ধর্ম ডেস্ক : দাওয়াতি আদর্শ ও দাওয়াতি কার্যক্রম সব মহলে প্রতিক্রিয়াশীল হয়। বাতিল প্রতিরোধ ও ইসলাম প্রচার-প্রসারে দাওয়াতি কার্যক্রম খুবই গতিশীল ও কার্যকরী ভূমিকা রাখে। তাই সাধারণ মুসলমান এবং আলেমগণ নায়েবে রসুল হিসেবে দাওয়াত ও তাবলিগের জন্য অধিক মনোনিবেশ করা জরুরি।
মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রসুল ছিলেন, তিনি একজন দাঈ ছিলেন, বিশ্ব মুসলিমের জন্য আদর্শ শিক্ষক ও আত্মশুদ্ধির মূর্ত প্রতীক ছিলেন, পরিবারের কর্তা, আদর্শ সমাজসংস্কারক ও সফল ব্যবসায়ী ছিলেন, তিনি মসজিদে নববীর ইমাম ছিলেন, মিম্বরের খতিব ছিলেন, রণাঙ্গনের সেনাপতি ছিলেন, ছিলেন মুসলিম বিশ্বের সম্রাট। আমরা যথাসাধ্য তাঁর সর্বজনীন আদর্শ অনুসরণের প্রচেষ্টা করতে পারি। বিষেশ করে আলেমগণের বর্তমানে ধর্মীয় জ্ঞানে পরিপক্বতা অর্জন করা খুবই জরুরি। আমাদের কেউ শিক্ষকতায় আত্মনিয়োগ করছেন, কেউ দাঈ, লেখক বা আত্মশুদ্ধি ইত্যাদি ধর্মীয় কাজে নিয়োজিত আছেন। কারও কাজ ছোট করে দেখার কোনো উপায় নেই। আমরা পরস্পর সহযোগিতা করার চেষ্টা করি। সাধ্যানুযায়ী সব ক্ষেত্রে আত্মনিয়োগের মানসিকতা ত্বরান্বিত করতে পারি।
আধ্যাত্মিক কার্যক্রম ও ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করা দাওয়াতি কাজে বেশি কার্যকরী হয়। এই পথে বাতিল মতবাদ অধিক হারে মানুষকে বিভ্রান্ত করে যাচ্ছে। তাই এই প্ল্যাটফরমে আমাদের বিচরণ করা ও ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ করা কাম্য। বিশ্ব মানবতার মুক্তি এবং ইহ ও পরকালে সফলতার জন্য আত্মশুদ্ধির বিকল্প নেই। একটি বিশেষ শ্রেণি আধুনিকতার নামে মানব জাতিকে আধ্যাত্মিক আত্মশুদ্ধি থেকে বিমুখ করার হীন চক্রান্তে লিপ্ত আছে। অথচ আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেন, ‘সে-ই সফল, যে নিজেকে পরিশোধন করবে এবং সে-ই ব্যর্থ হবে যে নিজেকে কলুষাচ্ছন্ন করবে।’ (আশ শামস্, ৯-১০)
‘হে ইমানদারগণ! আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সঙ্গে থাকো।’ (আত তাওবাহ-১১৯) ‘আল্লাহ ইমানদারদের ওপর অনুগ্রহ করেছেন যে, তাদের মাঝে তাদের নিজেদের মধ্য থেকে নবী পাঠিয়েছেন। তিনি তাদের নিকট তাঁর আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করেন, তাদের পরিশোধন করেন এবং কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেন, যদিও তারা পূর্বে স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে ছিল।’ (আলে ইমরান-১৬১)।
