বিনোদন ডেস্ক : সিদ্ধান্তটি বিতর্কিত কিংবা শিল্পী-কুশলীদের হাতে-পায়ে বেড়ি পরানোর মতো মনে হলেও, বাস্তবতা এখন সেদিকেই ঠেলে দিয়েছে সাংগঠনিক বিচারকদের। ফলে টিভি শিল্পের সঙ্গে জড়িত সকল সংগঠন এক টেবিলে বসে এমন সিদ্ধান্তই নিয়েছে। স্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছে, এখন থেকে টিভি সেক্টরে কোনও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলে শুরুতেই নিজ নিজ সংগঠনে জানাতে হবে। সেটি না করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস আর গণমাধ্যমে ইন্টারভিউ দেওয়া যাবে না।
সোমবার (১৪ আগস্ট) রাতে এই সিদ্ধান্ত লিখিত আকারে গণমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে অভিনয়শিল্পী সংঘের প্যাডে। সেখানে স্পষ্ট ভাষায় জানানো হয়, ‘যেহেতু সোশ্যাল মিডিয়া কিংবা অনলাইন ইন্টারভিউ ইন্ডাস্ট্রির অভ্যন্তরীণ কোনও ঘটনার সমাধান দিতে পারে না বরং যে কোনও পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করে, সেহেতু এখন থেকে আন্তঃসংগঠনের কার্যনির্বাহী কমিটির এবং সকল সংগঠনের সকল সাধারণ সদস্য যে কোনও ঘটনার প্রেক্ষিতে যার যার সংশ্লিষ্ট সংগঠনে অভিযোগ করবেন। যে কোনও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার প্রেক্ষিতে ইন্টারভিউ এবং সোশ্যাল মিডিয়াতে কোনও প্রকার পোস্ট করতে পারবেন না।’
সংগঠনের পক্ষ থেকে হুঁশিয়ারি দিয়ে আরও বলা হয়, শুটিং পরিবেশ সুষ্ঠু-সুন্দর রাখার লক্ষ্যে সকল শিল্পী ও কলাকুশলীদের বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো। এর পরেও কেউ যদি কোনও প্রকার অসদাচরণ, বিশৃঙ্খলা, কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ বিনষ্ট করেন তার বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
একই সময়ে যেমন সিদ্ধান্ত এসেছে উঠতি টিভি নায়িকা রুকাইয়া জাহান চমকের বিরুদ্ধে। গত এক সপ্তাহ ধরে যাকে ঘিরে মিডিয়ায় চলছিলো তুলকালাম অবস্থা। গত ৪ আগস্ট আদিফ হাসানের পরিচালনায় নির্মাণাধীন নাটক ‘শ্বশুর বাড়ির প্রথম দিন’র সেটে তর্কাতর্কি, পুলিশ আসা এবং শুটিং বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। জানা যায়, এদিন সেটে উত্তেজিত অবস্থায় নির্মাতা ও সহশিল্পীদের সঙ্গে আচরণ করেন অভিনেত্রী চমক। এরপর নিজের নিরাপত্তার কথা বলে পুলিশও ডেকে আনেন শুটিং ইউনিটে। এ ঘটনায় নাটকটির কাজ মাঝপথেই বন্ধ হয়ে যায়।
এরপর ফেসবুক পোস্ট ও বিভিন্ন ইন্টারভিউর মাধ্যমে জ্যেষ্ঠ অভিনেতা ফখরুল বাশার ও তরুণ অভিনেতা আরশ খানের বিরুদ্ধে আপত্তিকর অভিযোগ তোলেন চমক। এমনকি তিনি থানায় সাধারণ ডায়েরিও করেন।
রবিবার (১৩ আগস্ট) বিকালে বিষয়টি নিয়ে অভিনয়শিল্পী সংঘের বিচার সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে শিল্পী সংঘ, ডিরেক্টরস গিল্ড ও টেলিভিশন এবং ডিজিটাল প্রোগ্রাম প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টেলিপ্যাব) নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সভায় উপস্থিত ছিলেন টেলিপ্যাবের সাধারণ সম্পাদক সাজু মুনতাসির, কার্যনির্বাহী সদস্য বাবুল আহমেদ, ডিরেক্টরস গিল্ডের সভাপতি অনন্ত হীরা, সহ-সভাপতি আশরাফুল আলম, সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান সাগর, অভিনয়শিল্পী সংঘের সহ-সভাপতি আনিসুর রহমান মিলন, সাধারণ সম্পাদক রওনক হাসান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাজনীন হাসান চুমকিসহ আরও অনেকে।
