আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিশ্ব রাজনীতির মঞ্চে বর্তমানে এক ভীষণ উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করছে ইরান। তাদের চলমান পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। ইরান দাবি করে যে তাদের এই কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরিচালিত, কিন্তু পশ্চিমা বিশ্ব এবং বিশেষত ইসরাইল ইরানকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে। কারণ ইরানের নতুন পারমাণবিক প্রকল্পের অগ্রগতি যে ধরণের প্রহরায় হচ্ছে তা প্রচলিত অস্ত্র বা প্রযুক্তি দিয়ে ধ্বংস করা প্রায় অসম্ভব এবং অবিষ্মরণীয়।
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ভবিষ্যৎ ও এর আন্তর্জাতিক প্রভাব
সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে একটি আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা, যেখানে বলা হয়েছে, ইরান তার প্রধান পারমাণবিক স্থাপনার নিকট তৈরি করছে বিশাল একটি টানেল কমপ্লেক্স, যা পাহাড়ের নিচে সুসংকুল এবং সুরক্ষিত অবস্থায় নির্মিত হচ্ছে। ‘ইনস্টিটিউট ফর সাইন্স অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি’ প্রতিষ্ঠান স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণ করে জানিয়েছে যে এই টানেলের চারপাশে উঁচু দেয়াল এবং শক্তিশালী নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করা হয়েছে যাতে বাইরের কোনো ধরনের হামলা সফল হতে না পারে।
এই ধরনের নির্মাণকাজ ইঙ্গিত দেয় যে ইরান আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে একটি শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ইরান দাবি করে তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে, কিন্তু জাতিসংঘের আইইএএ মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রসি জানিয়েছেন, নতুন এসব স্থাপনায় কোনো পারমাণবিক কার্যক্রম চলছে কি না তার সম্পর্কে নিশ্চিত কিছু জানা যায়নি। ইরান বলছে যদি সেখানে কোনো পারমাণবিক উপকরণ স্থাপন না করা হয়, তবে তাদের জন্য এ সম্পর্কে কোনো তথ্য প্রদান আইনি বাধ্যবাধকতা নয়।
কৌশলগত উন্নতির পথে ইরান ও প্রতিবেশীদের প্রতিক্রিয়া
বিশ্লেষকদের মতে, ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের পরমাণু চুক্তি বাতিল হওয়ার পর থেকে ইরান নিজেকে কৌশলগতভাবে উন্নতির পথে পরিচালিত করছে। ইরান শুধু প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রেই নয়, বৈজ্ঞানিক ও কূটনৈতিক ক্ষেত্রেও নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করতে কাজ করছে। উন্নত সেন্ট্রিফিউজ তৈরি, গবেষণায় অগ্রগতি এবং আন্তর্জাতিক স্তরে তাদের স্বরূপ পরিবর্তনের প্রচেষ্টা সব মিলিয়ে ইরান আজ এক নতুন শক্তির প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠছে।
এদিকে, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু স্পষ্টতই জানিয়েছেন, ইরান যাতে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি না করতে পারে সে জন্য যেকোনো মূল্যে তাঁদের প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। তবে বাস্তবতা হলো, ইরান এমন প্রতিরক্ষা কাঠামো তৈরি করছে, যা প্রচলিত বোমা বা ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ধ্বংস করা প্রায় অসম্ভব। যদিও ইরান বারবার বলে আসছে তাদের উদ্দেশ্য শান্তিপূর্ণ, এই গোপন টানেল প্রকল্প এবং বাড়তে থাকা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দেখে পশ্চিমা বিশ্লেষকদের আশঙ্কা—ইরান গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির দিকেই এগোচ্ছে।
ইরানের এই কর্মসূচি নিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার উদ্বেগ এখনো কাটেনি। এটা দেখতে হবে তারা এই পরিস্থিতিতে কেমন নীতি গ্রহণ করে।
FAQs Section
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির উদ্দেশ্য কি?
ইরান বারবার বলে আসছে তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ এবং এই প্রযুক্তি তারা চিকিৎসা, কৃষি ও অন্যান্য শিল্প উন্নয়নের কাজে ব্যবহার করতে চায়।
পশ্চিমা বিশ্ব কেন ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে উদ্বিগ্ন?
পশ্চিমা বিশ্ব ইরানের গোপন পারমাণবিক প্রকল্প নিয়ে উদ্বিগ্ন কারণ তারা মনে করে ইরান গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির দিকে এগোচ্ছে, যা বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে।
ইসরাইলের অবস্থান কি?
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন এবং তিনি বলেন যেকোনো মূল্যে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি থামাতে হবে।
ইরানের পারমাণবিক প্রকল্পের ভবিষ্যৎ কি?
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন ইরান তাদের কৌশলগত অবস্থান শক্তিশালী করতে আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে এবং বিদেশি চুক্তি বাতিল হওয়ার পর থেকে তারা নিজেদের বৈজ্ঞানিক ও কূটনৈতিকভাবে শক্তিশালী করছে।
এটি দক্ষিণ এশিয়ায় কোনো প্রভাব ফেলবে কি?
ইরানের পারমাণবিক প্রকল্পের অগ্রগতি বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে সতর্কতার সাথে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং তা দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক প্রবণতায়ও প্রভাব ফেলতে পারে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।