জুমবাংলা ডেস্ক : শহরের জমির নামজারি ফি এবং বার্ষিক ভূমি উন্নয়ন কর বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এরই অংশ হিসাবে ইতোমধ্যে ভূমি মন্ত্রণালয় ও ভূমি সংস্কার বোর্ড একাধিক বৈঠক ও ওয়ার্কশপ করেছে। এ মুহূর্তে শহর, গ্রামসহ দেশের সব স্থানে ভূমির নামজারি ফি অভিন্ন। যার অঙ্ক ১ হাজার ১৭০ টাকা। আর ভূমি উন্নয়ন কর গ্রামের তুলনায় শহরে অনেক কম।
তবে জমির নামজারি ফি আদায় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, নামজারি ফি নেওয়ার কোনো মানে হয় না। কারণ, একটি জমি হস্তান্তরের সময় গ্রহীতা রেজিস্ট্রেশন ফি, উৎসে আয়কর (গেইন ট্যাক্স), স্থানীয় সরকার কর বা পৌরকর, ভ্যাট, ট্যাম্প ফি, ৫০০ টাকার হলফনামা বা অঙ্গীকারনামা এনএন ফি (নকলনবিশ ফি প্রতি ৩০০ শব্দের এক পৃষ্ঠার জন্য ৩৬ টাকা) এবং অগ্রক্রয় ফি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) প্রদান করতে হয়। আট ধরনের কর আদায়ের পরও আবার গ্রহীতার কাছ থেকে নামজারি ফি কেন গ্রহণ করতে হবে। তাদের আরও অভিমত-নামজারি ফি দিয়ে একজন গ্রাহক কী পায়। নামজারি ফির বিনিময়ে আগের মালিকের পরিবর্তে নতুন মালিকের নাম রেকর্ডে সম্পৃক্ত করা হয়। নতুন খতিয়ান বা লেজার বুকে নতুন মালিকের নাম লেখা হয়। নতুন মালিককে একটি পর্চা দেওয়া হয়। এসব কাজে ব্যবহৃত কাগজ ও কালি খরচ বাবদ ২০ টাকাও খরচ হয় না। সুতরাং ১ হাজার ১৭০ টাকা নামজারি ফি নেওয়ার কোনো মানে হয় না। বিষয়টি সরকার পুনর্বিবেচনা করতে পারে।
এছাড়া বার্ষিক ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ের ক্ষেত্রে শহর ও গ্রামে বড় ধরনের ব্যবধান রয়েছে। সেক্ষেত্রে শহরের ভূমির বার্ষিক ভূমি উন্নয়ন কর বাড়ানো নিয়ে কাজ করছে ভূমি মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে ভূমিসচিব মো. খলিলুর রহমান বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। আশা করছি পর্যাক্রমে বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজধানীর অভিজাত এলাকায় ভূমির নামজারি ফি ১ হাজার ১৭০ টাকা। ভূমির পরিমাণ যাই হোক, নামজারি ফি নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে চাঁদপুরের হাইমচরেও নামজারি ফি ১ হাজার ১৭০ টাকা। অর্থাৎ, জমির পরিমাণে যাই হোক, নামজারি ফি একই। অথচ রাজধানীর অভিজাত এলাকায় এক কাঠা জমির বাজারমূল্য যেখানে ৩ কোটি টাকা আর চাঁদপুরের হাইমচরে প্রতি কাঠা জমির মূল্য মাত্র ১০ হাজার টাকা। জমির মূল্য এবং এলাকাভেদে জমির নামজারি ফি নির্ধারণ হওয়া জরুরি বলে মনে করছে ভূমি মন্ত্রণালয়। বিদ্যমান নামজারি ফি একধরনের বৈষম্য বলে মনে করছেন ভূমি প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
সূত্র আরও জানায়, শতকোটি টাকা মূল্যের জমির নামজারি ফি আর হাজার টাকা মূল্যের জমির নামজারি ফি এক হওয়ার সুযোগ নেই। ইতোমধ্যে ভূমির নামজারি ফি বৃদ্ধি নিয়ে একাধিক মিটিং ও ওয়ার্কশপ করেছে ভূমি মন্ত্রণালয়। বিষয়টি চূড়ান্ত করতে আরও কয়েকটি বৈঠক করবে মন্ত্রণালয়। এরপর বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে।
এছাড়া রাজধানীর অভিজাত এলাকার জমির শতাংশপ্রতি বার্ষিক ভূমি উন্নয়ন কর এবং উপজেলা পর্যায়ের জমির বার্ষিক ভূমি উন্নয়ন করেও রয়েছে এক ধরনের বৈষম্য। ঢাকা, চট্টগ্রাম নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, সিলেট সিটি করপোরেশনের জমিকে ‘ক’ শ্রেণি হিসাবে বিবেচনা করা হয়। ‘ক’ শ্রেণির জমির বাণিজ্যিক বার্ষিক ভূমি উন্নয়ন কর শতাংশপ্রতি ৩০০ টাকা। শিল্পকাজে ব্যবহৃত জমির বার্ষিক ভূমি উন্নয়ন কর ১৫০ এবং আবাসিক জমির ভূমি বার্ষিক ভূমি উন্নয়ন কর ৬০ টাকা। অনুরূপভাবে ‘চ’ শ্রেণির জমি, যা পৌরসভার বাইরে; সেখানে বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত জমির শতাংশপ্রতি বার্ষিক ভূমি উন্নয়ন কর হচ্ছে ৪০ টাকা। শিল্পকাজে ব্যবহৃত জমির বার্ষিক কর ৩০ এবং আবাসিক কাজে ভূমির বার্ষিক কর ১০ টাকা।
প্রশ্ন হচ্ছে ঢাকা সিটি করপোরেশনের অভিজাত এলাকায় বাণিজ্যিক ভবনের বার্ষিক ভাড়া কত। ভূমি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, গুলশানে একটি দোকানের মাসিক ভাড়া কয়েক লাখ টাকা। ভবন মালিকরা বছরে আয় করেন কোটি কোটি টাকা। সেখানে বার্ষিক প্রতি শতাংশে ভূমি উন্নয়ন কর মাত্র ৩০০ টাকা। আর যেখানে দোকান ভাড়াই চলে না কিংবা একটি দোকানের ভাড়া বছরে ১০ হাজার টাকা, সেখানে বার্ষিক প্রতি শতাংশে ভূমি উন্নয়ন কর ৪০ টাকা করারোপ একধরনের বৈষম্য। সেক্ষেত্রে এলাকাভেদে ভূমি উন্নয়ন কর পুনর্বিবেচনার দাবি রাখে। বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করছে ভূমি মন্ত্রণালয়। বিশেষ করে বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত বার্ষিক ভূমি উন্নয়ন করের হার পুনর্নির্ধারণ করা জরুরি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।- যুগান্তর
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।