জুমবাংলা ডেস্ক : সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা উপলক্ষে অন্যান্য বছরের মতো এবারও প্রতিবেশী ভারতে ইলিশ রফতানি করছে সরকার। ‘টোকেন’ হিসেবে এবছর মাত্র ৪ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ মাছ রফতানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিন্তু দেশের বাজারে ইলিশের উচ্চমূল্য নিয়ে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে এ সিদ্ধান্তের সমালোচনাও করেছেন। অনেকেই আবার প্রশ্ন তুলেছেন, এত পরিমাণ ইলিশ আহরণের পরও চড়া দাম। ভারতের যাচ্ছে খুবই অল্প পরিমাণ ইলিশ। বাংলাদেশ থেকে আর কোনও দেশে কি ইলিশ রফতানি হচ্ছে?
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের আরও ১০টি দেশে আহরণ হয় ইলিশ। এরমধ্যে ভারত, মিয়ানমার, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে সামান্য পরিমাণে ইলিশ পাওয়া যায়। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের (বিএফআরআই) তথ্যমতে, বিশ্বের মোট উৎপাদিত ইলিশের প্রায় ৭৫ ভাগই বাংলাদেশে আহরণ হয়। আর বাংলাদেশের জাতীয় এই মাছের অনন্য স্বাদ ও গন্ধ বিশ্বের অন্যান্য অনেক দেশের ইলিশের তুলনায় ব্যাপক জনপ্রিয়। দেশের প্রায় ৭ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষভাবে ইলিশ ধরার সঙ্গে জড়িত। এছাড়াও প্রায় ২৫ লাখ মানুষ ইলিশের জাল এবং অন্যান্য সরঞ্জাম তৈরি, বরফ তৈরি, পরিবহন, বিপণন, বিক্রয় এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে পরোক্ষভাবে জড়িত।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯৯-২০ অর্থবছরে ইলিশের আহরণের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ১৯ হাজার টন। যেটি ২০২১-২২ অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৬৭ হাজার টনে। বিএফআরআই-র মতে, বর্তমানে ইলিশের সর্বোচ্চ টেকসই ফলন ৭ লাখ ২ হাজার টন। তবে বাংলাদেশ হিমায়িত খাদ্য রফতানিকারক সমিতি (বিএফএফইএ) সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ বছরে প্রায় ৬ লাখ টন ইলিশ আহরণ হয়। সেখান থেকে ৪ থেকে ৫ হাজার টন ইলিশ রফতানি হলে বাজারে তেমন কোনও প্রভাব পড়ে না। বরং ৩৫০ থেকে ৪০০ কোটি টাকার সমান বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়।
এ প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানিয়েছেন, বছরে আমাদের ইলিশ আহরণের পরিমাণ ৬ লাখ টনেরও বেশি। সিজনে প্রতিদিন গড়ে ২ হাজার টন ইলিশ ধরা পড়ে। এই হিসাবে রফতানির পরিমাণ তিন দিনে আহরিত ইলিশের চেয়েও কম। কাজেই বাজারে এর কোনও ধরনের প্রভাব পড়বে না।
জানা গেছে, বাংলাদেশে মোহনা থেকে সমুদ্রের ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ কিলোমিটার উজানে ও উপকূল থেকে ২৫০ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত ইলিশ পাওয়া যায়। দিনে ৭০ থেকে ৭৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেওয়া ইলিশ সাগর থেকে যতই নদীর মিষ্টি পানির দিকে আসে, ততই এর শরীর থেকে লবণ খসে যায় এবং এর স্বাদ বাড়ে। বর্তমানে দেশের সমুদ্র, মোহনা ও উপকূলসহ ৩৮টি জেলার ১০০টি নদী-নালায় ইলিশ পাওয়া যায়।
দেশের ছয়টি উপকূলীয় জেলা ইলিশের অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিত। এগুলো হচ্ছে- চাঁদপুর জেলার ষাটনল থেকে লক্ষ্মীপুর জেলার চর আলেকজান্ডার পর্যন্ত মেঘনা নদীর ১০০ কিলোমিটার; ভোলা জেলার মদনপুর চর ইলিশা থেকে চর পিয়াল পর্যন্ত সাহাবাজপুর শাখা নদী ৯০ কিলোমিটার; ভোলা জেলার ভেদুরিয়া থেকে পটুয়াখালী জেলার চর রুস্তম পর্যন্ত তেতুলিয়া নদীর প্রায় ১০০ কিলোমিটার; পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার আন্ধারমানিক নদীর পুরো ৪০ কিলোমিটার; শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া ও ভেদরগঞ্জ উপজেলা এবং চাঁদপুর জেলার মতলব উপজেলার মধ্যে ২০ কিলোমিটার এবং বরিশাল জেলার হিজলা, মেহেন্দিগঞ্জ ও বরিশাল সদর উপজেলার কলাবাদর ও গজারিয়া মেঘনা নদীর প্রায় ৮২ কিলোমিটার।
পুষ্টিবিদদের মতে, প্রতি ১০০ গ্রাম ইলিশে ১০২০ কিলো জুল (শক্তির একক) শক্তি থাকে। তাতে ১৮ থেকে ২২ গ্রাম চর্বি, ২২ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি, ১৪ দশমিক ৪ গ্রাম প্রোটিন, ২ দশমিক ৪ মিলিগ্রাম আয়রন, সামগ্রিক ফ্যাটি অ্যাসিডের ১০ দশমিক ৮৩ শতাংশ ওমেগা-৩ থাকে। ওয়ার্ল্ড ফিশের হিসাবে, ওমেগা-৩ পুষ্টিগুণের দিক থেকে স্যামন মাছের পরই ইলিশের অবস্থান।
পুষ্টিগুণের পাশাপাশি অনন্য স্বাদ ও গন্ধের জন্য বিশ্বব্যাপী ইলিশের জনপ্রিয়তা রয়েছে। প্রায়শই প্রবাসীদের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সুপার শপগুলোতে ইলিশ পাওয়ার কথা জানা যায়। অনলাইনে খোঁজ করেও বেশ কয়েকটি শপের ওয়েবসাইটে ইলিশ বিক্রির বিজ্ঞাপন দেখা গেছে। ইলিশগুলোর বেশিরভাগেরই বর্ণনায় ‘বাংলাদেশের চাঁদপুরের’ বলে উল্লেখ করা। তবে তার নিচেই ‘মিয়ানমার থেকে আমদানি করা’ লেখা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।