তাকী জোবায়ের : উত্তর কোরিয়ার হ্যাকাররা ২০১৬ সালে রিজার্ভ চুরির পর আন্তর্জাতিক অংশীজনদের সহযোগিতায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে দুর্ভেদ্য নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রতিটি লেনদেনে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকায় বাংলাদেশের রিজার্ভ যখন সর্বোচ্চ নিরাপত্তায় সংরক্ষিত রয়েছে, তখন ভারতীয় গণমাধ্যমে ‘ভুয়া সংবাদ’ প্রকাশিত হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে আবারও রিজার্ভ চুরির।
‘এটি একটি সম্পূর্ণ ভুয়া খবর’- বলেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক।
তিনি জুমবাংলা’কে বলেন, ‘আমরা খোঁজ নিয়ে দেখেছি, রিজার্ভ চুরির কোনো ঘটনা ঘটেনি। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের সঙ্গে আমাদের তিন স্তরের কনফারমেশন ব্যবস্থা রয়েছে এবং আমরা নিয়মিতই রিজার্ভের হিসাব মিলিয়ে থাকি। তাই রিজার্ভ হ্যাকের কোন সুযোগ নেই।’
কোন নির্ভরযোগ্য সূত্রের বরাত ছাড়াই ‘নর্থইস্ট নিউজ’ নামে ভারতীয় গণমাধ্যমটিতে প্রকাশিত সংবাদে দাবি করা হয়, সপ্তাহখানেক আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে কয়েক বিলিয়ন ডলার চুরি হয়েছে। যার জন্য ভারতীয় হ্যাকারদের সন্দেহ করা হচ্ছে। উভয় দেশের গোয়েন্দা সংস্থা এই ঘটনার গোপন তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্তত তিনজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন বলে ওই সংবাদে উল্লেখ করা হয়।
এই সংবাদের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক মঙ্গলবার গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়ে বলেছে, ভারতীয় সংবাদপত্র নতুন করে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি হওয়ার খবর প্রকাশ করেছে। সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, এটি ভুল সংবাদ। বর্তমানে রিজার্ভ ব্যাংক ফেডের সঙ্গে আমাদের তিন স্তরের কনফার্মেশন পলিসি রয়েছে। যার মাধ্যেমে নিয়মিত লেনদেন তদারক করা হয়।
ভারতীয় ওই গণমাধ্যমে ‘ভুয়া’ সংবাদটি লিখেছেন চন্দন নন্দী। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে এই একই পোর্টাল চন্দন নন্দীর নামে একাধিক বিভ্রান্তিমূলক লেখা ছেপেছিল। এগুলোর মধ্যে বিএনপির অগ্নিসন্ত্রাসকে মহিমান্বিত করে তুলে ধরার পাশাপাশি দলটির নেতা তারেক রহমানের সঙ্গে ভারতের সরকারি কর্মকর্তাদের ভুল উদ্ধৃতিও ছিল।
বিএনপির অফিসিয়াল এক্স হ্যান্ডলে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে এই মিডিয়ার বিভ্রান্তিমূলক কনটেন্ট শেয়ারও করা হয়েছে।
সিনিয়র ভারতীয় সাংবাদিক সুখরঞ্জন দাস গুপ্ত তখন সংবাদমাধ্যমের কাছে বলেছিলেন, চন্দন বিএনপি নিযুক্ত এমন একটি চক্রের অংশ যারা ভারতীয় মিডিয়া ব্যবহার করে ভারত-বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে ফাটল ধরানোর চেষ্টা করেছে।
চন্দন নন্দী আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা ইস্যুতেও একাধিকবার গুজব ছড়িয়েছে। কিন্তু সেগুলো পরে ভিত্তিহীন বলে প্রমাণিত হয়েছে।
গত বছরের ১৭ অক্টোবর ভারতীয় নর্থইস্ট নিউজে ‘আগামী ৩ নভেম্বরের মধ্যে শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে চিঠি দিয়েছে আমেরিকা’ শিরোনামে নিবন্ধ লিখে নতুন করে আলোচনায় আসেন চন্দন নন্দী।
তবে তার নিবন্ধটি প্রকাশের পরদিন ১৮ অক্টোবর এর তীব্র প্রতিবাদ জানায় ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস। ওই নিউজ সাইটের প্রতিবেদনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র অবগত উল্লেখ করে মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার জানান, বাংলাদেশের কোনও দলের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র অবস্থান নেয়নি।
যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ড. কনক সারোয়ারসহ যারা দেশের বাইরে বসে সরকারের বিরুদ্ধে গুজব ছড়াচ্ছে তাদের সঙ্গে সখ্যতা দেখা গেছে চন্দন নন্দীর।
এর আগে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে সুইফট–ব্যবস্থা কাজে লাগিয়ে ভুয়া বার্তার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভের নিউইয়র্ক শাখায় রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি করে হ্যাকাররা। চুরি হওয়া অর্থের মধ্যে শ্রীলঙ্কায় চলে যায় দুই কোটি ডলার। পরে সেই অর্থ উদ্ধারও হয়েছে।
তবে বাকি ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ফিলিপাইনের আরসিবিসি ব্যাংক হয়ে দেশটির বিভিন্ন ক্যাসিনোয় ঢুকে যায়। চুরি যাওয়া অর্থের মধ্যে এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৩ কোটি ৪৬ লাখ ডলার উদ্ধার হয়েছে। বাকি ৬ কোটি ৬৪ লাখ ডলার এখনো ফেরত পাওয়া যায়নি। ২০১৬ সালের রিজার্ভ চুরির ঘটনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে বর্তমানে মামলা চলছে।
‘Reserve heist’ report by Indian media is `absolutely fake’: BB
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।