টেলিপ্যাব’র সভাপতি মনোয়ার হোসেন পাঠানের সভাপতিত্বে সভার প্রথমে অভিযোগ সংক্রান্ত সবার আবেদনসমূহ পাঠ করা হয় এবং অভিযোগকারী অভিনেত্রী রুকাইয়া জাহান চমক ও নির্মাতা আদিফ হাসানের বক্তব্য শোনা হয়। ঘটনার সাক্ষী হিসেবে অভিনেতা আরশ খানের বক্তব্যও শোনেন সংগঠনের নেতারা। ঘটনার সার্বিক বিশ্লেষণ শেষে অভিনয়শিল্পী সংঘের দেওয়া রায়ে দোষী সাব্যস্ত করেন রুকাইয়া জাহান চমক। সেজন্য তাকে আর্থিক জরিমানা যেমন করা হয়েছে, তেমনি আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
সাংগঠনিক সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, ‘শুটিং সেটে উত্তেজিত অবস্থায় চমক যে আচরণ করেছেন, যার কারণে সেটে পুলিশ আসা, শুটিং বন্ধ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় এবং পরিচালক আর্থিক ক্ষতি ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। এছাড়া জ্যেষ্ঠ অভিনেতা ফখরুল বাশার মাসুম এবং নির্মাতা আদিফ হাসানসহ ইউনিটের সবার সঙ্গে যে আচরণ করেছেন, তা অভিনেত্রী চমকের ভুল ছিল এবং পরবর্তীতে অভিনেতা আরশ খানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ইন্টারভিউতে যে অভিযোগ এনেছেন, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন প্রতীয়মান হয়।’
দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় চমকের ব্যাপারে চারটি কড়া সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংগঠনটি। মূলত এই ঘটনার আলোকেই টিভি সেক্টরের সকল শিল্পী-কুশলীদের প্রতি
আরও দুটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো, কোনও আপত্তিকর ঘটনা ঘটলে প্রথমে সংশ্লিষ্ট সংগঠনে সেটি জানাতে হবে। সমাধানের আগে এ নিয়ে সোশ্যাল হ্যান্ডেল বা পত্রিকায় মন্তব্য করা যাবে না।
অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি আহসান হাবীব নাসিম বলেন, ‘পুরো ইন্ডাস্ট্রিতে অস্থিরতা চলছে। সেটি আসলে আমাদের সবার স্বার্থেই শৃঙ্খলায় আনতে হবে। নাহলে সামনে আরও বড় বড় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে। এসব ঘটনায় মানহানি তো হচ্ছেই, আর্থিক ক্ষতিও হচ্ছে। আমরা সব সংগঠন মিলেই চাই পরিবেশটাকে পারিবারিক আবহে রাখতে। এক ঘরে থাকলে ভুল বোঝাবুঝি হবেই। সেটা সমাধান করতে হবে। তার আগেই যদি আমরা একে অপরের নামে পাবলিকলি বলে বেড়াই, তাহলে তো আর সমাধানের পথ থাকে না। বরং পরিবেশনটা আরও খারাপের দিকে যায়। এসব বিবেচনা করেই সাংগঠনিক ভাবে আমরা সকল সদস্যদের এই অনুরোধটুকু রাখলাম। যেন কেউ কোনও অসুবিধা অনুভব করলে নিজ নিজ সংগঠনকে জানান।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।