বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : বকেয়া আদায়ে দেশের ৩৪টির মধ্যে ২৫টি ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) সেবাদাতা কোম্পানির ব্যান্ডউইডথ কমিয়ে দেওয়ার পর সেগুলো টাকা পরিশোধ শুরু করেছে। ২২১ কোটি টাকা বকেয়ার মধ্যে কিছু টাকা জমা দেওয়া হয়েছে শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির মধ্যেও।
এরপর শুক্রবার রাত থেকে ব্যান্ডউইথ স্বাভাবিক করার কাজ শুরু হয়, যা রোব ও সোমবারের মধ্যেই শেষ হবে, ফলে ইন্টারনেটের গতিও ফিরবে।
বকেয়া আদায়ে বৃহস্পতিবার রাতে ব্যান্ডউইথ কমিয়ে দিতে শুরু করে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবলস কোম্পানি লিমিটেড ( বিএসসিসিএল)। এ কারণে গ্রাহকরা ইন্টারনেটের গতি নিয়ে সমস্যায় পড়েন বলে জানাচ্ছে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডাররা (আইএসপি)।
বিএসসিসিএল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মির্জা কামাল আহম্মদ বলেন, “আইআইজিগুলো তাদের বকেয়া দিতে সম্মত হয়েছে। শুক্রবার রাত থেকেই তাদের ব্যান্ডইউডথ স্বাভাবিক করার কাজ চলছে। রবি-সোমবারের মধ্যেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।”
এতদিন বকেয়া আদায় করতে কষ্ট হচ্ছিল জানিয়ে তিনি জানান, ব্যান্ডউইথ কমিয়ে দেওয়ার পর শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির মধ্যেও সাত কোটি টাকা পেয়েছেন। ব্যাংক খুললে বাকি টাকাও পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
ইন্টারনেট ট্রাফিকের জন্য আন্তর্জাতিক গেটওয়ে হিসাবে কাজ করে আইআইজি কোম্পানিগুলো। দেশ ও বাকি বিশ্বের মধ্যে তথ্যের প্রবাহ এই গেটওয়ে দিয়েই যায়। এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যান্ডইউডথ সরবরাহ করে বিএসসিসিএল।
তাদের মাধ্যমে দেশের ৫০ শতাংশের মতো ব্যান্ডউইডথ আসছে। বাকিটা আসছে ছয়টি ইন্টারন্যাশনাল টেরিস্ট্রিয়াল কেবল (আইটিসি) সেবাদাতার মাধ্যমে। সাবমেরিন কেবলের ব্যান্ডউইডথ কমানো হলেও আইটিসিগুলোর সেবা স্বাভাবিক রয়েছে।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির কাছ থেকে লাইসেন্সধারী ৩৪টি ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে বা আইআইজি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
বাংলাদেশ আইএসপি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এমদাদুল হক বলেন, “দেশের অনেক ইন্টারনেট গ্রাহক গতির সমস্যায় পড়েছেন। তবে সমস্যাটা কোন এলাকায় বেশি তা বলা যাচ্ছে না। কারও নেট স্বাভাবিক রয়েছে।”
গত ২৬ অক্টোবর মহাখালীর খাজা টাওয়ার পুড়ে গিয়ে আটটি আইআইজি প্রতিষ্ঠানের সেবা বিঘ্ন হওয়ার পরও সারা দেশের গ্রাহকেরা ইন্টারনেট নিয়ে বিপত্তিতে পড়ে। তা স্বাভাবিক হতে সময় লাগে কয়েক দিন।
‘অনেক দেন দরবারেও টাকা দিচ্ছিল না’
বিএসসিসিএল এর এমডি মির্জা কামাল আহম্মদ শনিবার সন্ধ্যায় বলেন, “তাদের কাছে (আইআইজি) দীর্ঘদিনের বকেয়া জমে আছে। অনেক দেনদরবারের পরও তারা টাকা দিচ্ছিল না। পরে সরকারের ওপর মহলের নির্দেশে আমরা এটা (ব্যান্ডউইথ কমিয়ে দেওয়া) করেছিলাম।”
তিনি জানান, একেকজনের কাছে একেক রকম বকেয়া থাকায় সেই অনুযায়ী তাদের ব্যান্ডউইডথ কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তবে কারোরই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়নি।
মির্জা কামাল বলেন, “একটি প্রতিষ্ঠান গতকালই আংশিক বকেয়া দিয়েছে। আমাদের আশ্বস্ত করেছে যে, পুরোটাই দিয়ে দেবে। তাদেরটা আমরা ঠিক করে দিয়েছি। কারণ, সাধারণ গ্রাহক যারা, তারা তো কষ্ট পাবে।
“শুক্রবার রাত থেকেই ২০ শতাংশের বেশি রিস্টোর হয়ে গেছে। বাকিটাও দুই-একদিনের মধ্যে রিস্টোর হয়ে যাবে।”
বকেয়া রেখেছে সরকারি প্রতিষ্ঠানও
সরকারি প্রতিষ্ঠান বিটিসিএলও আইআইজি সেবাদাতা হিসেবে নিবন্ধিত। তাদের কাছে সাবমেরিক কেবল কোম্পানির শত কোটি টাকার ওপরে পাওনা।
এ বিষয়ে বিএসসিসিএল এমডি বলেন, “বিটিসিএল যেহেতু সরকারি প্রতিষ্ঠান, তাদের সরাসরি ডিসকানেক্ট করা যায় না। তারা কিছুদিন আগে ১৮ কোটি টাকা দিয়েছে। ২০ কোটি টাকা এ সপ্তাহের মধ্যে দিয়ে দেবে। তারা আরও টাকা দিয়ে দিবে বলে আশা করছি।”
‘বৃহস্পতিবার রাত কেন?’
ইন্টারনেট ও প্রযুক্তি সেবাদাতা কোম্পানি ফাইবার অ্যাট হোমের প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা সুমন আহমেদ সাবির সাপ্তাহিক ছুটি শুরুর আগের রাতে ব্যবস্থা নেওয়াকে ‘অপেশাদার আচরণ’ উল্লেখ করে এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
তিনি বলেন, “বকেয়া থাকলে তা দিয়ে দেওয়া উচিৎ। তবে ব্যবস্থা নেওয়া হল বৃহস্পতিবার রাতে। পরদিন শুক্র ও শনিবার। পেমেন্ট করার উপায় কী?”
কোম্পানিগুলোকে আগেই নোটিশ দেওয়া উচিৎ ছিল বলেও মনে করেন তিনি। বলেন, “বকেয়ার টাকা সবাই একটা সময় পরপর পেমেন্ট করে। এভাবেই চলে আসছিল। এই যে এভাবে হঠাৎ করে সেবা কমিয়ে করে দেওয়া অপেশাদার কাজ। এভাবে আসলে গ্রাহকেরা ভুগল।” সূত্র : বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।