লাইফস্টাইল ডেস্ক : নফস একটি সুফিবাদী পরিভাষা। মৃত্যুর ফলে নফসের মুক্তি ঘটে, নফস দেহ থেকে বের হয়ে যায়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘কুল্লু নাফসিন জাইকাতুল মাউত।’ অর্থাৎ ‘প্রত্যেক নফস মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করবে।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৮৫)
নফস আরবি শব্দ, হিব্রু নেফেস-এর সমুচ্চারিত। নফস অর্থ প্রাণ, আত্মা। অর্থাৎ ওই অলৌকিক শক্তি, যার মাধ্যমে মানুষের দেহে প্রাণের সঞ্চার হয়। পবিত্র কোরআনে সত্তা, মন, অহংবোধ, প্রাণবায়ু, নিঃশ্বাস অর্থেও নফস শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে।
শব্দটি কখনো কখনো ব্যক্তির একক দায় হিসেবেও বোঝায়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর সে দিনের ভয় করো, যখন কেউ কারো সামান্য উপকারে আসবে না এবং তার পক্ষে কোনো সুপারিশও কবুল হবে না; কারো কাছ থেকে ক্ষতিপূরণও নেওয়া হবে না এবং তারা কোনো রকম সাহায্যও পাবে না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ৪৮)
শব্দটির মাধ্যমে ব্যক্তির স্বাধীন ইচ্ছা ও সমষ্টিগত তাৎপর্যও বোঝায়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মানুষ, তোমরা তোমাদের রবকে ভয় করো, যিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন এক নফস থেকে।
আর তা থেকে সৃষ্টি করেছেন তার স্ত্রীকে এবং তাদের থেকে ছড়িয়ে দিয়েছেন বহু পুরুষ ও নারী। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো…নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের ওপর পর্যবেক্ষক’ (সুরা নিসা, আয়াত : ০১)
জৈবিক ও কুপ্রবৃত্তিগত বিবেচনায় নফসের কয়েকটি প্রকারভেদ হলো :
নফসে আম্মারাহ : এপ্রকারের নফস (প্রতারক আত্মা) মানুষকে জৈবিক কামনায় আকৃষ্ট করে। মহান আল্লাহ বলেন ‘…নিশ্চয়ই নফস তো খারাপ কাজ করতে প্ররোচিত করে, তবে যদি কারোর প্রতি আমার রবের অনুগ্রহ হয় সে ছাড়া…।’ (সুরা ইউসুফ, আয়াত : ৫৩)
নফসে লাওয়ামাহ : অনুশোচনাকারী আত্মা। যে নফস অন্যায় করার পর মানুষের হৃদয়ে অনুশোচনার উদ্রেক ঘটায়। এ প্রকারের নফস গুনাহে লিপ্ত হয়, আবার লজ্জিতও হয়। অর্থাৎ সে গুনাহ ছাড়তেও চায় আবার জ্ঞাত-অজ্ঞাত কারণে গুনাহে লিপ্ত হয়ে পরক্ষণেই আত্মগ্লানিতে অস্থির হয়ে ওঠে। এমন অবস্থা প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন, ‘শপথ করি নফসে লাওয়ামাহর (ওই অন্তঃকরণ, যে নিজেকে ধিক্কার দেয়)।’ (সুরা কিয়ামাহ, আয়াত : ০২)
নফসে মুতামায়িন্নাহ : এমন আত্মা, যা সব মহৎ ভাবনায় পরিতৃপ্ত ও নিষ্কলুষ। এমন প্রশান্ত আত্মা উচ্চমর্যাদার আত্মা যা ভয়হীন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে নফসে মুত্বমাইন্নাহ (প্রশান্ত অন্তর), তুমি তোমার পালনকর্তার নিকট ফিরে যাও সন্তুষ্ট ও সন্তোষভাজন হয়ে। অতঃপর আমার অনুগত বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও এবং আমার জান্নাতে প্রবেশ করো।’ (সুরা ফজর, আয়াত : ২৭-৩০)
নফসে মুলহিমাহ : যে পরিশুদ্ধ নফস সব সময় মহান আল্লাহ প্রদত্ত ইলম বা জ্ঞান, তথা ইলহামের দ্বারা পরিচালিত হয়; এমন নফস নিজ ইচ্ছায় কোনো কর্মই করে না; বরং মহান আল্লাহর প্রত্যক্ষ নির্দেশনার মাধ্যমে তার সব কাজকর্ম নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত। এমন অন্তঃকরণের অবস্থান অনাচার-অপকর্মের ঊর্ধ্বে। মানবীয় ইচ্ছা সেখানে অকার্যকর। পবিত্র কোরআনের ঘোষণা ‘শপথ নফসের এবং যিনি তা সুবিন্যস্ত করেছেন—তাঁর, অতঃপর তাকে তার অসৎকর্ম ও সৎকর্মের ইলহাম (প্রজ্ঞা) দান করেছেন।’ (সুরা শামস, আয়াত : ৭-৮)
নফসে রাহমানিয়া : এ পর্যায়ে একজন সাধক পূর্ণ মুক্তি অর্জনের মাধ্যমে পরম আত্মার স্বভাব ধারণ করে বাকাবিল্লাহ বা বেলায়েতের সর্বোচ্চ মাকামে পৌঁছায়। এমন গুণের অধিকারী হওয়ার আহবান জানিয়ে মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে রাসুল বলুন, (আমাদের ধর্ম) আল্লাহর রঙে রঞ্জিত এবং আল্লাহর রং অপেক্ষা আর কার রং উত্তম হবে? এবং আমরা তাঁরই ইবাদতকারী।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৩৮)
বস্তুত নফস, কলব, রুহ, আকল (ওয়াহি, ইলম) সমন্বিত মানুষের প্রত্যয়, প্রত্যাশা, প্রার্থনার অবলম্বন হলো নিষ্পাপ অন্তঃকরণ। প্রিয়নবী (সা.) বলেন, ‘জেনে রাখো, শরীরের মধ্যে একটি মাংসপিণ্ড আছে, যা ঠিক থাকলে পুরো দেহ ঠিক। যদি তা কলুষিত হয়, তবে পুরো দেহই কলুষিত। মনে রেখো! তা-ই কলব বা অন্তর।’
মো. আলী এরশাদ হোসেন আজাদ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।