৭০ একর জায়গায় পার্ক, নারায়ণগঞ্জের পাগলায় ১১ একর জায়গায় পার্ক, নারায়ণগঞ্জের কুতুবপুরের বুড়িগঙ্গার তীরবর্তী এলাকায় ৬ একর জায়গায় পার্ক। ঢাকার কল্যাণপুর ৪ একর জায়গাজুড়ে পার্ক, কল্যাণপুর হাউজবিল্ডিং নামে প্রায় ৩ একর জায়গায় পার্ক, ৭ একর জায়গায় বাঙলা কলেজসংলগ্ন পার্ক, কেরানীগঞ্জ সোনাকান্দা ২৫ একর জায়গায় সোনাকান্দা পার্ক, কেরানীগঞ্জ ১৪ একর জায়গায় হোগলাঘাটি পার্ক, কেরানীগঞ্জের কলাতিয়া-তারানগর এলাকার ৬২ একর জায়গায় পার্ক, ৩২ একর জায়গায় সাভারের মুশুরী খোলা পার্ক, ৩১ একর জায়গায় কেরানীগঞ্জের তারানগর পার্ক, কেরানীগঞ্জের আটিবাজার এলাকায় ১৮ একর জায়গায় শেখ রাসেল পার্ক, কেরানীগঞ্জের কোনাখোলার ব্রাহ্মণকিত্তার ৭ একর জায়গায় পার্ক। সাভারের বিরুলিয়ার কুমারখণ্ড মৌজার ৬ একর জায়গায় গোলাপগ্রাম পার্ক, সাভারের কাউন্দিয়া ইউনিয়নের ৭ একর জায়গায় পার্ক, সাভার পৌরসভার রাঢ়ি বাড়ি মৌজার সাড়ে ৪ একর জায়গায় জাহাঙ্গীরনগর হাউজিং সোসাইটি লেক পার্ক, সাভারের চারিগাঁও মৌজার ১২ একার জায়গায় পার্ক, সাভারের তৈয়বপুর মৌজার ১৩ একর জায়গায় পার্ক, সাভার ধামসোনা ইউনিয়নের ২০৫ একর জায়গায় সাভার ইপিজেড পার্ক, সাভার ধামসোনা ইউনিয়নের সুবান্দি ইউনিয়নের ১৯ একর জায়গায় কলতাসুতি পার্ক, সাভার ধামসোনার বানসাবাড়ি মৌজার ৮ একর জায়গায় পার্ক, সাভারের ধামসোনার পাথালিয়া মৌজায় ২০ একর জায়গায় মির্জানগর পার্ক, খিলগাঁও ১৭ একর জায়গায় হাজিপাড়া পার্ক, খিলগাঁও মৌজার ১০ একর জায়গায় সিপাহিবাগ পার্ক, ভাটারা মৌজার ১৭ একর জায়গায় মাদানি পার্ক, সাঁতারকুলে ১৫০ একর জায়গায় সাঁতারকুল পার্ক, ঢাকার বারুয়া মৌজার ৪১ একর জায়গায় পার্ক, দক্ষিণখান ২২ একর জায়গায় পার্ক, ৯ একর জায়গায় উত্তরখান পার্ক, ৪৩ একর জায়গায় মাতুয়াইল পার্ক, ৪৫ একরে মাতুয়াইল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পার্ক, ২০ একরের নারায়ণগঞ্জের ডেইলপাড়া মৌজার নূরবাগ পার্ক, ঢাকার ভাটারা থানার ৫৯ একরের বেরাইদ পার্ক, ২৩ একরের মাণ্ডা পার্ক, ২৬ একরের ডগাইর পার্ক, তারাব পৌরসভার ২২ একরের পার্ক, ৩৬ একরের তারাব পৌরসভার গোলাকান্দাইল পার্ক, ৩০ একরের ভুলতা নাসিংগাল পার্ক, ৩৩ একরের গোলাকান্দাইলের মাহানা পার্ক, ঢাকার মিরপুরে ৩ একরের মিরপুর মাজার পার্ক, ২৫ একরের পল্লবী পার্ক, ঢাকা উত্তর সিটির ১৫নং ওয়ার্ডে ৮ একরের ধামালকোর্ট পার্ক, ৪ একর জায়গায় সাভারের বলিয়ারপুর পার্ক, ৩১ একর জায়গায় নারায়ণগঞ্জের কাশিপুর ডিক্রিচর পার্ক এবং ৮ একর জায়গায় গাজীপুর গুটিয়া পার্ক।
১৪ ইকোপার্ক : ভাওয়াল বন এলাকা নিয়ে গাজীপুর ইকোপার্ক (রাজউক অংশ)। ৫০৮ একর জায়গা নিয়ে উত্তরখান ইকো পার্ক। ২৮৫ একর জায়গা নিয়ে জাঞ্জিরা-বক্তাবলি ইকোপার্ক। ১২০৭ একর জায়গাজুড়ে নাসিরাবাদ জলকেন্দ্রিক পার্ক। ৪৩ একর জায়গাজুড়ে সাইনবোর্ড ইকোপার্ক। ৮৮ একর জায়গাজুড়ে নারায়ণগঞ্জ জালকুড়ি জলকেন্দ্রিক ইকো পার্ক। ৬১ একর জায়গাজুড়ে নারায়ণগঞ্জ মেনিখালি ইকোপার্ক। ৫৩ একর জায়গাজুড়ে তারাবর ভারাগাঁও জলকেন্দ্রিক ইকোপার্ক। ৪ একর জায়গাজুড়ে কাঁটাসুরের বুড়িগঙ্গা ইকোপার্ক। ৬৪ একর জায়গাজুড়ে জাঞ্জিরা ইকোপার্ক। ১৫ একর জায়গাজুড়ে রূপগঞ্জের পিতলগঞ্জ ইকোপার্ক। ২২৭ একর জায়গাজুড়ে গাজীপুর খালিকাইর ইকোপার্ক। ৮৭ একর জায়গাজুড়ে নারায়ণগঞ্জ জলকুড়ি ও ৮৩ একর জায়গাজুড়ে জয়দেবপুর ইকোপার্ক।
অন্যান্য পার্ক : ৪২২ একর জায়গাজুড়ে কেরানীগঞ্জের কাজিরগাঁও, শুভাড্যা, কুল্লিরচর, বাঘির মৌজাজুড়ে শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় পার্ক। ১৪ একর জায়গাজুড়ে বাউনিয়া খেলার মাঠ পার্ক। ১৬ একর জায়গাজুড়ে সাভার বংশী পার্ক এবং ২৮ একর জায়গাজুড়ে সাভার পার্ক। ২৫ একর জায়গাজুড়ে নারায়ণগঞ্জ পার্ক। ৬ একর জায়গাজুড়ে খোলামোড়া পার্ক। ১০ একর জায়গাজুড়ে কাউন্দিয়া কেন্দ্রীয় পার্ক। ৬ একর জায়গাজুড়ে কেন্দ্রীয় পার্ক। ৩ একর জায়গাজুড়ে আমিনবাজার পার্ক। ৪৭ একর জায়গাজুড়ে হাজারীবাগ ট্যানারি এলাকার জীববৈচিত্র্য পুনঃস্থাপন পার্ক এবং ৪৫ একর জায়গাজুড়ে নার্সিংগাল পার্ক।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।