লাইফস্টাইল ডেস্ক : বর্ষাকাল এলেই অনেক বাড়িতে শাক খাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। তবে এটা করা কি আদৌ যুক্তযুক্ত কাজ? এই প্রসঙ্গেই নিজের মতামত জানালেন বিশিষ্ট পুষ্টিবিদ।
বর্ষা আসার পরপরই কিন্তু কিছু বিষয় নিয়ে সতর্ক হয়ে যেতে হয়। বিশেষত, খাবারদাবার নিয়ে সচেতন থাকাটা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়ে। নইলে যে নানা ধরনের রোগ-বিরেতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়বে বৈকি।
কিন্তু দু’পশলা বৃষ্টি হল কি হল না অনেক পরিবারেই শাক রান্না বন্ধ হয়ে যায়। তাঁদের কথায়, এই সময় শাক খেলে নাকি একাধিক রোগ-ব্যাধি ঘাড়ে চাপার আশঙ্কা ছাকে।
সত্যিই কি বর্ষাকালে শাক খাওয়া একদম বন্ধ করে দেওয়া উচিত? এই সময়ে শাক খেলে কি অসুখের কোপে পড়ার ঝুঁকি থাকে? এই সকল জরুরি প্রশ্নের উত্তর জানতে আমরা যোগাযোগ করেছিলাম শহর কলকাতার বিশিষ্ট পুষ্টিবিদ কোয়েল পাল চৌধুরির সঙ্গে। তিনিই আমাদেরকে গোটা বিষয়টি সম্পর্কে খোলসা করে জানালেন।
১. পুষ্টির ভাণ্ডার শাক: শস্য শ্যামলা বাংলায় শাকের কোনও অভাব নেই। আর বাংলার জলবায়ুতে লালিত-পালিত হওয়া প্রতিটি শাকই কিন্তু পুষ্টিগুণে ভরপুর। প্রায় প্রতিটি শাকেই রয়েছে ভিটামিন, খনিজ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইবারের ভাণ্ডার। তাই সুগার, প্রেশার, কোলেস্টেরল সহ দেহের একাধিক রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে এই সকল শাকের জুড়ি মেলা ভার। এমনকী পেটের স্বাস্থ্যের উন্নতিতেও গুরুত্বপূর্ণ পালন করে শাকপাতা। তাই সারা বছরই শাকের পদ ডায়েটে রাখা উচিত।
২. বর্ষায় বিপদের ভ্রুকুটি: কোয়েল পাল চৌধুরির কথায়, বর্ষায় শাক খাওয়া কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ এই সময়ে শাকে কিছু মাইক্রোঅর্গানিজম বা সোজা ভাষায় জীবাণুর ভিড় বাড়ে। তাই এই সময় শাক খাওয়ার ফলে দেহে সংক্রামক অসুখ সিঁধ কাটতে পারে। বিশেষ করে, ডায়ারিয়া, বমি, বমি বমি ভাব সহ একাধিক জটিলতা পিছু নেওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। তাই বর্ষাকালে শাক খাওয়ার উপর কিছুটা লাগাম পড়ানো দরকার। নইলে বিপদের ফাঁদে জড়াতে সময় লাগবে না।
৩. একবারেই কি বন্ধ? বর্ষা বলেই যে একবারে শাক খাওয়া বন্ধ করে দিতে হবে, এমন নয়। বরং বাজার থেকে শাক কিনে এনে প্রথমে তা ভালো করে ধুয়ে নিন। তারপর এক পাত্র জলে শাকগুলিকে ভিজিয়ে রাখুন কিছুক্ষণ। এরপর সেই জলে কিছুটা পরিমাণে নুন ও ভিনিগার মিশিয়ে গরম করুন। জল গরম হয়ে গেলে শাকগুলিকে তুলে নিয়ে, জল ফেলে দিন। এই কৌশলেই শাক কিন্তু পরিষ্কার হয়ে যাবে। বিশেষ করে শাকে উপস্থিত সমস্ত প্রকারের জীবাণুও নষ্ট হয়ে যাবে। তাই এরপর আর শাক খাওয়ায় কোনও বাঁধা থাকে না।
৪. কম তেলে রান্না করুন: অতিরিক্ত তেল, মশলা দিয়ে শাক রান্না করলে কিন্তু লাভ হবে না। তাই অল্প তেলে ভাঁপিয়ে ভাঁপিয়ে শাক রান্না করুন। আর এই খাবারে অতিরিক্ত চিনি বা মিষ্টি মেশাবেন না। এতে আখেরে আপনারই ক্ষতি। অতিরিক্তি চিনি বা মিষ্টি খেলে সুগার, প্রেশার বাড়তে পারে। এদিকে শাকের শরীরে মজুত নানা উপকারী উপাদানের গুণও কমবে। তাই শাক রান্নার সময় এই দিকটা খেয়াল রাখুন।
৫. কোন শাক খাবেন, কোনটা নয়? গবেষণায় দেখা গিয়েছে, বর্ষাকালে পালংশাক, লেটুসশাকে জীবাণুর প্রভাব থাকে বেশি। অপরদিকে পুঁইশাক খেলে মিটবে পুষ্টির ঘাটতি। তাই এই সময়টায় বেশি পরিমাণে পুঁইশাক খাওয়ার চেষ্টা করুন। এতেই সুস্থ থাকবে শরীর।
তবে আবারও বলব, এই সময় শাক খাওয়া একদম ছেড়ে দেওয়ার ভুল করবেন না। শাক খাওয়া একদম বন্ধ করে দিলে দেহে পুষ্টিকর উপাদানের ঘাটতি হবে। আর তা থেকে একাধিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই বর্ষার দিনে একটু সতর্ক হয়েই শাক খাওয়া চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিলেন কোয়েল পাল চৌধুরি।-এই সময়
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।