বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক: ইউরোপের ছয়টি দেশে ৮ হাজার ৮০০ কোটি ডলার বা ৮ হাজার কোটি ইউরো সম্প্রসারণ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে ইন্টেল। বৈশ্বিক সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের অসমতায় সৃষ্ট দীর্ঘমেয়াদি চিপস্বল্পতা কাটিয়ে উঠতে এ পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রযুক্তি জায়ান্টটির। খবর এপি ও রয়টার্স।
ইন্টেলের সিইও প্যাট জেলসিঙ্গার বলেন, পুরো সেমিকন্ডাক্টর ভ্যালু চেইনে ৮ হাজার কোটি ইউরো ব্যয় করা হবে। সম্প্রতি এক ওয়েবকাস্টে তিনি বলেন, বিশ্বে সেমিকন্ডাক্টর বা চিপের অপূরণীয় চাহিদা দেখতে পাচ্ছি। সে কারণেই এ কাজ করছি।
ইন্টেল বলছে, আয়ারল্যান্ডে নিজস্ব চিপ কারখানায় উৎপাদন চাঙ্গা, ফ্রান্সে ডিজাইন ও রিসার্চ কেন্দ্র এবং ইতালিতে প্যাকেজিং ও অ্যাসেম্বলি সাইট করা হবে। শুরুতে জার্মানিতে একটি ফ্যাব প্রকল্পে ১ হাজার ৭০০ কোটি ইউরো বিনিয়োগ পরিকল্পনা রয়েছে।
এশিয়ার ওপর নির্ভরশীলতা কমানো এবং ইউরোপকে সেমিকন্ডাক্টর খাতের কেন্দ্রে পরিণত করতে গত মাসে প্রায় ৫ হাজার কোটি ডলারের ‘চিপস অ্যাক্ট’ ঘোষণা করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। যুক্তরাষ্ট্রের নীতি অনুসরণ করে সেমিকন্ডাক্টর খাতে স্বনির্ভরতার জন্য বড় অংকের বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে ইইউ কর্তৃপক্ষ। ব্লকটিতে কারখানা স্থাপনের জন্য তাইওয়ানভিত্তিক টিএসএমসি ও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইন্টেলের মতো কোম্পানিকে আকর্ষণের চেষ্টা করছে তারা।
চলতি বছরের শুরুতে ইউরোপীয় কমিশন জানায়, বহুল প্রতীক্ষিত ইইউ চিপস অ্যাক্টের মাধ্যমে ৪ হাজার ৩০০ কোটি ইউরো বা ৪ হাজার ৯১০ কোটি ডলার বরাদ্দ করা হবে। সেমিকন্ডাক্টর খাতে ইউরোপের হিস্যা দ্বিগুণ করতে এ বিনিয়োগ হবে। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে সেমিকন্ডাক্টর খাতের ২০ শতাংশ বাজার হিস্যা নিজেদের করে নিতে চায় ইইউ। এ লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছতে আমাদের উৎপাদন চার গুণ বাড়াতে হবে। বৈশ্বিক চাহিদার কথা মাথায় রেখে আমাদের সেদিকে এগোতে হবে। বর্তমানে গুরুত্বপূর্ণ সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে ইউরোপের বাজার হিস্যা মাত্র ৮ শতাংশ। ২০০০ সালের দিকে ইউরোপের বাজার হিস্যা যেখানে ছিল ২৫ শতাংশ।
কভিড-১৯ মহামারীর অভিঘাত থেকে বিশ্ব অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে চিপের চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু সরবরাহ চেইন সংকটের কারণে চাহিদামাফিক চিপ পাচ্ছেন না গ্রাহকরা। বৈদ্যুতিক গাড়ি, স্মার্টফোন, পিসি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ইলেকট্রনিকসের গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ চিপ। বছর দুয়েক ধরে চলা করোনা মহামারীতে উপকরণ সংকট ও চিপস্বল্পতা দেখা দিয়েছে। এতে চাহিদামাফিক গাড়ি, স্মার্টফোন ও পিসি সরবরাহ কঠিন ঠেকছে। বর্তমানে সেমিকন্ডাক্টর খাতটি এশিয়ানির্ভর, বিশেষত তাইওয়ান, চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ানির্ভর। ভূরাজনৈতিকভাবে অস্থিতিশীল হওয়ার কারণে ওই দেশগুলোর ওপর নির্ভরতার ঝুঁকি নিয়ে প্রমাদ গুনছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ।
ইন্টেলের বড় অংকের বিনিয়োগের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে উরসুলা ভন ডার লিয়েন বলেন, আমি নিশ্চিত অন্যান্য সেমিকন্ডাক্টর নির্মাতা কোম্পানিও ইন্টেলের পথ অনুসরণ করবে। ইইউ চিপস অ্যাক্টের আওতায় এটাকে বড় একটি অর্জন বলে মনে করেন তিনি।
বিনিয়োগের প্রাথমিক ধাপে জার্মানির ম্যাগদিবার্গে একটি মেগা সাইট তৈরি করা হবে। সেখানে দুটি কারখানা বা ফ্যাব স্থাপনে ১ হাজার ৭০০ কোটি ইউরো বিনিয়োগ করা হবে। সেখানে সবচেয়ে উন্নত প্রযুক্তির চিপ তৈরি করবে ইন্টেল। ইউরোপীয় কমিশনের অনুমোদন পেলে আগামী বছরেই সেখানে কারখানা স্থাপনের কাজ শুরু হবে। ২০২৭ সাল নাগাদ সেখানে সেমিকন্ডাক্টর তৈরি সম্ভব হবে। এ কারখানায় তিন হাজার হাইটেক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।