লাইফস্টাইল ডেস্ক : ঘুম মানব জীবনের অপরিহার্য একটি প্রক্রিয়, সুস্থ্য থাকার অন্যতম উপায়। কম ঘুম স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, কিন্তু অতিরিক্ত ঘুমও কি একই রকম ক্ষতি করতে পারে?
এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গবেষকেরা দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেছেন। কী বলছে তাঁদের গবেষণার ফল?
একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির জন্য সাধারণত প্রতিদিন ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুম আদর্শ বলে বিবেচনা করা হয়। পর্যাপ্ত ঘুম শরীরকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম দেয় এবং পুনরুজ্জীবিত করে।
কিন্তু যারা নিয়মিতভাবে ৯ ঘণ্টার বেশি ঘুমান, তাদের মধ্যে কিছু শারীরিক ও মানসিক সমস্যা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের ড. লারেল ম্যাসন নেতৃত্বে এদল গবেষক দেখিয়েছেন, যারা ৯ ঘণ্টার বেশি ঘুমান, তাদের হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। গবেষকরা বলছেন, অতিরিক্ত ঘুমের ফলে রক্তচাপ বৃদ্ধি পায় এবং রক্তপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি হতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে হৃদরোগের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
অতিরিক্ত ঘুমের সঙ্গে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছেন কানাডার কুইবেক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা।
ড. জ্যাঁ-ফ্রঁসোয়া পায়েলেটের নেতৃত্বে পরিচালিত এই গবেষণা বলছে, যারা দৈনিক ৯ ঘণ্টার বেশি ঘুমান, তাদের ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমে যায় এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। ইনসুলিন প্রতিরোধের কারণে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে ওটে। পরে তা ডায়াবেটিসে রূপ নিতে পারে।
২০০৮ সালে ড. ড্যানিয়েল কিটিংয়ে নেতৃত্ত্বে যুক্তরষ্টের বেলর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা একটি বিশেষ গবেষণা চালান।
তাঁরা দেখেছেন, অতিরিক্ত ঘুম বিষণ্নতা বা ডিপ্রেশনের ঝুঁকি বাড়ায়। গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে যারা বেশি সময় ধরে ঘুমিয়েছিলেন, তাদের মানসিক স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা বেশি দেখা গিয়েছে।আরও দেখা গিয়েছে, দীর্ঘ সময় ঘুমানোর ফলে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা ধীর হয়ে যায় এবং এটি বিষণ্নতার কারণ হতে পারে।
ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. রেবেকা ম্যাথার ঘুমের সঙ্গে ওজন বৃদ্ধি সম্পর্ক খুঁজে বের করতে একটা গবেষণা চালান। তিনি দেখেন, যারা অতিরিক্ত ঘুমান তাদের মধ্যে ওজন বৃদ্ধির প্রবণতা বেশি।
অতিরিক্ত ঘুম শরীরের মেটাবলিজমের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। ফলে ক্যালোরি বার্ন কম হয়। এতে শরীরে চর্বি জমা হয় এবং ওজন বৃদ্ধি পায়।
ড. কার্লোস রামিরেজের নেতৃত্বের স্পেনের মাদ্রিদ বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক দেখিয়েছেন, যারা অতিরিক্ত ঘুমান, তাদের স্মৃতিশক্তির সমস্যা দেখা দিতে পারে। অতিরিক্ত ঘুম মস্তিষ্কের নিউরোনগুলো নিষ্ক্রিয় করে দিতে পারে। এ ধরনের ব্যক্তিদের চিন্তাভাবনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা কমে যায়।
প্রশ্ন হলো, কিছু মানুষের অতিরিক্ত ঘুমের প্রবণতা কেন থাকে?
অনেক সময় কিছু শারীরিক বা মানসিক অবস্থা অতিরিক্ত ঘুমের কারণ হতে পারে। যেমন অপ্রতিরোধী বিষণ্ণতা। যারা দীর্ঘ সময় ধরে বিষণ্ণতায় ভোগেন, তারা প্রায়ই অতিরিক্ত ঘুমের শিকার হন।
ঘুমের ব্যাঘাতজনিত রোগ যেমন, নার্কোলেপসি বা ঘুমানোর সময়ের অসামঞ্জস্যেরে কারণে অতিরিক্ত ঘুমের অভ্যাস তৈরি হয় মানুষের। আবার কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে ঘুম বেড়ে যেতে পারে।
শেষ কথা হলো, অতিরিক্ত ঘুম স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। সুস্থ থাকতে হলে পর্যাপ্ত কিন্তু সঠিক মাত্রার ঘুমের দিকে নজর রাখা জরুরি। অতিরিক্ত ঘুম এড়িয়ে প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানোর অভ্যাস গড়ে তুলুন। এতে শরীর যেমন সতেজ থাকবে, তেমনি মানসিক সুস্থতাও বজায় থাকবে।
সূত্র: ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ, যুক্তরাষ্ট্র
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।