জুমবাংলা ডেস্ক : তারা দুজনই জন্ম থেকে কথা বলতে ও শুনতে পারেন না। কিন্তু বুকের ভেতর যে হৃদয় আছে তা তো বলতে ও শুনতে পায়। তাই তো তারা একে অন্যের প্রেমে পড়েন। প্রেম করেন ইশারা ভাষায়। প্রায় চার বছর প্রেমের পর সম্প্রতি বিয়ে করে দাম্পত্য জীবন শুরু করেছেন রাজশাহী নগরীর মৃদুল ইসলাম ও বরগুনার আমতলীর তানজিলা আক্তার।
এই যুগলের প্রেমকাহিনী শোনার জন্য মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) বিকেলে তাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মৃদুল ও তানজিলা সুখে শান্তিতে সংসার করছেন। শ্রবণ ও বাকপ্রতিবন্ধী হওয়া সত্বেও তাদের সংসার জীবনে কোন সমস্যাই হচ্ছে না।
কিভাবে দুজন সম্পূর্ণ অচেনা শ্রবণ ও বাকপ্রতিবন্ধী মানুষের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচয়, প্রেম এবং সেই প্রেমের সর্ম্পক টিকিয়ে রাখা কতটা দুরূহ ছিল তা ইশারা ভাষা বুঝতে পারা তানজিলার দুলাভাই রিপন আলীর মাধ্যমে প্রতিবেদককে বলছিলেন এই দম্পতি। তাদের দাবি, স্বাভাবিক অন্য মানুষের চেয়ে তাদের বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া ছিল অনেক কঠিন।
বাংলা লিখতে পারা মৃদুল ইশারা ভাষায় বলেন, বছর চারেক আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মোবাইল নম্বরসহ ছবি পোস্ট করেছিলেন। ছবির সঙ্গে থাকা নম্বর নিয়ে হোয়টসআ্যাপে নক দেন তানজিলা। আলাপের একর্পযায়ে দুজনেই যে একই ধরনের প্রতিবন্ধী বিষয়টি সামনে আসে। সবকিছু জেনে বুঝে মৃদুল হোয়াটসআ্যপে প্রেমের প্রস্তাব দেন। একে অপরে মন লেনাদেনার পর দুজনে ভিডিও কলে ইশারা ভাষায় করতেন যোগাযোগ ও ভাব-ভালোবাসার বিনিময়।
মৃদুল ইশারা ভাষায় জানান, সম্প্রতি তানজিলার পরিবার তাকে অন্যত্র বিয়ে দেবেন মনস্থির করেন। তারা পাত্র দেখছিলেন। সেটা জানতে পেরে মৃদুল পরিবারের কাউকে কিছু না বলে রাজশাহী থেকে বরগুনায় যান। তানজিলার বাসায় পৌঁছাতে যোগাযোগ করেন তার দুলাভাই রিপন আলীর সঙ্গে। রিপন মৃদুলকে বাসায় নিয়ে গেলেও একা দেখে বিয়েতে অমত করেন তানজিলার পরিবার। মৃদুল তানজিলাকে না পেলে আত্মহত্যা করবেন বলে হুমকি দেন। মৃদুলের পীড়াপীড়িতে একর্পযায়ে দুই পরিবারের সম্মতিতে হয় বিয়ে।
রিপন বলেন, শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধীদের কথা অন্যেরা বোঝে না। তারা নিজেরাও ভোগেন কথা বোঝাতে না পারার কষ্টে। প্রিয় মানুষটিকে পেতে একজন স্বাভাবিক মানুষের বরগুনা যাওয়া কোন ব্যাপার না। কিন্তু যিনি কথা বলতে পারেন না, শুনতে পারেন না, তার জন্য একা একা চলে যাওয়াটা খুবই চ্যালেঞ্জিং। আবার সবাইকে ম্যানেজ করে বিয়ের কাজ শেষ করাও ঝক্কির ব্যাপার। সবমিলিয়ে প্রকৃত ভালোবাসা থাকলেই এমনটি সম্ভব হয়।
বিয়ের পর স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে রাজশাহীতে ফিরেছে মৃদুল। প্রিয় মানুষটির কথা শুনতে না পারলেও, বা ভালোবাসার মানুষটিকে ডাকতে না পারলেও, সে খুশি প্রিয় মানুষটিকে স্ত্রী হিসেবে পেয়ে। খুশি পরিবারের সদস্যরাও।
মৃদুলের মা জানান, সামনে ঘটা করে মৃদুল-তানজিলার বিয়ের অনুষ্ঠান করবেন তারা। ফল ব্যবসায়ী মৃদুল পঞ্চম শ্রেণি আর তানজিলা এএসসি পাশ করেছেন। মৃদুল ও তানজিলার দুজনেরই বোন রয়েছে। তারাও বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী।
সূত্র : সময় নিউজ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।