বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক: প্রতি বছরই বৈচিত্র্য নিয়ে আসছে স্মার্টফোন। নতুন ফিচার, দীর্ঘস্থায়িত্ব, ভালো ক্যামেরা, দ্রুত সংযোগ ও বিশাল মেমোরি নিয়ে হাজির হচ্ছে একেকটি স্মার্টফোন। কিছু প্রিমিয়াম স্মার্টফোনের দাম আকাশচুম্বী হয়ে উঠছে। অ্যাপল, স্যামসাংয়ের মতো কোম্পানির প্রিমিয়াম স্মার্টফোনের দাম বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সাধারণ ব্যবহারকারীর ধরাছোঁয়ার বাইরে। যেমন স্যামসাংয়ের ফোল্ডেবল ফোন গ্যালাক্সি জি ফোল্ড কিনতে ব্যক্তিগত কর বাদে ২ হাজার ডলার গুনতে হবে। অ্যাপলের আইফোনের দামও দিন দিন বাড়ছে। এমনকি তাদের সবচেয়ে সাশ্রয়ী ফোন আইফোন এসই ফাইভজির দামও বাড়িয়ে দিয়েছে অ্যাপল। গত মার্চের পণ্য উন্মোচন অনুষ্ঠানে আইফোন এসই ফাইভজির প্রাইস রেঞ্জ দাঁড়িয়েছে ৪০০-৫৭০ ডলার।
ধারণা করা হচ্ছিল অ্যাপল তার সাশ্রয়ী ফোনটির দাম ২০০ ডলারের কোটায় নিয়ে যাবে। কিন্তু অ্যাপল গ্রাহকদের স্পষ্ট বার্তা দিতে চাইছে যে প্রিমিয়াম সেগমেন্টেই নিজেদের একচ্ছত্র আধিপত্য ধরে রাখতে চায় ক্যালিফোর্নিয়ার কুপারটিনোভিত্তিক প্রযুক্তি জায়ান্টটি। প্রিমিয়াম স্মার্টফোন কেনা অনেক ব্যয়বহুল হওয়া সত্ত্বেও মর্যাদা ও সামাজিক অবস্থানের নিদর্শন হিসেবে মানুষ এ ধরনের স্মার্টফোন ক্রয় করছে। কিছু স্মার্টফোন নির্মাতা কোম্পানি সীমিত সংস্করণের স্মার্টফোন আনছে প্রিমিয়াম গ্রাহকদের লক্ষ্য করে। দামের দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল এমন ৬টি স্মার্টফোন হচ্ছে—
সনি এরিকসন ব্ল্যাক ডায়মন্ড
সাম্প্রতিক দিনগুলোয় প্রিমিয়াম স্মার্টফোন ব্র্যান্ড হিসেবে হয়তো সনি এরিকসনের নাম শোনা যায় না। কিন্তু এ সহস াব্দের প্রথম দশকে বেশ দামি একটি স্মার্টফোন এনেছিল সনি এরিকসন। এরিকসন ব্ল্যাক ডায়মন্ড নামে ওই স্মার্টফোনটিতে নিজেদের ওয়াকম্যান প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছিল। এছাড়া ক্যামেরায় সমকালে সবার চেয়ে এগিয়ে ছিল স্মার্টফোনটি। তবে সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য ছিল না স্মার্টফোনটি। ট্রেন্ডহান্টারের মতে, উন্মোচনের পর থেকে প্রতি বছর মাত্র পাঁচ ইউনিট বাজারে আসত। ওই সময়ে ফোনটি কিনতে গ্রাহকদের ব্যয় করতে হতো ৩ লাখ ডলার।
গোল্ডভিশ রেভল্যুশন
নব্বইয়ের দশকের শেষভাগ কিংবা শূন্য দশকের শুরুতে গোল্ডভিশের দ্য রেভল্যুশন ছিল বেশ ব্যয়বহুল একটি ফোন। দ্য রেভল্যুশনের পুশ বাটন কির নিচে ছিল একটি অ্যানালগ ঘড়ি। ফোনটির প্লাস্টিক বডি ১৮ ক্যারেটের পিংক ও হোয়াইট গোল্ডে সজ্জিত ছিল। এছাড়া ফোনটির সংখ্যা ও প্রতীকের ১৬টি বাটন ও নেভিগেশন টগলে ছিল ২৯ ক্যারেট ডায়মন্ড। সীমিত এডিশনের ফোনটি মাত্র নয় ইউনিট নির্মাণ করা হয়েছিল। প্রতিটির জন্য ব্যয় করতে হতো ৪ লাখ ৯০ হাজার ডলার।
গ্রেসোর লাক্সর লাস ভেগাস জ্যাকপট
