আপনার হাতে ধরা স্মার্টফোনটি কি শুধুই ফোন, নাকি এক টুকরো ভবিষ্যৎ? সেই ভবিষ্যৎকে হাতের মুঠোয় ধরার স্বপ্ন দেখেছেন কখনও? ২০২১ সালে আত্মপ্রকাশ করা আইফোন 13 প্রো ম্যাক্স শুধু একটি ফোনই নয়; এটি ছিল অ্যাপলের প্রযুক্তির এক অনন্য মিলনস্থল। বিশাল ডিসপ্লে, অপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্যামেরা সিস্টেম, এবং সেই লেগেন্ডারি ব্যাটারি লাইফ নিয়ে এটি তৈরি করেছিল নতুন এক বেঞ্চমার্ক। আজও, ২০২৪ সালে, অনেকের কাছে এটি একটি আকাঙ্ক্ষিত ডিভাইস। কিন্তু বাংলাদেশ বা ভারতে এখন এই ফোনটির দাম কত? নতুন কেনার সুযোগ আছে কি? নাকি রিফার্বিশড বা গ্রে মার্কেটের উপর ভরসা করতে হবে? আসুন, ডুব দেই এই আইকনিক স্মার্টফোনটির গভীরে, জানি তার দাম, স্পেসিফিকেশন, এবং এখনও কেন এটি একটি বুদ্ধিমানের বিনিয়োগ হতে পারে।
🔷 আইফোন 13 প্রো ম্যাক্স: বাংলাদেশে দাম ও মার্কেট বিশ্লেষণ (২০২৪ আপডেট)
২০২৪ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত, আইফোন 13 প্রো ম্যাক্স বাংলাদেশে আনঅফিসিয়ালি (গ্রে মার্কেট) বিক্রি হচ্ছে, কেননা অ্যাপলের আনুষ্ঠানিক ডিস্ট্রিবিউটররা বর্তমানে শুধুমাত্র নিউজার মডেলগুলোই সরবরাহ করে থাকেন। বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের (BTRC) গাইডলাইন এবং উচ্চ আমদানি শুল্কের কারণে এর দামে উল্লেখযোগ্য তারতম্য দেখা যায়।
- গ্রে মার্কেট মূল্য (আনঅফিশিয়াল):
- 128GB: প্রায় ৳১,২৫,০০০ – ৳১,৩৫,০০০
- 256GB: প্রায় ৳১,৩৫,০০০ – ৳১,৪৫,০০০
- 512GB: প্রায় ৳১,৫০,০০০ – ৳১,৬৫,০০০
- 1TB: প্রায় ৳১,৭০,০০০ – ৳১,৮৫,০০০ (দুর্লভ)
- রিফার্বিশড/প্রি-অর্ডার্ড মার্কেট: বিশ্বস্ত অনলাইন প্ল্যাটফর্ম বা ফিজিক্যাল স্টোরগুলোতে ভালো কন্ডিশনের রিফার্বিশড ইউনিট পাওয়া যেতে পারে। এগুলোর দাম আনুমানিক ৳৯০,০০০ – ৳১,২০,০০০-এর মধ্যে (স্টোরেজ ও কন্ডিশন ভেদে) হতে পারে।
- দামের উপর প্রভাব:
- আমদানি শুল্ক ও কর: বাংলাদেশে স্মার্টফোন আমদানিতে প্রচুর শুল্ক ও ভ্যাট প্রযোজ্য, যা চূড়ান্ত খুচরা মূল্যকে ব্যাপকভাবে বাড়িয়ে দেয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR) এর কর কাঠামো এই মূল্য নির্ধারণে মুখ্য ভূমিকা রাখে।
- ডলারের দর: বৈদেশিক মুদ্রার বাজারের ওঠানামা সরাসরি গ্রে মার্কেটের দামকে প্রভাবিত করে।
- স্টকের প্রাপ্যতা: যেহেতু নতুন ইউনিট আমদানি বন্ধ, স্টক কমে যাওয়ার সাথে সাথে দাম কিছুটা স্থিতিশীল বা এমনকি বাড়তে পারে।
