রংপুরে অ্যানথ্রাক্স (তড়কা) প্রতিরোধে সরকারের নির্ধারিত ৮০ পয়সা মূল্যের টিকা পেতে খামারিদের গুনতে হচ্ছে ৩০ থেকে ৬০ টাকা। কখনো কখনো তা নেয়া হচ্ছে ৮০ টাকা পর্যন্ত। রংপুরের কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় টিকা কার্যক্রমে মাঠপর্যায়ের
রংপুরের পীরগাছা উপজেলায় এরই মধ্যে অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত দুজনের মৃত্যু হয়েছে। পীরগাছায় আটজনের পাশাপাশি কাউনিয়ায় দুজন ও মিঠাপুকুর উপজেলাতেও একজন আক্রান্ত হয়েছে। এ রোগ ছড়িয়েছে গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামেও। গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলাতেও অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হওয়া একজনের মৃত্যুও হয়েছে। এতে রংপুর ও গাইবান্ধা জেলায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে খামারি ও সাধারণ মানুষের মাঝে।
গত সেপ্টেম্বরে পীরগাছা উপজেলায় গবাদিপশুর মধ্যে অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হওয়ায় জরুরি বৈঠকে উপজেলার সব গবাদিপশুকে দ্রুত টিকা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু এরপর থেকেই শুরু হয় অভিযোগ-সরকারি ৮০ পয়সার টিকা দিতে খামারিদের কাছ থেকে ৩০ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত নেয়া হচ্ছে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সরকারি টিকার মূল্য ৮০ পয়সা হলেও পরিবহন ও আনুষঙ্গিক খরচ হিসেবে সর্বোচ্চ ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত নেয়ার অনুমতি রয়েছে। তবে কেউ এর বেশি টাকা নিলে তা অনিয়ম হিসেবে গণ্য হবে এবং ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। যদিও মাঠের চিত্র বলছে ভিন্ন কথা।
অভিযোগকারীরা বলছেন, সরকার নির্ধারিত স্বল্পমূল্যের টিকা নিয়েও চলছে প্রকট বাণিজ্য। দুই উপজেলার কয়েক লাখ গবাদিপশুর টিকা কার্যক্রমে পশুমালিক ও খামারিদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে বলেও দাবি করছেন তারা। খামারি রহিম উদ্দিন বলেন, ‘আমরা ছোট খামারি- গরু বাঁচাতে টিকা দরকার। তাই বাধ্য হয়ে টাকা দিয়েই নিচ্ছি। কিন্তু এটা অন্যায়।’
শহীদবাগ ইউনিয়নের খামারি আব্দুল্লাহ আল আনন্দ বলেন, আমার চারটা গরু আর দুটো বকরি আছে। প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের দুজন লোক এসে টিকা দিয়ে গেলেন। প্রতি পশুর জন্য ৫০ টাকা করে নিয়েছেন।
আরেক খামারি আব্দুস সালাম জানান, সরকার বলে টিকা ফ্রি দিয়েছে, কিন্তু মাঠে গেলে টাকা চায়। না দিলে নানা অজুহাতে টিকা দেয় না। প্রথমে ৫০ টাকা না দেয়ায় টিকা দেয়নি, পরে আবার এসে ৫০ টাকা নিয়ে টিকা দিয়েছে।
এদিকে উপজেলা প্রশাসন, প্রাণিসম্পদ অধিদফতরসহ সরকারি উদ্যোগে অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধে মাঠপর্যায়ে টিকাদান কর্মসূচি গ্রহণের পাশাপাশি জনসচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন কার্যক্রম চলছে। এসব কার্যক্রমে হাটবাজারে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিতেও সহযোগিতা করছে বিভিন্ন সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা।
কাউনিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘ভ্যাকসিনের সরকারি মূল্য ৮০ পয়সা হলেও পরিবহন ও অন্যান্য খরচসহ ১০ টাকা নেয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে। আমার কাছেও অতিরিক্ত টাকা নেয়ার অভিযোগ এসেছে, সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করা হয়েছে। তবুও কেউ বেশি টাকা নিলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং দায়ীদের বাদ দেয়া হবে।’
কাউনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহিদুল হক বলেন, ‘সম্প্রতি পীরগাছা, মিঠাপুকুর ও কাউনিয়ায় অ্যানথ্রাক্স আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ায় জরুরি টিকা কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে অনিয়মের অভিযোগ সম্পর্কে আগে জানতাম না। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
রংপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আবু ছাঈদ বলেন, ‘অ্যানথ্রাক্সের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় আমরা রংপুরের পীরগাছা, কাউনিয়া, মিঠাপুকুর ও সদর উপজেলায় ব্যাপক ভাবে এই রোগের টিকা কার্যক্রম পরিচালনা করছি। তবে ভ্যাকসিনের সরকারি মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত টাকা নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। কেউ অনিয়মে জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
সুত্র ও ছবি : সময় নিউজ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।