ধর্ম ডেস্ক : ইসলাম নারী জাতিকে মর্যাদার আসনে সমাসীন করেছে। একজন নারী আমার মা অথবা বোন অথবা স্ত্রী অথবা কন্যা। নারী জাতিকে সম্মান করা, শ্রদ্ধা করা, স্নেহ করা এতেই পুরুষের আসল সৌন্দর্য। নারীদের ইভ টিজিং করা, উত্ত্যক্ত করা ইসলামে সম্পূর্ণরূপে হারাম। নারীদের সম্মানহানি করাকে ইসলাম পাপাচারের স্বীকৃতি দিয়েছে।
দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, পবিত্র রমজান মাসেও পুরুষ নামধারী কিছু হায়েনা নারীদের ধর্ষণ করছে। যা আমাদের বিবেককে দংশন করছে। রমজান সংযমের মাস। পাপাচার থেকে দূরে থাকা ও আত্মশুদ্ধির মাস।
একজন মুমিন হিসেবে ধর্ষণ প্রতিরোধে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। নারীরা হিজাব পরবেন। পুরুষেরা চোখের মনের হিফাজত করবেন। মূলত ধর্ষণকারীরা পরিবার, সমাজ জাতির শত্রু। ধর্ষকদের কোনো ছাড় নেই। এরা কারও আত্মীয় নয়, এরা অপরাধী। এদের শাস্তি অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে, এতে কোনো দয়ামায়া দেখানো যাবে না। এটাই ইসলামি শরিয়তের বিধান।
ধর্ষণ নিঃসন্দেহে একটি ভয়াবহ অপরাধ। কবিরা গুনাহ। ইসলামের দৃষ্টিতে মন্দ, ঘৃণিত কাজ। এটি নারীর শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক নিরাপত্তাকে বিপণ্ন করে এবং সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করে। প্রতিবছর হাজার হাজার নারী শিশু ধর্ষণের শিকার হন, যা দেশের মানবাধিকার, নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। এর প্রতিকার করা একান্ত প্রয়োজন।
আল কোরআনের দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী, যে কোনো প্রকারের যৌন ক্রিয়াকলাপ যা বৈধ বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়া ব্যতীত সম্পাদিত হয় সেগুলো জিনা বা ব্যভিচার বলে গণ্য হয় এবং এ অপরাধে পুরুষ ও মহিলা উভয়ই সমানভাবে শাস্তিযোগ্য হবে। আর তোমরা জেনা-ব্যভিচারের কাছেও যেও না, তা হচ্ছে অশ্লীল কাজ আর অতি জঘন্য পথ। (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৩২)। ব্যভিচারিণী ও ব্যভিচারী উভয়ের প্রত্যেককে ১০০ বেত্রাঘাত কর।
আর আল্লাহর দীনের ব্যাপারে তাদের প্রতি কোনো মমত্ববোধ ও করুণা যেন তোমাদের মধ্যে না জাগে যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ইমান আনো। আর তাদের শাস্তি দেওয়ার সময় মুমিনদের একটি দল যেন উপস্থিত থাকে। (সুরা আন-নূর, আয়াত : ২)।
হজরত আবু হুরায়রা, জায়েদ ইবনে খালিদ (রা.) থেকে বর্ণিত। উনারা বলেন, আমরা রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে উপস্থিত ছিলাম।
নবীজির কাছে এক ব্যক্তি এসে বলল, আমি আপনাকে আল্লাহর শপথ করে বলছি যে, আমাদের মধ্যে কিতাবুল্লাহর বিধান অনুযায়ী মীমাংসা করে দিন। তার তুলনায় অধিক বিচক্ষণ তার প্রতিপক্ষ বলল, হ্যাঁ আমাদের মাঝে আল্লাহর কিতাব অনুসারে ফায়সালা করে দিন এবং আমাকে বক্তব্য পেশের অনুমতি দিন। নবীজি বলেন, বল। লোকটি বলল, আমার পুত্র এ ব্যক্তির শ্রমিক ছিল, সে তার স্ত্রীর সঙ্গে জেনা করেছে।
আমি তার পক্ষ থেকে ১০০ বকরি এবং একটি গোলাম পরিশোধ করেছি। অতঃপর আমি কতক বিজ্ঞ লোককে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে আমাকে বলা হয়, আমার পুত্রকে ১০০ বেত্রাঘাত করতে হবে এবং এক বছরের নির্বাসন দিতে হবে। আর এ ব্যক্তির স্ত্রীকে রজম (প্রস্তরাঘাতে হত্যা) করতে হবে।
রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সেই সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! আমি অবশ্যই তোমাদের দুজনের মধ্যে আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী ফয়সালা করব। তুমি তোমার ১০০ বকরি ও গোলাম ফেরত নাও এবং তোমার পুত্রকে এক বছরের নির্বাসনসহ ১০০ বেত্রাঘাত করা হবে। আর হে উনাইস!
তুমি আগামীকাল সকালে তার স্ত্রীর কাছে যাবে। সে যদি স্বীকারোক্তি করে তবে তাকে রজম (পাথর মেরে হত্যা) করবে। অধস্তন রাবি হিশাম বলেন, উনাইস (রা.) পরদিন সকালে তার কাছে গেল এবং সে স্বীকারোক্তি করলে তিনি তাকে রজম করেন। (বুখারি হাদিস নং-২৩১৫, মুসলিম হাদিস নং-১৬৭৯, ইবনে মাজাহ, হাদিস নং-২৫৪৯)।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উমর (রা.) বললেন, আমি আশঙ্কা করছি যে, দীর্ঘকাল অতিবাহিত হওয়ার পর কেউ বলে বসবে, আমি আল্লাহর কিতাবে রজমের কথা পাচ্ছি না। ফলে সে আল্লাহর বিধানগুলোর একটি বিধান ত্যাগ করার কারণে পথভ্রষ্ট হবে। সাবধান! রজম (প্রস্তরাঘাতে হত্যা) করা বাধ্যতামূলক। অপরাধী বিবাহিত হলে, সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া গেলে অথবা গর্ভসঞ্চার হলে অথবা স্বীকারোক্তি করলে।
৭ কলেজকে একীভূত করতে ‘সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’র সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান তিতুমীর শিক্ষার্থীদের
অতঃপর আমি রজমের এ আয়াত পাঠ করি : ‘‘বৃদ্ধ ও বৃদ্ধা জেনায় লিপ্ত হলে তোমরা তাদের উভয়কে রজম কর। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রজম করেছেন এবং তাঁর পরে আমরাও রজম করেছি। (বুখারি-৬৮২৯, মুসলিম-১৬৯১, তিরমিজি-১৪৩১)
ইসলামে বলাৎকার ও সমকামিতাকেও হারাম ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশের আইনে ধর্ষণকারীর শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। আমরা ইসলামি শিক্ষা নিজেদের জীবনে বাস্তবায়ন করে সব পাপাচার থেকে দূরে থাকব। ধর্ষণমুক্ত বাংলাদেশ হোক এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
লেখক : মুফতি মোহাম্মদ এহছানুল হক মুজাদ্দেদী
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।