- প্রতিযোগিতামূলক প্রেসার: নতুন ফ্ল্যাগশিপ মডেলগুলোর (আইফোন 14/15 সিরিজ, স্যামসাং S23/S24 আল্ট্রা) দাম পড়ার সাথে সাথে 13 প্রো ম্যাক্সের গ্রে মার্কেট দামও কিছুটা নিয়ন্ত্রিত থাকে, তবে স্টকের স্বল্পতা এটিকে সীমিত রাখে।
⚠️ গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা: গ্রে মার্কেট কেনাকাটায় সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করুন। ওয়ারেন্টি অ্যাপল বাংলাদেশ কর্তৃক সমর্থিত নাও হতে পারে। ডিভাইসের সত্যতা (অথেনটিসিটি), IMEI ক্লিন স্ট্যাটাস, এবং শারীরিক অবস্থা ভালোভাবে যাচাই করে নিন। বাংলাদেশে সাইবার সুরক্ষার জন্য সরকারি নির্দেশিকা মেনে চলা এবং বিশ্বস্ত বিক্রেতার কাছ থেকে কেনা অপরিহার্য।
🔷 ভারতে আইফোন 13 প্রো ম্যাক্স দাম (২০২৪ আপডেট)
ভারতে অ্যাপল আনুষ্ঠানিকভাবে আইফোন 13 প্রো ম্যাক্সের উৎপাদন বন্ধ করেছে এবং নতুন ইউনিট বিক্রি করে না। তবে, এটি এখনও পাওয়া যায়:
- অ্যাপল অনলাইন স্টোর (ভারত): শুধুমাত্র “ক্লিয়ারেন্স” সেকশনে বা বিশেষ অফারে রিফার্বিশড ইউনিট পাওয়া যেতে পারে (অতীব বিরল)।
- অনলাইন রিটেইলার্স (Amazon India, Flipkart):
- নতুন (পুরাতন স্টক/সিলড বক্স): প্রায় ₹১,০৯,৯০০ – ₹১,৩০,০০০ (স্টোরেজ ভেদে – 128GB সাধারণত ₹১,১০,০০০ এর আশেপাশে, 1TB ₹১,৩০,০০০+), তবে স্টক খুবই সীমিত এবং দাম ফ্লাকচুয়েট করে।
- রিফার্বিশড/ওপেন বক্স: ₹৮০,০০০ – ₹১,০০,০০০ রেঞ্জে পাওয়া সম্ভব।
- অফলাইন রিটেইলার্স: বড় ইলেকট্রনিক্স চেইন বা স্থানীয় দোকানে পুরাতন স্টক বা রিফার্বিশড ইউনিট মিলতে পারে, দাম অনলাইনের কাছাকাছি।
বাংলাদেশ vs ভারত মূল্য: আনুষ্ঠানিকভাবে সরবরাহ বন্ধ থাকলেও, ভারতে রিফার্বিশড বা পুরনো স্টকে নতুন আইফোন 13 প্রো ম্যাক্সের দাম সাধারণত বাংলাদেশের গ্রে মার্কেটের চেয়ে কিছুটা কম (ডলার রেট ও শুল্ক কাঠামোর পার্থক্যের কারণে)। তবে, বাংলাদেশে গ্রে মার্কেটে নতুন সিলড বক্স ইউনিট পাওয়ার সম্ভাবনা ভারতে পুরনো স্টকের চেয়ে সামান্য বেশি হতে পারে (যদিও দাম বেশি)।
🔷 বৈশ্বিক বাজারে আইফোন 13 প্রো ম্যাক্স দাম (বর্তমান অবস্থা)
বিশ্বব্যাপী আনুষ্ঠানিক বিক্রিও বন্ধ। মূল্য পাওয়া যায় রিফার্বিশড মার্কেট বা তৃতীয় পক্ষের রিটেইলারদের মাধ্যমে:
- যুক্তরাষ্ট্র (USA): অ্যাপল সার্টিফাইড রিফার্বিশড: ~$৭৫৯ – $১,০৯৯ (স্টোরেজ ভেদে – 128GB ~$৭৫৯, 1TB ~$১,০৯৯)। Best Buy, Amazon, Back Market ইত্যাদিতে অন্যান্য রিফার্বিশড বিকল্প।
