আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সিংগাপুরে নিরাপত্তার ওপর আন্তর্জাতিক এক সম্মেলনে গত রোববার চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লি শাংফু হুঁশিয়ারি বার্তা উচ্চারণ করেন। তিনি বলেছিলেন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যুদ্ধ হলে তা পুরো বিশ্বের জন্য অসহনীয় এক বিপর্যয় ডেকে আনবে। খবর বিবিসির।
গত মার্চে দায়িত্ব নেন লি। এরপর প্রথমবারের মতো গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেন চীনা এ মন্ত্রী। তিনি এদিন আরও বলেন, বাইরের কিছু দেশ এশিয়াতে একটি অস্ত্র প্রতিযোগিতা উসকে দিচ্ছে।
চীনের এ মন্ত্রী স্পষ্টতই আমেরিকা এবং তার মিত্রদের দিকে ইঙ্গিত করেছেন। সাং-রিলা ডায়ালগ নামে পরিচিত ওই সম্মেলনের ভাষণে জেনারেল লি “শীতল যুদ্ধের মানসিকতা” লালনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে অভিযুক্ত করেন। এ নিয়ে তিনি বলেছেন, এই মানসিকতা নিরাপত্তার জন্য চরম ঝুঁকি তৈরি করেছে।
সিংগাপুরে নিরাপত্তা নিয়ে এই সম্মেলন চলার সময়েই তাইওয়ান প্রণালীতে একটি চীনা এবং একটি মার্কিন যুদ্ধজাহাজের মধ্যে বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হয়। যুক্তরাষ্ট্র অভিযোগ করে, চীনা জাহাজটি তাদের একটি জাহাজের সামনে হঠাৎ এমনভাবে হাজির হয় যা নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করে। অন্যদিকে চীন এ নিয়ে পাল্টা অভিযোগ করে। দেশটি দাবি করেছে, আমেরিকা ইচ্ছাকৃতভাবে উসকানি দেয়ার চেষ্টা করছে।
সাং-রিলা সম্মেলনে চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, এই পৃথিবী এত বড় যে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশই সেখানে জায়গা করে নিতে পারে এবং দুই পরাশক্তির উচিৎ অভিন্ন স্বার্থের পথ খোঁজা।
কিন্তু সেই সহাবস্থানের জন্য বিশ্বাসযোগ্য কোনো উদ্যোগ কি এই দুই দেশের রয়েছে? কেউই তা দেখতে পাচ্ছেন না। কারণ চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রী স্বয়ং তার ভাষণে যুদ্ধের পরিণতি সম্পর্কে বিশ্বকে সাবধান করলেও তেমন যুদ্ধ এড়ানোর জন্য তারা কী করছেন তা বলেননি।
লিই যে প্রথম কোনো সিনিয়র চীনা নেতা যার মুখ দিয়ে যুদ্ধ শব্দটি উচ্চারিত হলো তা নয়। এর আগে মার্চে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিন গ্যাং বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি তাদের বর্তমান তৎপরতায় রাশ না টানে এবং একই ভুল পথে চলতে থাকে তাহলে দুই দেশের মধ্যে সংঘাত অবশ্যম্ভাবী।
এ দিকে শুধু চীনাদের কাছ থেকে নয় আমেরিকার ভেতর থেকেও ইদানীং চীনের সাথে সরাসরি যুদ্ধের সম্ভাবনার কথা এমনকি অনেক দায়িত্বশীল ব্যক্তির মুখ থেকেও শোনা যাচ্ছে।
গত ফেব্রুয়ারিতে আমেরিকার বিমান বাহিনীর একজন চার-তারকা জেনারেল, মাইক মিনিহান, তার অধীনস্থ সেনা ইউনিটগুলোর কাছে এক চিঠিতে লেখেন ২০২৫ সালে চীনের সঙ্গে আমেরিকার যুদ্ধ হবে, এবং সেজন্য তিনি তার সৈন্যদের প্রস্তুত হতে বলেন।
জেনারেল মিনিগান মার্কিন বিমান বাহিনীর এয়ার মোবিলিটি কম্যান্ডের প্রধান। তার অধীনে ৫০ হাজার সৈন্য এবং ৫০০ যুদ্ধবিমান রয়েছে। তার এই কথা নিয়ে অনেক হৈচৈ হয়েছে, তবে অনেক বিশ্লেষক মনে করেন চীনকে নিয়ে আমেরিকাতে যেসব আলোচনা চলছে, জেনারেল মিনিহানের কথায় তারই প্রতিফলন ছিল।
লন্ডনের দৈনিক ফাইনানসিয়াল টাইমসের আন্তর্জাতিক ঘটনাপ্রবাহের প্রধান ভাষ্যকার, গিদিওন র্যাকম্যান এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরে তার এক ভাষ্যে লিখেছেন – চীনের সাথে যুদ্ধের সম্ভাবনা নিয়ে ওয়াশিংটনে যেভাবে খোলাখুলি কথাবার্তা হচ্ছে তাতে তিনি বিস্মিত হয়েছেন।
তিনি জানান, সরকারের ভেতর এবং বাইরের অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি মনে করেন চীনের সাথে যুদ্ধ খুবই সম্ভব। এদিকে ব্রিটেনে কৌশলগত ঝুঁকি সম্পর্কিত গবেষণা প্রতিষ্ঠান কন্ট্রোল রিস্কের সাম্প্রতিক এক রিপোর্টে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সম্পর্কের টানাপড়েন ব্যবসা-বিনিয়োগের সমনে এখন সবচেয়ে বড় ঝুঁকি।
রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, যদিও ২০২৩ সালে কোনো সংঘাত শুরু হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম, কিন্তু দুই দেশের রেষারেষি এখন ব্যবসা এবং প্রযুক্তি ছাপিয়ে সামরিক অঙ্গনে প্রবেশ করেছে।
কন্ট্রোল রিস্ক তাদের বিশ্লেষণে বলছে, এশিয়াতে চীনা এবং আমেরিকান যুদ্ধ জাহাজগুলো এখন খুব কাছাকাছি চলাচল করছে এবং যে কোনো সময় যে কোনো পক্ষ ভুল সিদ্ধান্ত নিতে পারে, এবং তেমন পরিস্থিতির জন্য ২০২৩ সালে কোম্পানিগুলোকে প্রস্তুত থাকতে হবে।
ঐ প্রতিষ্ঠানের মতে, দুদেশই এখন একটি সংকটে জড়িয়ে পড়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে এবং সে লক্ষ্যে তারা সামরিক পরিকল্পনা, কূটনৈতিক তৎপরতা এবং দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকে প্রস্তুত করছে। সেই লক্ষণ এ সপ্তাহে চোখে পড়েছে সিংগাপুরে সাং-রিলা সম্মেলনেও।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।