জুমবাংলা ডেস্ক : কুষ্টিয়ার বৃষ্টি খাতুন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এবং তার চাকরি ক্ষেত্রে অভিশ্রুতি শাস্ত্রী নামে পরিচিত ছিলেন। তবে তার জন্ম নিবন্ধন সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র এবং চাকরির জন্মবৃত্তান্তে নামের ক্ষেত্রে কোনোটিতে বৃষ্টি খাতুন আবার কোনোটিতে অভিশ্রুতি শাস্ত্রী দেওয়া আছে। এসব নথিতে বাবার নামের জায়গায় শাবলুল আলম এবং মায়ের নাম বিউটি বেগম লেখা। তবে চাকরির জন্মবৃত্তান্তে মায়ের নাম অপর্ণা শাস্ত্রী লেখা।
আবার অনেকে জানাচ্ছেন, মৃত্যুর আগে বৃষ্টি নিজেকে শাবলুল আলম ও বিউটি বেগমের পালিত সন্তান বলে জানিয়েছেন। এসব নিয়ে ধোঁয়াশা থাকায় সাংবাদিক অভিশ্রুতি শাস্ত্রীর লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। তার ডিএনএ পরীক্ষা ছাড়া লাশ হস্তান্তর করা হবে না।
এ বিষয়ে শনিবার বৃষ্টির মা বিউটি বেগম বলেন, বৃষ্টিকে আমি গর্ভে ধারণ করেছি। বৃষ্টি, ঝর্ণা ও বর্ষা তিনজনই আমার সন্তান।
বৃষ্টি বনগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত এবং ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে এসএসসি পর্যন্ত বনগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেন। কুষ্টিয়া সরকারি মহিলা কলেজ থেকে এইসএসসি পাশ করে। পরে ইডেন মহিলা কলেজে ভর্তি হন। জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্ম নিবন্ধন, প্রবেশপত্র সব বের করে সামনে দিলে দেখা যায়, প্রতিটিতে বৃষ্টি খাতুন, পিতা সবুজ শেখ ও মাতা বিউটি বেগম লেখা আছে। বৃষ্টি খাতুনের ৭ম শ্রেণিতে পড়াকালে তার নিজহাতে ডায়েরিতে লেখা জীবনবৃত্তান্তে উল্লেখ রয়েছে সেটি বের করে দেখান তার মা।
তার মা জানান, মোবাইলে বৃষ্টির সঙ্গে তার শেষ কথা হয় ২৯ ফেব্রুয়ারি বেলা ১১টার দিকে। বৃষ্টি জানায় মিটিং শেষ করেছে এবং তার আরও কিছু কাজ বাকি আছে, বাসায় ফিরে কথা বলবেন। এর পর তার ফোন আর আসেনি। পরের দিন তার ননদের ছেলে রেজোয়ান মোবাইল ফোনে বৃষ্টির খোঁজ নিতে বলে এবং তিনি খোঁজ নিয়ে বৃষ্টির মৃত্যুর খবর পান।
বৃষ্টির খালাতো বোন জানান, বৃষ্টিকে ফোন দিলে জানায় আপু আমি ব্যস্ত আছি। চার মাস আগে বৃষ্টির সঙ্গে তার শেষ কথা হয়। নাম পরিবর্তন করে ফেসবুক চালানো বা ধর্ম পরিবর্তনের বিষয়ে কিছু জানেন না। তবে চার মাস আগে বৃষ্টি বাড়িতে আসলে নামাজ পড়াসহ সব কিছু স্বাভাবিক ছিল।
বৃষ্টির বান্ধবী শারমিন আক্তার জানান, তিনি বৃষ্টির সঙ্গে ১০ বছর পড়ালেখা করেছেন। ইতিপূর্বে নামাজ-রোজা উভয়ই একসঙ্গে করেছেন। বৃষ্টির ধর্ম পরিবর্তনের কোনো কিছু তিনি জানেন না।
বেতবাড়িয়া ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড সদস্য আব্দুল মজিদ জানান, বৃষ্টি এই গ্রামেরই মেয়ে এবং মুসলিম পরিবারেই তার জন্ম। সে হিন্দু হয়েছে বা নাম পরিবর্তন করেছে এ ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না। তবে তিনি ধারণা করছেন, পেশাগত কাজের ক্ষেত্রে বৃষ্টি নাম পরিবর্তন করতে পারে।
খোকসা থানার ওসি আন-নূর যায়েদ জানান, ডিএনএ পরীক্ষার পর বৃষ্টির মরদেহ তার পরিবারের কাছে দেওয়া হবে এমন সংবাদ পেয়েছেন। তিনি সরেজমিন গিয়ে বৃষ্টির বাড়িতে খোঁজখবর নিয়েছেন। এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
জানা যায়, ফেসবুক প্রোফাইল ও সাংবাদিকতায় অভিশ্রুতি শাস্ত্রী নামধারী অনলাইন পোর্টাল দ্য রিপোর্ট ডট লাইভের সাবেক সাংবাদিক ঢাকা বেইলি রোডে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যুর পর লাশ হস্তান্তরের প্রক্রিয়ায় পরিচয়সংক্রান্ত জটিলতা দেখা দেয়। তার বাবা সবুজ শেখ মেয়ের মরদেহ গ্রহণ করতে গেলে ঢাকার রমনা কালীমন্দিরের সভাপতি উৎপল সাহা অভিশ্রুতি শাস্ত্রীকে হিন্দু দাবি করেন এবং মরদেহ তার মুসলিম বাবার কাছে প্রদানে বাধা সৃষ্টি করেন।
ঢাকার রমনা কালীমন্দিরের সভাপতি জানান, অভিশ্রুতি শাস্ত্রী ৮ থেকে ৯ মাস ধরে মন্দিরে যাতায়াত করতেন, পূজা করতেন। সে সূত্রেই তার সঙ্গে পরিচয়। অভিশ্রুতি শাস্ত্রী জানিয়েছিলেন, তার মা-বাবা বেনারসে থাকতেন। তারা মারা যাওয়ায় দাদুর হাত ধরে ঘটনাচক্রে তিনি কুষ্টিয়ায় এসেছিলেন ছোটবেলায়। অভিশ্রুতির দাদু মারা গেলে একটি পরিবার তাকে দত্তক নিয়েছিল। তবে এ পরিবার মুসলিম না হিন্দু ছিল, তা তিনি বলেননি। তাই অধিকতর তদন্ত করে অভিশ্রুতি শাস্ত্রীর আসল পরিচয় সামনে আনা জরুরি।
ঢাকার রমনা কালীমন্দিরের সভাপতির পক্ষ থেকে রমনা থানার ওসি এবং জেলা প্রশাসক বরাবর অভিশ্রুতি শাস্ত্রীর পরিচয় নিয়ে যে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে— এমন কথা জানিয়ে তা সমাধানে ডিএনএ পরীক্ষার আবেদন করা হয়। ডিএনএ পরীক্ষার পর মরদেহ প্রদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানা যায়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।