প্রথম দুই ফোনের দাম যদি বিস্ময়কর হয়, তৃতীয় ফোনটির দাম চোখ কপালে তুলতে বাধ্য। গ্রেসোর লাক্সর লাস ভেগাস জ্যাকপটের দাম সাত অংক ছাড়িয়ে। এক্সক্লুসিভ ফোনটি ক্রয়ে গুনতে হয়েছে ১০ লাখ ডলার। ফোনটি মাত্র তিন ইউনিট বিক্রি হয়েছে। জ্যাকপটটির পেছনের কাঠামো তৈরি হয়েছে ২০০ বছর পুরনো আফ্রিকান ব্ল্যাকউড দিয়ে। বর্তমানে ১০ ডলার ব্যয় করে অনলাইনে এক খণ্ড ব্ল্যাকউড কেনা যায়। ফোনটির দাম আকাশচুম্বী হওয়ার পেছনে ব্ল্যাকউডের ভূমিকা সামান্য। ফোনটির কাঠামো তৈরিতে ব্যবহূত হয়েছে ১৮০ গ্রামের স্বর্ণ। এছাড়া ৪৫ দশমিক ৫ ক্যারেটের ব্ল্যাক ডায়মন্ড ্ব্যবহূত হয়েছে। কিছুটা কম দামে ফোনটি কিনতে চাইলে বিশেষ সুযোগ রেখেছিল গ্রেসো। ব্যয়বহুল ধাতু বাদ দিয়েও ফোনটির দাম ছিল ২ লাখ ডলার।
আইফোন থ্রিজি কিংস বাটন
২০০৯ সালে বাজারে আসা অ্যাপলের বিশেষ এ ফোনের জন্য গুনতে হতো ২৫ লাখ ডলার। ততদিনে স্মার্টফোনের জগতে প্রবেশ করেছিল অ্যাপল। ফোনটির শেলে ব্যবহার করা হয়েছিল ১৮ ক্যারেটের হলুদ, সাদা, রোজ গোল্ড। শেল ও স্ক্রিনের মধ্যে ব্যবহূত হয়েছিল ১৩৮টি ডায়মন্ড। আইফোন থ্রিজির হোম কিতে ব্যবহূত হয়েছিল ৬ দশমিক ৬ ক্যারেটের ক্রাউন জুয়েল। ফোনটির ডিজাইনার ছিলেন পিটার অ্যালয়জন।
আইফোন ৪ ডায়মন্ড রোজ এডিশন
স্মার্টফোনের জগতে প্রবেশ করার পর অ্যাপলের নতুন নতুন আইফোন যেন দামের রেকর্ড ভাঙা শুরু করে। এর ডিজাইনার ছিলেন স্টুয়ার্ট হিউজ। আগের ফোনটির চেয়ে এতে ডায়মন্ডের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছিল। সব মিলিয়ে প্রায় ৫০০ ডায়মন্ড ব্যবহার হয়েছে। ফোনটির পেছনের অংশে ব্যবহূত হয়েছিল রোজ গোল্ড, যে কারণে এর নাম রাখা হয়েছিল ডায়মন্ড রোজ। অ্যাপলের লোগোটি আলাদা ডায়মন্ড কোটিংয়ে সজ্জিত করা হয়েছিল। হোম বাটনটিতে আরো বড় আকারের পিংক ডায়মন্ড ব্যবহার করা হয়েছিল। ব্যবহারকারীরা ৭ দশমিক ৪ ক্যারেট কিংবা ৮ ক্যারেট ডায়মন্ড ব্যবহার করতে পারতেন। ডায়মন্ড রোজ ফোনটির বিশেষ দিক ছিল এর ৩২ জিবি ইন্টারনাল স্টোরেজ। মাত্র দুটি ডায়মন্ড রোজ ফোন তৈরি করা হয়েছিল। ফোনের দাম ছিল ৬৫ লাখ ডলার।
আইফোন ফোরএস এলিট গোল্ড
আইফোন ফোরএস এলিট গোল্ড নামে আরেকটি বিলাসবহুল ফোন নিয়ে আসেন স্টুয়ার্ট হিউস। ৬৪ জিবি ইন্টারনাল স্টোরেজের ফোনটি ছিল তখনকার সময়ে সর্বোচ্চ স্টোরেজের। ফোনটি কিনতে গুনতে হতো ৭৮ লাখ ডলার। আকাশচুম্বী দামের পেছনে কারণ ছিল এর অঙ্গসজ্জা। ফোরএস এলিট ফোনটির কেস তৈরিতে ব্যবহূত হয়েছে ২৪ ক্যারেট স্বর্ণ। স্বর্ণের অ্যাপল লোগো সজ্জিত করা হয়েছিল ৫৩ ডায়মন্ড দিয়ে। পুরো ফোনে ৫০০টিরও বেশি ডায়মন্ড ব্যবহার করা হয়েছে। ফোরএস এলিট গোল্ডের হোম কিতে ব্যবহূত হয়েছিল ৮ দশমিক ৬ ক্যারেটের ডায়মন্ড। এ ফোনও মাত্র দুই ইউনিট তৈরি হয়েছিল।
-স্ল্যাশগিয়ার অবলম্বনে
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।