ধর্ম ডেস্ক : মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত তথা সৃষ্টির সেরা জীব। ইসলাম ধর্মে মানুষের সম্মান মর্যাদা উচ্চাসনে আর ইসলাম হলো সত্য ও সুন্দর ইনসাফের ধর্ম। এ ধর্মে আছে পরস্পর শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও মানবতা। সবাইকে ভালোবাসাতেই ইসলামের সৌন্দর্য। কাউকে অধিকার বঞ্চিত করা, হেয় করা, তুচ্ছ করা, হিংসা করাকে ইসলাম সমর্থন করে না। কারও ভালো কিছু দেখে অসহ্যবোধ করা বা তার অকল্যাণ কামনা করা কিংবা সেই ব্যক্তির ভালো বিষয়টির ধ্বংস চাওয়া, কৌশলে ধ্বংস করাকে হিংসা-বিদ্বেষ বলে। একজন মুমিন কখনই আরেক ভাইয়ের ভালো ও কল্যাণের বিষয় দেখে অসহ্যবোধ কিংবা হিংসাতুর হতে পারে না। এতে করে যে পরকালে নিজের ক্ষতিই সাধিত হবে।
অন্যের সুখ, শান্তি ও ধন-সম্পদ বিনষ্ট বা ধ্বংস করে নিজে এর মালিক হওয়ার বাসনা দুষ্ট মানুষের থাকে। আরবিতে একে হাসাদ বা হিংসা বলা হয়। ইসলাম ধর্মে অন্যের প্রতি হিংসা করাকে সম্পূর্ণরূপে নিষেধ করা হয়েছে। দুষ্ট মানুষের চরিত্রে যেসব খারাপ দিক আছে, তার মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষ অন্যতম। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা হিংসা থেকে বেঁচে থাকো। কেননা হিংসা নেকিকে এমনভাবে খেয়ে ফেলে, যেভাবে আগুন কাঠকে খেয়ে ফেলে অর্থাৎ জ্বালিয়ে দেয়।’ (আবু দাউদ : ৪৯০৩)।
রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা পরস্পরকে হিংসা করো না। একে অপরের প্রতি বিদ্বেষভাব রেখো না। একজন আরেকজন থেকে আলাদা হয়ো না। বরং তোমরা সবাই আল্লাহর বান্দা ভাই ভাই হয়ে যাও।’ (মুসলিম : ৬৩৫৩)। প্রতিহিংসার কত বড় গুনাহ তা বোঝাতে গিয়ে ইমাম গাজ্জালি (রহ.) লেখেন, ‘পৃথিবীতে সর্বপ্রথম পাপ হলো হিংসা। বাবা আদম (আ.)-এর মর্যাদা দেখে তাঁর প্রতি ঈর্ষান্বিত হয় ইবলিশ। ঈর্ষা ও হিংসা থেকেই ইবলিশের মনে জন্ম নেয় অহংকার। আর অহংকারের কারণেই সে আদম (আ.)-কে সিজদা করতে অস্বীকার করে। ফলে সে চিরদিনের জন্য অভিশপ্ত ও মরদুদ হয়ে যায়।’ এরপর ইমাম গাজ্জালি আরেকটি ঘটনা বর্ণনা করেন। তিনি লেখেন, ‘একবার মুসা (আ.) দেখলেন এক ব্যক্তি আল্লাহর আরশের ছায়ায় বসে আছেন। তিনি ভাবলেন, এ ব্যক্তি নিশ্চয় খুব বুজুর্গ লোক হবে। তাই তার এত মর্যাদা। মহান আল্লাহকে তিনি বললেন, হে আল্লাহ! এ ব্যক্তির নাম-ঠিকানা কী? আল্লাহতায়ালা তার পরিচয় না বলে বললেন, মুসা! এ লোক কোন আমলের দ্বারা এত মর্যাদা পেয়েছে জানো? সে কখনো কারও প্রতি ঈর্ষা ও বিদ্বেষভাব পোষণ করেনি। তাই আমার কাছে সে এত বড় মর্যাদা পেয়েছে। (কিমিয়ায়ে সাদাত : চতুর্থ খণ্ড, ৯২-৯৩ পৃ.)।
অন্যের ভালো দেখে অন্তর্জ্বালায় ভোগা, তার ক্ষতিসাধন করা মুনাফিকের চরিত্র। আর এমন পরিবেশে মুমিনের কর্তব্য হলো ধৈর্য অবলম্বন করা। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের ভালো কিছু হলে তারা কষ্ট পায় আর তোমাদের কোনো বিপদ দেখলে তারা আনন্দিত হয়। (এমন পরিস্থিতিতে) তোমরা অবশ্যই ধৈর্যের সঙ্গে এবং তাকওয়ার সঙ্গে কাজ করবে। তাহলে তাদের ষড়যন্ত্র তোমাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। (সুরা আলে ইমরান : ১২০)। পাশাপাশি আরেকটি কাজ করতে হবে, যা প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমে আল্লাহতায়ালা আমাদের শিখিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, (হে নবী আপনি বলুন!) আমি হিংসুকের হিংসা থেকে আশ্রয় চাই, যখন সে হিংসা করে।’ (সুরা ফালাক : ৫)। সব সময় আল্লাহর কাছে এভাবে আশ্রয় প্রার্থনা করতে হবে। কারও ভালো কিছু দেখে তা নিজের জন্য কামনা করা ক্ষতির নয়, যদি এতে অন্যের জন্য অমঙ্গল কামনা করা না হয়। বরং ইবাদত ও আমলের ক্ষেত্রে এমন মনোভাব খুবই প্রশংসনীয়। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিস শরিফে এর প্রমাণ পাওয়া যায়।
বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ‘গুপ্তচর ক্যামেরা’ বানাল একদল চীনা গবেষক
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘দুই ব্যক্তি ছাড়া আর কারও জন্য হিংসা জায়েজ নেই। প্রথম সে ব্যক্তি যাকে আল্লাহতায়ালা ধন-সম্পদ দান করেছেন এবং আল্লাহর পথে দান করার জন্য তাকে নিয়োজিত করেছেন।’ (মুসলিম)। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তির গুনাহ মাফ হয় না, তার মধ্যে একজন হচ্ছে অন্যের প্রতি বিদ্বেষ-পোষণকারী ব্যক্তি।’ হিংসা-বিদ্বেষের কঠিন পরিণতি সম্পর্কে নবীজি বলেছেন, ‘প্রতি সপ্তাহে সোম ও বৃহস্পতিবার মানুষের আমলগুলো পেশ করা হয় এবং সব মুমিন বান্দার গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়; কিন্তু যাদের পরস্পরের মধ্যে বিদ্বেষ ও দুশমনি আছে, তাদের ক্ষমা করা হয় না।’ (মুসলিম)। তাই আসুন, আমরা সবাই নিজেরা সদা সর্বদা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকব আর মনকে ও হিংসা-বিদ্বেষ থেকে পবিত্র রাখব। মহান আল্লাহতায়ালা আমাদের নেক আমল করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
লেখক : মুফতি মোহাম্মদ এহছানুল হক মুজাদ্দেদী
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।