ধর্ম ডেস্ক : মাতৃভাষা সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহর এক অসাধারণ নিয়ামত। এই জগতের সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ। মাতৃভাষার স্রষ্টাও মহান ্আল্লাহ। ভাষার ব্যবহার মুখে বলা বা কলমে লেখা দুভাবেই হয়ে থাকে। মানবজাতি দুভাবেই ভাষা প্রয়োগের ক্ষমতা পেয়েছে। আল্লাহর সব নিয়ামতের সঙ্গে মাতৃভাষারও কদর করার কথা বলেছেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তিনিই মানুষ সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে ভাব (ভাষা) প্রকাশ করতে শিখিয়েছেন (আর-রাহমান : ৩-৪)।’
প্রতি বছরের মতো এবারও আমাদের মাঝে এসেছে ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি। এ মাসের ২১ ফেব্রুয়ারি দিনটিতে সারা দুনিয়ার মানুষ মাতৃভাষার মর্যাদাকে সমুন্নত রাখার শপথ নেয়। ইসলামে মাতৃভাষার মর্যাদাকে স্বীকার করা হয়েছে বিশেষভাবে। মুসলমানমাত্রই বিশ্বাস করে, ভাষা মানুষের প্রতি মহান আল্লাহর একটি নিয়ামত। জীবজগতের মধ্যে একমাত্র মানুষই কথা বলতে পারে। সর্বশক্তিমান আল্লাহ মানুষকে ভাষা ও বর্ণের ভিন্নতা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। তিনি ইরশাদ করছেন, ‘আর আল্লাহর নিদর্শনগুলোর মধ্যে (একটি নিদর্শন হলো) আসমান ও জমিন সৃষ্টি এবং মানুষের ভাষা ও বর্ণের ভিন্নতা। এর মধ্যে জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য উপদেশ রয়েছে (সুরা রুম, আয়াত ২২)।’ ওই আয়াতে পৃথিবীর মানুষের ভাষা ও বর্ণের ভিন্নতাকে আল্লাহতায়ালা তাঁর একটি নিদর্শন বলে আখ্যায়িত করেছেন।
অন্যত্র আল্লাহ বলেন, সুন্দর ভাষায় বক্তব্য উপস্থাপন ও উত্তম বাচনভঙ্গিতে কথা বলতে অপারগতার কারণেই হজরত মুসা (আ.) দীনের দাওয়াত নিয়ে ফেরাউনের কাছে যাওয়ার সময় সুন্দর ভাষা ও হৃদয়গ্রাহী কথাবার্তায় পারঙ্গম স্বীয় ভাই হারুন (আ.)-কে নিজের সঙ্গী করার জন্য আল্লাহর কাছে আবেদন জানিয়ে বলেছিলেন, ‘আমার ভাই হারুন; সে আমার থেকে অনেক বেশি প্রাঞ্জল-ভাষী। তাই আপনি তাকে আমার সহযোগী করে প্রেরণ করুন; যাতে সে আমাকে (দাওয়াতের ক্ষেত্রে তার প্রাঞ্জল ভাষার দ্বারা) সত্যায়িত করে। কেননা আমি আশঙ্কা করছি (আমার বক্তব্য সত্য হওয়া সত্ত্বেও) তারা আমাকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করবে (সুরা কাসাস, আয়াত ৩৪)।’
আল্লাহ মানুষের হেদায়াতের জন্য পৃথিবীতে যেসব নবী-রসুল পাঠিয়েছেন, তাঁদের সবার কাছে মাতৃভাষায় আল্লাহর ওহি প্রেরিত হয়েছে; যাতে তাঁরা তাঁদের জাতিকে সুস্পষ্ট ভাষায় আল্লাহর হুকুম সম্পর্কে অবহিত করতে পারেন। হজরত মুসা (আ.)-এর ওপর তাওরাত অবতীর্ণ হয়েছে হিব্রু ভাষায়, হজরত দাউদ (আ.)-এর ওপর জবুর অবতীর্ণ হয়েছে ইউনানি ভাষায় আর হজরত ইসা (আ.)-এর ওপর ইনজিল অবতীর্ণ হয়েছে সুরিয়ানি ভাষায়। শেষ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে আরবি ভাষায়।
রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মতের মাতৃভাষা ছিল আরবি তাই কোরআন তার মাতৃভাষা আরবিতে নাজিল করা হয়েছে। মাতৃভাষার শিক্ষা ও বিকাশে অকুণ্ঠ সমর্থনে মহান আল্লাহর বাণী সহজ, সুন্দর, সাবলীল ও পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য সংশ্লিষ্ট জাতির ভাষাভাষী করে রসুলদের পাঠানো হয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি প্রত্যেক রসুলকেই তাঁর স্বজাতির ভাষাভাষী করে পাঠিয়েছি তাদের কাছে পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য অতঃপর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বিভ্রান্ত করে এবং তিনি পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময় (সুরা ইবরাহিম-৪)।’
মানবজীবনে সৌন্দর্যের অন্যতম দিক হলো তার ভাষা। ভাষার মাধ্যমে বিকশিত হয় তার ব্যক্তিত্বের শোভা ও সৌরভ। ব্যক্তির শব্দ ও বাক্য তার রুচি এবং রোধের পরিচায়ক। তার চিন্তা ও চেতনার স্ফুরক। তার কথামালা ধারণ করে থাকে তার মন ও মননের রং। তাই ইসলাম মানুষকে নির্দেশ দেয় পরিশুদ্ধ জীবনে, শুদ্ধ কর তোমার শব্দবাক্য ও ভাষা মধুর কর তোমার বাচনভঙ্গি। তুমি যদি জয় করতে চাও মানুষের মন পেতে চাও মানুষের মনোযোগ তোমাকে জানতে হবে শব্দবাক্যের রসায়ন কথার জাদু। তা ছাড়া কিছু কথা জাদুময়। রসুল (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই কিছু কথা জাদুময় (বুখারি শরিফ)।’
ভারতে স্বামীর কিডনি বিক্রির টাকা নিয়ে প্রেমিকের সঙ্গে পালালেন স্ত্রী!
পৃথিবীর সব জাতির নিজ নিজ ভাষা রয়েছে। এ ভাষা তাদের মুখের ভাষা, মায়ের ভাষা, স্বপ্নের ভাষা এবং জীবনযাপনের ভাষা। মায়ের কাছ থেকে এ ভাষা শেখে বিধায় এর নাম মাতৃভাষা। এ পৃথিবীতে প্রায় ছয় হাজারের অধিক ভাষার অস্তিত্ব আছে। আলাদা আলাদা ভাষায় মানুষ কথা বলে। মানবশিশু দুনিয়াতে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর তার মা-বাবা, আত্মীয়স্বজন পাড়া-প্রতিবেশীর কাছ থেকে যে ভাষা শোনে এবং তাদের সঙ্গে যে ভাষায় কথা বলে তাই তার মাতৃভাষা। মাতৃভাষা মানুষের মনোভাব প্রকাশের সর্বোত্তম মাধ্যম। মাতৃভাষার মাধ্যমে সহজে মানুষকে যা বোঝানো যায়, তা অন্য ভাষায় সহজে বোঝানো যায় না।
লেখক : মুহাম্মদ আশরাফ আলী
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।