- যুক্তরাজ্য (UK): অ্যাপল সার্টিফাইড রিফার্বিশড: ~£৭৪৯ – £১,০৪৯। Amazon UK, eBay, CeX ইত্যাদি।
- সংযুক্ত আরব আমিরাত (UAE): অনানুষ্ঠানিক/রিফার্বিশড মার্কেটে ~AED ৩,০০০ – AED ৪,৫০০।
- চীন: তৃতীয় পক্ষের প্ল্যাটফর্মে (JD.com, Tmall) রিফার্বিশড ~CNY ৫,৫০০ – CNY ৮,০০০।
মূল্য প্রবণতা: আইফোন 15 সিরিজ লঞ্চের পর থেকে আইফোন 13 প্রো ম্যাক্সের দাম (নতুন বা রিফার্বিশড) উল্লেখযোগ্যভাবে নেমেছে, বিশেষ করে উন্নত বাজারে। এটি এখন “ভ্যালু ফর মানি” প্রিমিয়াম সেগমেন্টে পরিণত হয়েছে, যেখানে ব্যবহারকারীরা সর্বোচ্চ পারফরম্যান্সের বদলে কিছুটা কম দামে একটি শক্তিশালী ও প্রমাণিত ফ্ল্যাগশিপ ফোন পেতে পারেন। ফেস্টিভাল সেল (ব্ল্যাক ফ্রাইডে, প্রাইম ডে ইত্যাদি) বা ক্লিয়ারেন্স সেলে আকর্ষণীয় ডিসকাউন্ট মিলতে পারে। বিশ্ববাজারের প্রভাব বাংলাদেশ ও ভারতের গ্রে/রিফার্বিশড মার্কেটের দামকেও প্রভাবিত করে।
🔷 আইফোন 13 প্রো ম্যাক্স: ফুল স্পেসিফিকেশন ও ফিচার বিশ্লেষণ (২০২৪-এর প্রেক্ষাপটে)
২০২১-এর শীর্ষে থাকা এই বিস্টের স্পেসিফিকেশনগুলো আজও বেশিরভাগ টাস্কের জন্য অত্যন্ত শক্তিশালী:
- ডিসপ্লে (Super Retina XDR with ProMotion):
- ৬.৭ ইঞ্চি ওলেড (অর্গানিক এলইডি) প্যানেল।
- ১২৯০ x ২৭৯৬ পিক্সেল রেজুলিউশন (~৪৫৮ পিপিআই)।
- গেম-চেঞ্জার: 120Hz ProMotion অ্যাডাপটিভ রিফ্রেশ রেট। স্ক্রলিং, গেমিং, অ্যানিমেশন বাটারি-স্মুথ করে তোলে। HDR10, Dolby Vision সমর্থন। সেরামিক শিল্ড প্রোটেকশন (অ্যাপল দাবি)।
- ২০২৪-এ প্রাসঙ্গিকতা: 120Hz ডিসপ্লে এখনও অনেক প্রিমিয়াম ফোনে স্ট্যান্ডার্ড। রিজোলিউশন, রঙের যথার্থতা (True Tone) এবং ব্রাইটনেস (1200 নিটস পিক) আজকের স্ট্যান্ডার্ডের সাথে তাল মিলিয়ে চলে।
- চিপসেট ও পারফরম্যান্স (A15 Bionic):
- ৫-ন্যানোমিটার প্রসেসে তৈরি। ৬-কোর CPU (২ পারফরম্যান্স + ৪ এফিসিয়েন্সি), ৫-কোর GPU, ১৬-কোর Neural Engine।
- গেম-চেঞ্জার: 5-কোর GPU (সাধারণ 13/13 মিনিতে ৪-কোর)। Pro মডেলের জন্য একচেটিয়া।
- RAM: ৬GB (সর্বোচ্চ ব্যবহারের জন্যও পর্যাপ্ত)।
- স্টোরেজ: 128GB, 256GB, 512GB, 1TB (NVMe – অতি দ্রুত)।
- ২০২৪-এ প্রাসঙ্গিকতা: A15 Bionic আজকের মিড-রেঞ্জার A16/A17 বা স্ন্যাপড্রাগন 8 Gen 2 এর কাছাকাছি পারফরম্যান্স দেয়। দৈনন্দিন ব্যবহার, হেভি মাল্টিটাস্কিং, এইচডি গেমিং (Genshin Impact, COD Mobile), 4K ভিডিও এডিটিং – সবকিছুতেই চোখে পড়ার মতো পারফরম্যান্স। iOS অপ্টিমাইজেশনের কারণে এটি ভবিষ্যতের আপডেটেও মসৃণ চলবে।
