বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : মঙ্গল গ্রহে অভিযানের পরিকল্পনা যত দ্রুততর হচ্ছে, ততই উঠে আসছে একের পর এক জটিল প্রশ্ন। মহাকাশে কি প্রজনন এবং নিরাপদে শিশুর জন্ম দেয়া সম্ভব? কারণ, মঙ্গলে যাত্রা করে ফিরে আসতে সময় লাগবে প্রায় ৯ মাস—যা পুরো একটি গর্ভাবস্থার সমান। ফলে গর্ভধারণ থেকে শুরু করে প্রসব পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়াটি মহাশূন্যেই সম্পন্ন হতে পারে।
‘সায়েন্স অ্যালার্ট’-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, মাইক্রোগ্র্যাভিটির (অতি নিম্ন মাধ্যাকর্ষণ) কারণে মহাকাশে গর্ভধারণ শারীরিকভাবে কঠিন হলেও একবার ভ্রূণ গর্ভে প্রতিস্থাপিত হলে গর্ভাবস্থার অগ্রগতি সম্ভব। কিন্তু প্রসব এবং নবজাতকের যত্ন নেওয়ার বিষয়টি জটিল হতে পারে।
বিজ্ঞানী অরুণ ভি হোলডেন বলছেন, মাধ্যাকর্ষণ ছাড়া দেহজ তরল ভেসে বেড়ায়, ফলে মহাকাশে প্রসব বেশ জটিল একটি প্রক্রিয়া হয়ে উঠতে পারে। শিশুর দেখভাল করাও হবে বেশ কঠিন কাজ। কারণ, পৃথিবীর মাটিতে শিশুকে কোলে নেয়া বা দুধ খাওয়ানোর মতো সহজ কাজগুলোও মহাকাশে রীতিমতো দুরূহ হয়ে উঠবে! তবে আশার কথা হচ্ছে, মায়ের গর্ভেই ভ্রূণ এমনিওটিক ফ্লুইডে ভেসে বেড়ায়—যা এক ধরনের ভারহীন পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। এটি অনেকটা মহাকাশে নভোচারীদের ওজনহীনতার মতোই! আবার, মহাকাশে প্রসবের ক্ষেত্রে মাধ্যাকর্ষণই একমাত্র সমস্যা নয়। বায়ুমণ্ডল আমাদের পৃথিবীর চারদিকে একটি প্রতিরক্ষামূলক বলয় তৈরি করে রাখে, যাতে ক্ষতিকর মহাজাগতিক রশ্মির প্রকোপ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এ সব রশ্মি মানবদেহের সংস্পর্শে এলে কোষের গুরুতর ক্ষতি হতে পারে। বাড়তে পারে ক্যানসারের ঝুঁকিও। ফলে ক্ষতিকর মহাজাগতিক রশ্মির সংস্পর্শে এলে মা এবং ভ্রূণ—উভয়ের উপরেই স্থায়ী প্রভাব পড়তে পারে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও ভেঙে পড়তে পারে।
মহাশূন্যে জন্মানো শিশু গড়াবে না, বসবে না, হাঁটতে শিখবে না স্বাভাবিক নিয়মে। কারণ, ওজনহীন পরিবেশে শিশুদের ‘পোস্টারাল রিফ্লেক্স’ বা ভারসাম্য রক্ষা শেখার প্রাকৃতিক সুযোগ থাকে না। ফলে তার মোটর স্কিল, যেমন—মাথা উঁচু করা, হামাগুড়ি দেয়া বা হাঁটার ক্ষমতা বিকাশে বিলম্ব বা জটিলতা দেখা দিতে পারে। শিশুর মস্তিষ্ক জন্মের পরও গঠিত ও পরিপক্ব হতে থাকে। কিন্তু মহাজাগতিক রশ্মির দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবে তার মনোবিকাশ, স্মৃতি, আচরণ এবং স্বাস্থ্য চিরতরে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সবকিছু মিলিয়ে বিজ্ঞানীরা বলছেন, মহাশূন্যে শিশুর জন্ম একেবারে অসম্ভব নয়, তবে বর্তমান প্রযুক্তি ও জ্ঞানের সীমাবদ্ধতায় তা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও জটিল। সূত্র: সায়েন্স এলার্ট
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।