স্মার্টফোন বিক্রিতে আধিপত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অ্যাপল ও স্যামসাং লড়াই করলেও বাস্তবে একে অপরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়েও রয়েছে কোম্পানি দুটির ব্যবসা।
স্মার্টফোনের জগতে একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যাপল ও স্যামসাং। প্রতি বছর নিজেদের ফ্ল্যাগশিপ মডেলে একে অপরকে টপকে যাওয়ার চেষ্টা করে কোম্পানি দুটি।
তবে মজার বিষয় হচ্ছে আইফোনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ তৈরিতে বহু বছর ধরে স্যামসাংয়ের ওপরই ভরসা করে আসছে অ্যাপল।
ডিসপ্লে
২০১৭ সালে আইফোন এক্স বাজারে আসার পর থেকেই নিজেদের ওএলইডি ডিসপ্লের জন্য মূলত ‘স্যামসাং ডিসপ্লে’-এর ওপর নির্ভরশীল আইফোন নির্মাতা কোম্পানিটি। বর্তমানে অ্যাপল এলজি ও বিওই-এর মতো অন্যান্য কোম্পানি থেকে সরবরাহ নেওয়ার চেষ্টা করলেও এক্ষেত্রে স্যামসাং শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে প্রযুক্তি বিষয়ক সাইট স্ল্যাশগিয়ার।
কারণ খুবই সহজ, অ্যাপলের বিশাল পরিমাণ উৎপাদন চাহিদা অনুসারে স্যামসাংয়ের ওএলইডি প্রযুক্তির মতো মানসম্পন্ন কিছু আর কেউ দিতে পারে না। অ্যাপলের চাহিদা অনুসারে, নিজেদের বিভিন্ন ডিসপ্লে প্যানেলে উজ্জ্বলতা ও রঙের নিখুঁত মান বজায় রাখে স্যামসাং।
নতুন ধরনের ডিসপ্লে প্রযুক্তি তৈরির ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময় সবার আগে থাকে স্যামসাং। যেমন, ‘প্রোমোশন’ প্রযুক্তির একশ ২০ হার্টজ রিফ্রেশ রেট চালাতে যে ‘এলটিপিও ওএলইডি’ ডিসপ্লের দরকার সেটিও স্যামসাং-ই আগে তৈরি করেছে।
চিপ
দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক কোম্পানিটি কেবল স্ক্রিনেই আটকে নেই, বরং আইফোনে ব্যবহৃত অত্যাধুনিক মেমোরি চিপ তৈরিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে স্যামসাং।
অ্যাপলের প্রতিটি আইফোনের মূল চালিকাশক্তি এ-সিরিজের বিভিন্ন প্রসেসর বা চিপ। সম্পূর্ণভাবে অ্যাপলের নিজস্ব ডিজাইন হলেও অনেকেই হয়ত জানেন না, এসব চিপ তৈরি প্রক্রিয়ায় স্যামসাংও দীর্ঘদিন ধরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
কিছু মডেলের আইফোনে ‘এনএএনডি ফ্ল্যাশ’ স্টোরেজ এবং ‘এলপিডিডিআর ড্রাম’ মডিউল সেমিকন্ডাক্টর সরবরাহ করছে স্যামসাং। আইফোনের এসব যন্ত্রাংশ মাইক্রন, টিএসএমসি ও অন্যান্য কোম্পানির কাছ থেকে অ্যাপল সরবরাহ করলেও বড় অংশ জুড়ে রয়েছে স্যামসাং।
এর একটি উদাহরণ হল মেমোরি চিপের ফাউন্ড্রি-স্তরের ইন্টিগ্রেশন। কিছু আইফোন মডেলে স্যামসাংয়ের তৈরি ‘এনএএনডি ফ্ল্যাশ’ স্টোরেজ বা ‘এলপিডিডিআর ড্রাম’ চিপ ব্যবহৃত হয়, যেগুলো অ্যাপলের এ-সিরিজ প্রসেসরের পাশে সরাসরি লজিক বোর্ডে সোল্ডার করা থাকে। আইফোনে মাল্টিটাস্কিং ও অ্যাপের সাড়া দেওয়ার গতি আরও উন্নত করতে সাহায্য করে এসব চিপ।
স্মার্টফোন বিক্রিতে আধিপত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অ্যাপল ও স্যামসাং একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই করছে, এবং সেটি অস্বীকারের কোনো উপায় নেই। অথচ বাস্তবে কোম্পানি দুটির ব্যবসা একে অপরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়েও রয়েছে।
প্রতিবার অ্যাপল একটি হাই-এন্ড আইফোন আনে আর অন্যদিকে পর্দার আড়াল থেকে লাভ করছে স্যামসাং। কারণ ডিসপ্লে ও চিপের অনেক অর্ডার যায় তাদের কাছেই।
এ পরিস্থিতি পরিবর্তনের লক্ষ্যে বিকল্প সরবরাহকারীদের দিকে ঝুঁকছে এবং এ জন্য বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগও করেছে অ্যাপল। তবে এখনও পর্যন্ত প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে এগিয়ে রয়েছে স্যামসাং।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।