- ব্যাটারি লাইফ ও চার্জিং:
- গেম-চেঞ্জার: আইফোনের ইতিহাসে সেরা ব্যাটারি লাইফ (সময়ের পরীক্ষায় প্রমাণিত)। ৪,৩৫২ mAh ব্যাটারি।
- অ্যাপল দাবি: ভিডিও প্লেব্যাক (ওয়্যারলেস) ২৮ ঘন্টা। বাস্তবে, মাঝারি-হেভি ব্যবহারে সহজেই ১.৫-২ দিন।
- চার্জিং: 20W+ ফাস্ট চার্জিং (অ্যাডাপ্টার আলাদা), 15W MagSafe ওয়্যারলেস চার্জিং, 7.5W Qi ওয়্যারলেস চার্জিং।
- ২০২৪-এ প্রাসঙ্গিকতা: ব্যাটারি লাইফ এখনও অনেক নতুন ফ্ল্যাগশিপকে টক্কর দেয়। ফাস্ট চার্জিং স্পিড আজকের স্ট্যান্ডার্ডের তুলনায় ধীর (অনেকে 30W+ অফার করে), MagSafe সুবিধাজনক।
- ক্যামেরা সিস্টেম (Pro-Grade Triple 12MP):
- প্রধান (ওয়াইড): 12MP, f/1.5 অ্যাপারচার, সেনসর-শিফট OIS (গেম-চেঞ্জার – ছবির স্থিরতা বাড়ায়), ডুয়াল পিক্সেল PDAF।
- আল্ট্রা ওয়াইড: 12MP, f/1.8, 120° FOV, নাইট মোড সমর্থন।
- টেলিফোটো: 12MP, f/2.8, 3x অপটিক্যাল জুম, OIS।
- ফিচার: সিনেমাটিক মোড (1080p 30fps), ফটোগ্রাফিক স্টাইলস, ডিপ ফিউজন, স্মার্ট HDR 4, নাইট মোড সব লেন্সে, প্রো র (12-bit RAW), LiDAR স্ক্যানার (লো-লাইট AF গতি ও AR-এর জন্য)।
- সেলফি: 12MP, f/2.2, SL 3D, ডিপ ফিউজন, নাইট মোড। ভিডিও: 4K@60fps, সিনেমাটিক মোড, ডলবি ভিশন HDR।
- ২০২৪-এ প্রাসঙ্গিকতা: ছবির মান (বিশেষ করে ভিডিও স্ট্যাবিলাইজেশন ও ভিডিও কোয়ালিটি) এখনও অত্যন্ত উচ্চ মানের। 48MP সেন্সর বা ১০x পেরিস্কোপ জুমের অভাব অনুভূত হতে পারে, কিন্তু দৈনন্দিন ফটোগ্রাফি, ভ্লগিং এবং সামাজিক মিডিয়ার জন্য এটি এখনও শীর্ষ সারির ক্যামেরা।
- অপারেটিং সিস্টেম ও ইউআই:
- শিপড হয় iOS 15 দিয়ে। বর্তমানে iOS 17 চালানো সম্ভব। iOS 18 আপডেটও পাবে (অ্যাপল সাধারণত ৫-৬ বছর আপডেট দেয়)।
- বিশুদ্ধ, বাগমুক্ত, দীর্ঘস্থায়ী সফটওয়্যার সমর্থন অ্যাপলের বড় সুবিধা।
- কানেক্টিভিটি:
- 5G (Sub-6GHz), Gigabit-class LTE, Wi-Fi 6 (802.11ax), Bluetooth 5.0, NFC, আলট্রা ওয়াইডব্যান্ড (U1)।
- ২০২৪-এ প্রাসঙ্গিকতা: Wi-Fi 6 এখনও স্ট্যান্ডার্ড, Wi-Fi 6E/7 এর অভাব থাকলেও বেশিরভাগ ব্যবহারকারীর জন্য এটি যথেষ্ট। Bluetooth 5.0 (vs 5.3 নতুন মডেল) পার্থক্য সাধারণত unnoticeable।
- বিল্ড কোয়ালিটি ও ডুরাবিলিটি:
- প্রিমিয়াম স্টেইনলেস স্টিল ফ্রেম, ম্যাট গ্লাস ব্যাক।
- IP68 ওয়াটার/ডাস্ট রেজিস্ট্যান্স (6 মিটার পর্যন্ত 30 মিনিট) – খুবই টেকসই।
- অন্যান্য উল্লেখযোগ্য ফিচার:
- ফেস আইডি: দ্রুত ও নির্ভরযোগ্য।
