জুমবাংলা ডেস্ক : কোটা সংস্কার আন্দোলনে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়ায় ডিজিটাল লেনদেনে ভাটা পড়েছে। বিশেষ করে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে লেনদেন প্রায় ৭০ শতাংশ কমে গেছে। এছাড়া ইন্টারনেটভিত্তিক অন্যান্য লেনদেনও কমেছে প্রায় ৬৫ শতাংশ। তবে ১০ দিন পর রোববার বিকালে মোবাইলে ফোর জি ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়ায় নতুন করে আশা দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নগদের হেড অব পিআর জাহিদুল ইসলাম সজল বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনে ইন্টারনেট বন্ধ থাকলেও নগদের লেনদেন বিশেষ ব্যবস্থায় চালু ছিল। যেহেতু পরিস্থিতি খুব ভয়াবহ ছিল তাই তখন লেনদেন কমে ২০-৩০ শতাংশে নেমে এসেছে। এমনকি অনেকের লেনদেন বন্ধ হয়ে গেছিল, তবে নগদের তেমনটি হয়নি। রোববার মোবাইলে ফোর জি ইন্টারনেট সংযোগ দিয়েছে সরকার। আশা করছি লেনদেন এবার আগের মতোই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে।
বিকাশের যোগাযোগ বিভাগের প্রধান শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম বলেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিকল্প পদ্ধতিতে বিকাশের লেনদেন চালু ছিল। তবে ইন্টারনেট না থাকায় বড় কোনো লেনদেন হয়নি। এটা খুব স্বাভাবিক। এ লেনদেনটাই ইন্টারনেট ভিত্তিক। সুতরাং ইন্টারনেট না থাকায় যা হওয়ার তাই হয়েছে। তবে জরুরি লেনদেন চালু ছিল। এখন ইন্টারনেট চালু হয়েছে। আশা করছি, মোবাইলে লেনদেন আগের মতো স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে।
জানা গেছে, কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন শুরু হলে গত ১৬ জুন মোবাইল ইন্টারনেট এবং ১৮ জুন রাত ৮টার দিকে সব ধরনের ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেয় সরকার। এতে দেশের ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের লেনদেনে ভয়াবহ পতন ঘটে। পাশাপাশি কমেছে এটিএম বুথ লেনদেন, পিওএস, কিউআর কোড ও ই-কমার্স লেনদেনও।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ১৮ থেকে ২৩ জুলাই দেশে ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ে মোট ১ লাখ ৪ হাজার ২২৬ বার ট্রানজেকশন করেছে গ্রাহকরা। এসব ট্রানজেকশনে ৬৭৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে। আগের সপ্তাহের ৩ দিনেই অর্থাৎ ১১ থেকে ১৩ জুলাই এই লেনদেনের অঙ্ক ছিল ১ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ গড় লেনদেন ছিল ৬৪৬ কোটি ৩৩ লাখ টাকা।
ইন্টারনেট না থাকার পরও কীভাবে ইন্টারনেট লেনদেন হলো জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক যুগারকে বলেন, সাধারণত অফিস খোলার দিন ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ে লেনদেন বেশি হয়। গত ১৮ জুলাই রাতে ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এই মাধ্যমে লেনদেন সম্ভব হয়নি। ১৮-২৩ জুলাই যেই লেনদেন দেখা যাচ্ছে তা ইন্টারনেট বন্ধ হওয়ার আগের লেনদেন।
তিনি আরও বলেন, দেশের সংকটময় পরিস্থিতির কারণে সব মাধ্যমেই লেনদেন কমেছে। কিন্তু এটিএম ও পিওএসের লেনদেন স্বাভাবিক ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের এনপিএসবি ও বিইএফটিএন পরিসেবা চালু ছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, গত ১১-১৩ জুলাই সারা দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ১৩ হাজার ৪২৮টি এটিএমে মোট ৬ লাখ ১৩ হাজার ৪৫৮টি লেনদেন হয়েছিল। এতে সব মিলিয়ে ৫০৬ কোটি টাকা উত্তোলন করা হয়। অর্থাৎ দৈনিক লেনদেন ছিল ১৬৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। অথচ কমপ্লিট শাটডাউন ও কারফিউ চলা ১৮-২৩ জুলাই মোট লেনদেন হয়েছে ৩৬১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ এই পাঁচ দিনে গড় লেনদেন ৬০ কোটি ২৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ গড় লেনদেন কমেছে ৬৪ দশমিক ২৮ শতাংশ।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ১৮-২৩ জুলাই ১ লাখ ১৬ হাজার ২৩২টি পিওএস’র মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে ২৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। গড় লেনদেন দাঁড়ায় ৪ কোটি ৭১ লাখ টাকা। আর ১১-১৩ জুলাই এসব পিওএস-এ লেনদেন হয়েছে ৪২ কোটি ২৭ লাখ টাকা। এই ৩ দিনে গড় লেনদেন ছিল ১৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ সংকটকালীন গড় লেনদেন কমেছে ৬৬ দশমিক ৩৫ শতাংশ। আর ১১-১৩ জুলাই কিউআর কোর্ডের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে ৯ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। আর সংকটকালীন ১৮-২৩ জুলাই লেনদেন হয়েছে ১ কোটি ৪০ লাখ। অর্থাৎ গড় লেনদেন কমেছে ৯১ শতাংশ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।