মানুষকে সঠিক পথে উৎসাহিত করা এবং তাদের ভুল ধারণা নির্মূল করার জন্য ব্যক্তিগতভাবে তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করা, সম্পর্ক করা ও দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করা প্রত্যেকের একটা কর্মসূচি হতে পারে। সমাজের বিশাল অংশ মহিলা মুসলিম। বর্তমানে অনেক বাতিল মতবাদ তাদের বিভ্রান্ত করার কাজে সক্রিয় হচ্ছে। মহিলাদের মাধ্যমে পুরুষরাও প্রভাবিত হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আমাদের দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। তাই আমাদের নিজেদের মহিলাগণকে যথাযথভাবে দাওয়াতের জন্য প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের মাধ্যমে ব্যক্তিগত দাওয়াত প্রক্রিয়া এবং প্রয়োজন ও সুযোগ অনুযায়ী সাপ্তাহিক বা মাসিক তালিমের ব্যবস্থা চালু করতে পারি।
বড়দের প্রতি শ্রদ্ধা, সাথিদের প্রতি ভালোবাসা, ছোটদের স্নেহ বজায় রাখা এবং আর্থিকভাবে বিপদগ্রস্ত মানুষদের প্রতি সহযোগিতার হাত সম্প্রসারিত করা দাওয়াতি আদর্শের শ্রেষ্ঠ সোপান। কোরআন-হাদিসের আলোকে সুস্পষ্টভাবে বোঝা যায়, যাবতীয় বিষয়ে মুসলামানদের একমত হওয়া অত্যন্ত দুরূহ ব্যাপার। তবে একই মতাদর্শের লোকজন মৌলিকভাবে যেসব বিষয়ে একমত হওয়া সম্ভব ওই সব বিষয়ে এক হয়ে কাজ করা যেতে পারে। তবে একে অপরের সঙ্গে বিরোধ, হিংসাবিদ্বেষ, গীবত ও নিন্দা করা সর্বাবস্থায় হারাম। বর্তমান মুসলিম বিশ্ব পরিস্থিতি এবং আমাদের সামাজিক অবস্থা বিবেচনায় এসব অবসান করা সময়ের দাবি।
সমাজের ছোট-বড়, নারী-পুরুষ সবার জন্য ইসলামি শিক্ষা ও ইসলামি আদর্শ অবলম্বন করা জরুরি। মাদরাসা হলো, সঠিক ইসলামি শিক্ষা প্রদান এবং রসুলের (সা.) আদর্শ বাস্তবায়নের শ্রেষ্ঠ ও সফল প্রতিষ্ঠান। অতএব মুসলিম সন্তানদের মাদরাসায় পাঠানোর জন্য সবার একান্তভাবে প্রচেষ্টা জরুরি। সঙ্গে সঙ্গে ভাবনার বিষয় হলো, মাদরাসার গণ্ডির বাইরে যারা রয়েছে, তাদের পরিমাণও অনেক বেশি। অতএব তাদের আকিদা-বিশ্বাস ও ধর্মীয় মৌলিক শিক্ষা, আচার-আচরণ কোরআন-সুন্নাহ মোতাবেক নিশ্চিত করা আমাদের অপরিহার্য দায়িত্ব।
গোটা বাংলাদেশে প্রায় আট লাখ ইমাম, মুয়াজ্জিন আছেন। আলেম-ওলামা রয়েছেন অগণিত। তার পরও এ দেশে বাতিল মতবাদ কেন বৃদ্ধি পাচ্ছে? কেন লাখ লাখ মুসলমান বিভ্রান্ত ও পথভ্রষ্ট হচ্ছে? তা আজ আমাদের ভাবনার বিষয়। চিন্তা করার প্রয়োজন আমাদের কী করণীয়। ধর্মীয় যাবতীয় আমল নিজে পালন করার প্রতি যত্নবান হই, অপরের প্রতি নিষ্ঠার সঙ্গে দাওয়াত দিই। নিজে সংশোধন হলে সমাজের একজন সংস্কার হয়ে গেল। এভাবেই গড়ে ওঠে সমাজ। জেনে রাখি! আমাদের ওপর অনেক দায়িত্ব রয়েছে। আমরা আপন আপন দায়িত্ব পালনে যত্নবান হই। জবাবদিহির প্রতি সচেতন হই। জাতি আমাদের ইস্তেকবাল করার জন্য প্রস্তুত আছে, আমরা তাদের ইস্তেকবাল গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত হই।
লেখক : মুফতি রফিকুল ইসলাম আল মাদানি
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।