- স্টিরিও স্পিকার: উচ্চ মানের অডিও।
- ম্যাগসেফ: আনুষাঙ্গিক ইকোসিস্টেমের সুবিধা।
🔷 একই দামের অন্যান্য ডিভাইসের সঙ্গে তুলনা (বাংলাদেশ/ভারত ২০২৪ প্রেক্ষাপটে)
- স্যামসাং গ্যালাক্সি S23 আল্ট্রা (রিফার্বিশড/পুরনো স্টক): আইফোন 13 প্রো ম্যাক্সের বর্তমান গ্রে/রিফার্বিশড দামের কাছাকাছি।
- সুবিধা: নতুনত্ব (২০২৩ মডেল), শক্তিশালী স্ন্যাপড্রাগন 8 Gen 2 চিপ, উজ্জ্বল ও ফ্ল্যাট ডিসপ্লে (120Hz), 200MP প্রধান ক্যামেরা, ১০x অপটিক্যাল জুম, S Pen সমর্থন, ফাস্টার চার্জিং (45W), Android-এর কাস্টমাইজেশন।
- অসুবিধা: আইফোনের মতো লম্বা সফটওয়্যার আপডেট নিশ্চিত নয়, আইফোনের সমতুল্য ভিডিও রেকর্ডিং কোয়ালিটি নয়, কিছু ব্যবহারকারীর কাছে One UI ভারী মনে হতে পারে।
- কাকে বেছে নেবেন? যারা সর্বশেষ হার্ডওয়্যার, সর্বোচ্চ ক্যামেরা রেজুলিউশন, জুম, S Pen বা Android পছন্দ করেন তাদের জন্য S23 Ultra ভালো। যারা দীর্ঘমেয়াদি সফটওয়্যার সাপোর্ট, শীর্ষস্থানীয় ভিডিও পারফরম্যান্স, এবং iOS ইকোসিস্টেম চান তাদের জন্য আইফোন 13 প্রো ম্যাক্স এখনও টেকসই।
- আইফোন 14/আইফোন 15 বেস মডেল (নতুন/রিফার্বিশড): দাম কিছুটা বেশি হতে পারে (বিশেষ করে 15), বা কাছাকাছি (14)।
- সুবিধা: নতুন প্রসেসর (A15 Bionic in 14 / A16 Bionic in 15), ক্র্যাশ ডিটেকশন, স্যাটেলাইট এসওএস (14/15), ডায়নামিক আইল্যান্ড (15), USB-C (15), আনুষ্ঠানিক ওয়ারেন্টি/সাপোর্টের সুবিধা।
- অসুবিধা: ৬.১ ইঞ্চি ছোট ডিসপ্লে (60Hz), 2x টেলিফোটো জুম নেই, ব্যাটারি লাইফ 13 প্রো ম্যাক্সের চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে কম।
- কাকে বেছে নেবেন? যাদের সর্বশেষ ফিচার (ডায়নামিক আইল্যান্ড, USB-C) এবং আনুষ্ঠানিক সাপোর্ট দরকার, এবং ছোট স্ক্রিনে অভ্যস্ত তারা 14/15 বেস মডেল বেছে নিতে পারেন। কিন্তু যারা বড়, 120Hz ডিসপ্লে, দীর্ঘস্থায়ী ব্যাটারি এবং প্রো-লেভেল ট্রিপল ক্যামেরা (বিশেষ করে টেলিফোটো) চান, আইফোন 13 প্রো ম্যাক্স এখনও অনেক বেশি ভালো প্যাকেজেজ দেয় – এমনকি পুরনো মডেল হয়েও।
🔷 কেন এই আইফোন 13 প্রো ম্যাক্সটি কিনবেন? (২০২৪ সালে)
১. অবিশ্বাস্য ব্যাটারি লাইফ: যদি আপনাকে সারাদিন চার্জ নিয়ে চিন্তা করতে না চান, এটি এখনও সেরাদের সেরা।
২. প্রিমিয়াম পারফরম্যান্স: A15 Bionic + 120Hz ডিসপ্লে কম্বো যে কোনও টাস্ককে মসৃণভাবে সামাল দেবে। গেমিং, এডিটিং – সবই সম্ভব।
