বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : স্প্যামাররা এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিভিন্ন ভুয়া কনটেন্টকে গুগলের সার্চ ফলাফলের শীর্ষে নেওয়ার পাশাপাশি এর মাধ্যমে অর্থ আয়ের চেষ্টা করেছে।
এআই প্রযুক্তি যে ইন্টারনেটে বড় প্রভাব ফেলতে পারে, চ্যাটজিপিটি প্রকাশের এক বছর পেরোতেই সে ভবিষ্যদ্বাণীর বাস্তবিক রূপ দেখা গেছে। এরইমধ্যে ওয়েব জগতে ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন এআই স্প্যাম।
এর সবচেয়ে সাম্প্রতিক তিনটি উদাহরণ দেখা গেছে গত সপ্তাহেই।
এর মধ্যে প্রথমটি হল নতুন প্রযুক্তি ব্লগ সাইট ‘৪০৪ মিডিয়া’ (ফোর জিরো ফোর মিডিয়া)। এক বিবৃতিতে সাইটটি লিখেছে, এআই চালিত স্প্যামের কারণে তারা নিজস্ব ওয়েবসাইটে পরিবর্তন আনতে বাধ্য হয়েছে।
৪০৪ মিডিয়া লক্ষ্য করেছে, সম্প্রতি তাদের লেখা নিবন্ধের এআই সংস্করণ দেখা গেছে বিভিন্ন এমন স্প্যাম সাইটে, যেগুলো সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন বান্ধব। এমনকি গুগল সার্চের ফলাফলেও সেগুলো ৪০৪ মিডিয়া’র মূল নিবন্ধের ওপর দেখা গেছে। আর এআইয়ের তৈরি এইসব ওয়েব পেইজে বিজ্ঞাপন দেখিয়ে নিশ্চিতভাবেই অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে জালিয়াতরা।
সংবাদ সাইট বিজনেস ইনসাইডার বলছে, এ ধরনের এআই সংস্করণের নিবন্ধ সংবাদভিত্তিক ব্যবসায় আঘাত হানার পাশাপাশি যেসব সংবাদ সাইটের কর্মীরা কঠোর পরিশ্রম করে নিবন্ধ লিখছেন, তাদের প্রাপ্য অর্থও চুরি হয়ে যাচ্ছে।
দ্বিতীয়ত, সংবাদ সাইট ওয়্যারড নিজস্ব প্রতিবেদনে লিখেছে, ২০১০’র দশকে জনপ্রিয়তা পাওয়া ইন্ডি ব্লগ সাইট ‘হেয়ারপিন’-এর নিয়ন্ত্রণ হাতে পেয়েছে একটি এআই ব্যবস্থা, যা সাইটে নারীদের লেখা জনপ্রিয় নিবন্ধগুলোতে লেখক হিসেবে তাদের নাম পরিবর্তন করে পুরুষের নাম জুড়ে দিয়েছে।
এআই স্প্যামের সবচেয়ে ক্ষতিকারক দিক হল, কারও মৃত্যু সংবাদ নিয়ে ভুল তথ্য প্রকাশ করা, যার সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী তাদের পরিবার।
চ্যাটজিপিটি উন্মোচনের আগে ২০২১ সালে ওয়্যারডের প্রকাশিত প্রতিবেদনে উঠে এসেছিল, বিভিন্ন ‘অবিচুয়ারি’ বা সংক্ষিপ্ত জীবনীসহ মৃত্যুসংবাদ চুরির পাশাপাশি সাইটগুলোকে অনুকরণ করছে। আর এখন এআই প্রযুক্তিকে নতুন ও প্রলোভন দেখানোর কৌশল হিসেবে ব্যবহার করে তৈরি হচ্ছে ভুয়া ইউটিউব ভিডিও এমনকি জাল ওয়েবসাইটও, যেখানে সম্প্রতি মারা যাওয়া ব্যক্তিদের সম্পর্কে তথ্য খোঁজার সার্চ ট্রাফিক বাড়তে দেখা গেছে।
সম্প্রতি মার্কিন দৈনিক নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, কীভাবে এআইয়ের মাধ্যমে তৈরি ভুয়া ইউটিউব ভিডিও এক পরিবারকে পীড়া দিয়েছে। এতে দেখা যায়, এক কলেজ ছাত্র ভুলে নিউ ইয়র্কের পাতাল রেল ট্র্যাকের নীচে পড়ে মারা গিয়েছে। এমনকি দ্রুতই এ ঘটনার বিভিন্ন এআই সংস্করণের নিবন্ধ ও ইউটিউব ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে ইন্টারনেটে।
স্ক্যামাররা ইন্টারনেটে ওই যুবকের নাম ও ‘সাবওয়ে’ শব্দটির সার্চ ট্রাফিক লক্ষ্য করার পর এমন তথ্য ছড়িয়েছে। এমনকি তারা এর সঙ্গে যায় এমন শব্দগুলো যোগ করে এআইকে একটি বিশ্বাসযোগ্য মৃত্যুসংবাদের নিবন্ধ লেখার নির্দেশ দেয়, যা পরবর্তীতে একটি ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে টাইমস।
ওই নিবন্ধের বেশিরভাগ তথ্য ভুল হলেও গুগলের সার্চ অপ্টিমাইজেশনে শুরুর দিকে এসে পড়ে খবরটি।
৪০৪ মিডিয়া’র কনটেন্ট চুরি, হেয়ারপিনের নিয়ন্ত্রণ পাওয়া ও ভুয়া মৃত্যু সংবাদ চোর – তিনটি ঘটনায় তথ্যের ভিন্নতা থাকলেও একটি মিল রয়েছে। সেটা হল, স্প্যামাররা এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিভিন্ন ভুয়া কনটেন্টকে গুগলের সার্চ ফলাফলের শীর্ষে নেওয়ার পাশাপাশি এর মাধ্যমে অর্থ আয়ের চেষ্টা করেছে।
গুগলের জন্যেও এটি বড় এক সমস্যা কারণ এটি বিভিন্ন এমন ব্যবহারকারীকে ভুয়া ফলাফল দেখাচ্ছে, যারা সার্চ করার জন্য এআই প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করে থাকেন।
গুগল অবশ্য টাইমসকে বলেছে, তারা এমন ভুয়া মৃত্যুসংবাদ দেওয়া ওয়েবসাইট সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। আর এ বিষয়ে কাজ চলছে। এমনকি নীতিমালা লঙ্ঘনের অভিযোগ পাওয়ার পর বেশ কিছু ওয়েবসাইট এরইমধ্যে সরিয়েছে সার্চ ইঞ্জিন জায়ান্ট কোম্পানিটি।
এদিকে, বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও লোকজনের ভুয়া ছবি ছড়াতে দেখা গেছে। গত সপ্তাহে এক্স-এ ছড়িয়ে পড়েছিল মার্কিন পপ গায়িকা টেইলর সুইফটের এআই সংস্করণের ছবি।
ইনসাইডার বলছে, ইন্টারনেট খাতে বড় পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে এআই প্রযুক্তি। তবে সেটা ভাল না খারাপ, তা এখনও পরিষ্কার নয়। তবে, এর প্রভাব যতটা সম্ভব কমিয়ে আনার বিষয়টি নির্ভর করে যেসব কোম্পানির এমন এআই টুল বানিয়ে থাকে তাদের এবং গুগলের ওপর।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।