লাইফস্টাইল ডেস্ক : সংবাদ সংস্থা ‘ভাইস’ এর মনোবিজ্ঞানীর কাছে প্রশ্নটি করেছেন এক পাঠক। তিনি জানান, গত ছয় বছর ধরে তিনি তাঁর পছন্দের মানুষের সঙ্গে সংসার করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ই তাঁদের প্রথম পরিচয়। মাত্র এক মাস চুটিয়ে প্রেম করার পরই তাঁরা বিয়ে করে দাম্পত্য জীবন শুরু করেছিলেন।
নামের আদ্যক্ষর ‘এম’ পরিচয়ে ওই ব্যক্তি আরও জানান, মহামারির আগে তাঁর দাম্পত্য সঙ্গী ব্যবসার কারণে প্রায়ই বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করতেন। এমনও হয়েছে পুরো সপ্তাহ একজন অন্যজনকে না দেখেই কাটিয়ে দিয়েছেন।
তবে মহামারির সময় থেকেই বর্তমানে তাঁদের একসঙ্গে প্রচুর সময় কাটে। তাঁরা এটাই চাইতেন। একসঙ্গে তাঁরা নানা ধরনের খেলা-ধুলা, গল্প-গুজব করেন, টেলিভিশনের বিভিন্ন চ্যানেলে শো দেখেন, খুনসুটি করেন, রোমাঞ্চও হয় প্রচুর।
দেখা গেছে, সুন্দর কোনো দিনে বিছানায় তাঁরা একে অপরকে জড়িয়ে ধরেছেন, উত্তেজিত হয়ে চুমু খেয়েছেন, কিন্তু তারপরই দুজন দুদিকে ফিরে ঘুমিয়ে যাচ্ছেন!
দাম্পত্য জীবন নিয়ে জিজ্ঞাসু ওই ব্যক্তি দাবি করেন, বর্তমানে তাঁদের মধ্যে শারীরিক মিলনের হার এমন পর্যায়ে এসেছে যে, তা দুই মাসে একবার হয় কি-না সন্দেহ। অথচ দাম্পত্যের শুরুর দিকে ব্যাপারটি ছিল পুরোপুরি বিপরীত।
ব্যক্তিটি দাবি করেছেন, সঙ্গীর প্রতি যৌন আবেগ কমে গেলেও তিনি তাঁদের দাম্পত্যকে খুব উপভোগ করেন এবং স্ত্রীর প্রতি যথেষ্ট টান অনুভব করেন। একই আবেগ তিনি স্ত্রীর মধ্যেও দেখেন। ‘তবু দাম্পত্যে শারীরিক মিলন এমন বিরল হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটি কি ঠিক?’ —জানতে চান তিনি।
এই প্রশ্নের উত্তরে ভাইস-এর নিয়মিত লেখক ডিজেনলিসা প্রিঞ্জলস প্রথমেই একটি পরিসংখ্যানের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি জানান, সমগ্র পৃথিবীজুড়েই যৌন মিলনের হার বছর বছর কমে যাচ্ছে। লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের এক গবেষণায় দেখা গেছে, বিবাহিত দম্পতিরা এক দশক আগের তুলনায় এখন কম সেক্স করছেন। আরও দেখা গেছে, দাম্পত্য জীবন শুরু করার প্রথম ছয় মাস কেটে যাওয়ার পর নর-নারীর শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের হার কমে গেছে।
শারীরিক মিলন কমে যাওয়ার এই বিষয়টিকে অনেক মিডিয়া নেতিবাচক হিসেবে উপস্থাপন করে। কিন্তু যৌনতাবিদ ইউরি ওলরিচস মনে করেন, দম্পতিদের কতটুকু যৌনতা করা উচিত সে বিষয়ে বাঁধাধরা কোনো নিয়ম নেই। কারণ এটি প্রতিটি সম্পর্ক ভেদে আলাদা হতে পারে। তিনি বলেন, ‘এমন কিছু দম্পতি আছে যারা সপ্তাহে তিনবার শারীরিক মিলন করেন কিন্তু তারা এটি উপভোগ করেন না। অথচ এমনও দম্পতি আছেন যারা এটি মাসে মাত্র একবার করেই জীবনের সেরা সময় পার করছেন।’
প্রশ্নকারী ব্যক্তির উদ্দেশে ডিজেনলিসা প্রিঞ্জলস লিখেছেন, ‘যৌনতার পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে সম্পর্কের গুণমান নির্ধারণ করতে পারবেন না। আপনারা দুজন একসঙ্গে খুব ভালো সময় কাটাচ্ছেন বলে মনে হচ্ছে।’
ইউরি ওলরিচসের মতে, সম্পর্কের বন্ধন শুধু যৌনতার ওপর নির্ভর করে না। আরও অনেক বিষয় আছে যেগুলো দাম্পত্যকে কঠিন বন্ধনে আবদ্ধ করে রাখে।
প্রশ্নকারীর উদ্দেশে প্রিঞ্জলস আরও লিখেছেন, ‘লক্ষ্য করেছি, কম যৌন মিলনে আপনি ঠিক আছেন।’
তবে তিনি এটাও উল্লেখ করেন যে, ঠিক থাকার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো-দাম্পত্য সঙ্গীও কম শারীরিক মিলনে ঠিক বোধ করছেন কি-না। আর এটি খুঁজে বের করার একমাত্র উপায় হলো-সঙ্গীকে জিজ্ঞাসা করা। যদিও বছরের পর বছর দুজন একসঙ্গে থেকেও এই প্রশ্নটি অনেকেই তাঁর সঙ্গীকে করতে পারেন না। এ ধরনের অপারগতাকে ভিত্তিহীন দাবি করে ওলরিচস বলেন, ‘আপনি যতটুকু যৌন মিলন করছেন, তাতে আপনার সঙ্গীও ঠিক আছে জানতে পারলে—তা বড় স্বস্তির কারণ হতে পারে।’
প্রিঞ্জলস লিখেছেন, ‘আপনি অতীতের তুলনায় বর্তমানে যৌন সম্পর্কে কম আগ্রহী, এর মানে এই নয় যে, আপনি কিছু ভুল করছেন। সোফায় বসে কাটিয়ে দেওয়া আপনাদের সন্ধ্যাগুলোও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কিছু দম্পতি ক্রমাগত ও তৃপ্ত যৌন সম্পর্ক স্থাপনের পরও সুখী হতে পারে না।’
বিষয়টিকে মোকাবিলা করার পরামর্শও দেন প্রিঞ্জলস। তিনি লিখেছেন, যৌনতাকে যদি ক্লান্তিকর মনে হয়, তবে চুম্বনের সময় একে অপরকে আলতোভাবে স্পর্শ করুন। যৌনতা বিভিন্ন উপায়ে অনুভব করা যেতে পারে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।