৩. শীর্ষস্থানীয় ভিডিও ও ভার্সাটাইল ক্যামেরা: ভ্লগিং, কন্টেন্ট ক্রিয়েশন বা শুধুই স্মৃতি ধরে রাখার জন্য এর ক্যামেরা সিস্টেম এখনও শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী। সিনেমাটিক মোড ও প্রো র বিশেষ সুবিধা।
৪. বৃহৎ ও চমৎকার ডিসপ্লে: মুভি দেখার, গেম খেলার বা ডকুমেন্ট এডিট করার জন্য ৬.৭ ইঞ্চির 120Hz ProMotion ডিসপ্লে অসাধারণ।
৫. দীর্ঘমেয়াদী মান ও রিসেল ভ্যালু: অ্যাপলের দীর্ঘ সফটওয়্যার সাপোর্ট (iOS 18 পর্যন্ত নিশ্চিত) এবং বিল্ড কোয়ালিটি নিশ্চিত করে এটি কয়েক বছর টিকবে এবং রিসেলের সময় ভালো দাম পাবেন।
৬. আইওএস ইকোসিস্টেম: যারা ম্যাক, আইপ্যাড, এয়ারপডস বা অ্যাপল ওয়াচ ব্যবহার করেন, তাদের জন্য নিঃসন্দেহে সেরা ইন্টিগ্রেশন।
🎯 আদর্শ ব্যবহারকারী:
- যারা ফোনের ব্যাটারি নিয়ে চিন্তা করতে চান না (ভ্রমণকারী, ব্যস্ত পেশাজীবী)।
- কন্টেন্ট ক্রিয়েটর (ভ্লগার, ফটোগ্রাফার – বিশেষ করে ভিডিও ফোকাসড)।
- যারা বড় স্ক্রিন ও মসৃণ ডিসপ্লে পছন্দ করেন (গেমার, মুভি প্রেমী)।
- যারা দীর্ঘমেয়াদে (৩-৪ বছর+) একটি শক্তিশালী ফোন ব্যবহার করতে চান।
- যারা iOS ইকোসিস্টেমে বিনিয়োগ করেছেন।
🔷 ব্যবহারকারীদের মতামত ও স্টার রেটিং (বাংলা অনুবাদ সহ)
গড় রেটিং: ⭐⭐⭐⭐✰ (৪.৫/৫)
- রিভিউ ১ (আরিফ, ঢাকা): “দেড় বছর ব্যবহার করছি। ব্যাটারি এখনও অসাধারণ, সকালে চার্জ দিলে রাত ১০টা পর্যন্ত সহজে চলে। ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলে সবাই প্রশংসা করে। স্ক্রিনটা এত বড় ও ফ্লুইড যে ছোট ফোনে ফিরে যাওয়া মুশকিল। দাম এখন কমেছে, ভ্যালু ফর মানি মনে হচ্ছে।” (⭐⭐⭐⭐⭐)
- রিভিউ ২ (প্রিয়াঙ্কা, কলকাতা): “আইফোন ১৫ প্রো ম্যাক্সের দাম দেখে ১৩ প্রো ম্যাক্স (রিফার্বিশড) কিনলাম। পারফরম্যান্সে কোন তফাৎ পাইনি বললেই চলে। ভিডিও কোয়ালিটি এখনও টপ ক্লাস। একমাত্র আক্ষেপ, ভারী একটু বেশি। কিন্তু ব্যাটারি আর স্ক্রিনের জন্য মানিয়ে নেওয়া যায়।” (⭐⭐⭐⭐)
- রিভিউ ৩ (সাকিব, চট্টগ্রাম): “গ্রে মার্কেট থেকে কেনার পর ওয়ারেন্টি নিয়ে ঝামেলা হয়েছে (চার্জিং পোর্ট ইস্যু), দোকান সাহায্য করেনি। ফোন নিজে অসাধারণ, কিন্তু বাংলাদেশে নতুন না পাওয়াটা বড় সমস্যা। রিফার্বিশড কেনা উচিত ছিল। পারফরম্যান্স আর ব্যাটারির জন্য ৫ স্টার।” (⭐⭐⭐)
সাধারণ ফিডব্যাক:
- ইতিবাচক: ব্যাটারি লাইফ, ডিসপ্লে কোয়ালিটি (120Hz), ক্যামেরা পারফরম্যান্স (বিশেষ করে ভিডিও), বিল্ড কোয়ালিটি, দীর্ঘস্থায়ী পারফরম্যান্স।
- নেতিবাচক: ওজন (~২৪০ গ্রাম), নতুন না পাওয়ার সমস্যা (বাংলাদেশ/ভারতে), আনুষ্ঠানিক সাপোর্টের অভাব (গ্রে মার্কেট), স্লো ফাস্ট চার্জিং (আজকের স্ট্যান্ডার্ডে), সীমিত জুম (3x)।
📌 সারসংক্ষেপ
আইফোন 13 প্রো ম্যাক্স আজও ২০২৪ সালে একটি অত্যন্ত শক্তিশালী ও আকর্ষণীয় পছন্দ, বিশেষ করে যারা একটি প্রমাণিত ফ্ল্যাগশিপ ফোন সাশ্রয়ী মূল্যে (আপেক্ষিক) পেতে চান তাদের জন্য। এর অপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্যাটারি লাইফ, মসৃণ 120Hz প্রোমোশন ডিসপ্লে, প্রো-লেভেল ট্রিপল ক্যামেরা সিস্টেম (যার ভিডিও কোয়ালিটি এখনও শীর্ষে), এবং A15 Bionic চিপের দীর্ঘস্থায়ী পারফরম্যান্স এটি একটি ভ্যালু প্যাকেজেজ করে তোলে। বাংলাদেশ বা ভারতে আনুষ্ঠানিকভাবে না পাওয়া গেলেও, সতর্কতার সাথে গ্রে মার্কেট বা বিশ্বস্ত রিফার্বিশড চ্যানেল থেকে সংগ্রহ করা যেতে পারে। প্রতিযোগীদের তুলনায় এর প্রধান ট্রেড-অফ হলো ওজন, আনুষ্ঠানিক সাপোর্টের অনিশ্চয়তা (বাংলাদেশে), এবং নতুন মডেলের কিছু সর্বশেষ ফিচারের অভাব (ডায়নামিক আইল্যান্ড, USB-C)। তবে, সার্বিক পারফরম্যান্স, স্ক্রিন ও ব্যাটারির সমন্বয় হিসেবে আইফোন 13 প্রো ম্যাক্স এখনও সেই ‘প্রো’ অভিজ্ঞতা দিতে সক্ষম যা অনেকের কাঙ্ক্ষিত – এবং বর্তমান দামে তা আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।
❓ আইফোন 13 প্রো ম্যাক্স সম্পর্কে প্রায়ই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQ)
- বাংলাদেশে আইফোন 13 প্রো ম্যাক্স এর দাম কত ২০২৪ সালে?
২০২৪ সালের মাঝামাঝিতে, গ্রে মার্কেটে নতুন সিলড বক্স আইফোন 13 প্রো ম্যাক্সের দাম ১২৮জিবি মডেলের জন্য প্রায় ৳১,২৫,০০০ থেকে ৳১,৩৫,০০০ টাকা। ২৫৬জিবি ৳১,৩৫,০০০ – ৳১,৪৫,০০০, ৫১২জিবি ৳১,৫০,০০০ – ৳১,৬৫,০০০ এবং ১টিবি (যদি পাওয়া যায়) ৳১,৭০,০০০ – ৳১,৮৫,০০০ টাকার মধ্যে হতে পারে। রিফার্বিশড ইউনিট ৳৯০,০০০ – ৳১,২০,০০০ টাকায় মিলতে পারে। দাম পরিবর্তনশীল।
- ভারতে এখন আইফোন 13 প্রো ম্যাক্স কিনতে পাওয়া যাবে? দাম কত?
অ্যাপল আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতে নতুন বিক্রি বন্ধ করেছে। তবে, Amazon India, Flipkart বা বড় ইলেকট্রনিক্স দোকানে পুরনো স্টক বা রিফার্বিশড ইউনিট মিলতে পারে। ১২৮জিবি মডেলের দাম সাধারণত ₹১,০৯,০০০ – ₹১,১৫,০০০ (নতুন পুরনো স্টক) এবং ₹৮০,০০০ – ₹৯৫,০০০ (রিফার্বিশড) হতে পারে। উচ্চ স্টোরেজের দাম বেশি।
- আইফোন 13 প্রো ম্যাক্সের পারফরম্যান্স এখন কেমন? নতুন ফোনের সাথে পাল্লা দিতে পারবে?
হ্যাঁ, পারবে। A15 Bionic চিপ এখনও অত্যন্ত শক্তিশালী। দৈনন্দিন ব্যবহার, হেভি মাল্টিটাস্কিং, গ্রাফিক্স-ইনটেনসিভ গেমিং (Genshin Impact, COD Mobile) এবং 4K ভিডিও এডিটিং – সবই মসৃণভাবে করে। 120Hz প্রোমোশন ডিসপ্লে পারফরম্যান্সকে আরও স্মুথ করে। এটি বর্তমান মিড-রেঞ্জার/প্রিমিয়াম ফোনের (আইফোন 14/15 বেস, স্যামসাং S23 FE ইত্যাদি) সমতুল্য বা কিছু ক্ষেত্রে ভালো পারফরম্যান্স দেয়।
- এই দামের মধ্যে (৳১.৩ লাখ / ₹১.১ লাখ) অন্য কোন ফোন আইফোন 13 প্রো ম্যাক্সের বিকল্প হতে পারে?
হ্যাঁ, বিকল্প আছে:
- স্যামসাং গ্যালাক্সি S23 আল্ট্রা (রিফার্বিশড/পুরনো স্টক): শক্তিশালী ক্যামেরা (200MP, 10x জুম), S Pen, নবীন হার্ডওয়্যার, দ্রুত চার্জিং।
- আইফোন 14 বা আইফোন 15 (বেস মডেল – নতুন/রিফার্বিশড): নতুন প্রসেসর, নতুন ফিচার (ক্র্যাশ ডিটেকশন, ডায়নামিক আইল্যান্ড – 15 তে), আনুষ্ঠানিক ওয়ারেন্টি। তবে ছোট 60Hz ডিসপ্লে ও কম ব্যাটারি।
- ওয়ানপ্লাস 11/12 বা Google Pixel 7 Pro/8 Pro (নতুন/রিফার্বিশড): ভালো পারফরম্যান্স ও ক্যামেরা, কিন্তু বিল্ড, ভিডিও কোয়ালিটি বা দীর্ঘমেয়াদি আপডেটে অ্যাপলের সমকক্ষ নয়।
পছন্দ নির্ভর করবে আপনার অগ্রাধিকারের উপর (ক্যামেরা, ডিসপ্লে, ব্যাটারি, OS, ওয়ারেন্টি)।
- আইফোন 13 প্রো ম্যাক্সের ব্যাটারি এখন কতদিন ভালো চলবে?
ফোনটি ২০২১-এর শেষের দিকে বাজারে আসে। একটি নতুন ইউনিটের ব্যাটারি স্বাস্থ্য সাধারণত ১০০% এর কাছাকাছি থাকে। ২-৩ বছর ব্যবহারের পর ব্যাটারি স্বাস্থ্য (Battery Health) ৮০-৯০% এ নেমে আসতে পারে, যা এখনও পুরো দিন চালানোর জন্য যথেষ্ট, তবে আগের মতো অতিরিক্ত হবে না। রিফার্বিশড ইউনিট কেনার সময় ব্যাটারি স্বাস্থ্য (৯০%+ ভালো) জিজ্ঞাসা করা উচিত। ব্যাটারি শেষ হয়ে গেলে অ্যাপল বা অথরাইজড সার্ভিস সেন্টারে রিপ্লেস করানো যায়। অ্যাপলের ব্যাটারি ডিউরাবিলিটি ভালো।
- বাংলাদেশে আইফোন 13 প্রো ম্যাক্স কোথায় কিনতে পারি? বিশ্বস্ত দোকানের নাম বলুন।
আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন বিক্রি হয় না। তবে, নিম্নলিখিত বিশ্বস্ত অনলাইন/অফলাইন স্টোর থেকে রিফার্বিশড বা গ্রে মার্কেট নিউ চেক করে দেখা যেতে পারে (সতর্কতা অবলম্বন করুন):
- অনলাইন: Pickaboo.com (অতীতে ভালো স্টক রাখত), ই-বাংলা (e-bangla.com – সতর্কতার সাথে), Daraz (অনুমোদিত ফ্ল্যাশ সেলারদের থেকে)।
- অফলাইন (ঢাকা): গ্যাজেট গ্যালারি (বায়েজিদ, নিউ মার্কেট), স্টার টেক ল্যাব (পান্থপথ), মোবাইলকোর্নার (গুলশান, বসুন্ধরা)।
গুরুত্বপূর্ণ: ক্রয়ের আগে ফোনের বক্স সিল, IMEI (BTRC ওয়েবসাইটে ক্লিন চেক), ফিজিক্যাল কন্ডিশন, ওয়ারেন্টি/গ্যারান্টি টার্মস ভালোভাবে যাচাই করুন। রিসিপ্ট/ইনভয়েস নিন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।