ধর্ম ডেস্ক : ইসলাম বিয়ে করা বা দেওয়ার সময় দ্বিনদারি ও নৈতিকতাকে সব কিছুর ওপর প্রাধান্য দেয়। বিয়ের উপযুক্ত ছেলে ও মেয়ে অনেক সময় বয়স-বুদ্ধির অপরিপক্বতার কারণে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। সে ক্ষেত্রে অভিভাবকদের দায়িত্ব তাদের সুপথ প্রদর্শন করা। উপযুক্ত পাত্র-পাত্রী নির্বাচনে তাদের সাহায্য করা।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা যে ব্যক্তির দ্বিনদারি ও নৈতিক চরিত্রে সন্তুষ্ট আছ তোমাদের কাছে সেই ব্যক্তি বিয়ের প্রস্তাব করলে তবে তার সঙ্গে বিয়ে দাও। তা যদি না করো তাহলে পৃথিবীতে ফিতনা-ফ্যাসাদ ও চরম বিপর্যয় সৃষ্টি হবে।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১০৮৪)
কন্যার অভিভাবকের করণীয়
সন্তান যদি কন্যা হয়, তবে ইসলাম অভিভাবককে আরো বেশি দায়িত্বশীল হওয়ার নির্দেশ দেয়। কন্যাসন্তানের বিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে অভিভাবকের তিনটি বিশেষ দায়িত্ব তুলে ধরা হলো—
১. পাত্র নির্বাচনে আল্লাহকে ভয় করা : কন্যাসন্তানের পাত্র নির্বাচনে অভিভাবকের উচিত আল্লাহকে ভয় করা। আর তা হলো, সচ্চরিত্রের অধিকারী পাত্রের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া।
অসচ্চরিত্রের কোনো লোকের সঙ্গে অথবা এমন ব্যক্তি যার ভেতর আল্লাহর ভয় নেই, যে দ্বিনদারিতে পিছিয়ে তার সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দেওয়া অনুচিত। ইমাম শাবি (রহ.) বলেন, যে ব্যক্তি তাঁর দ্বিনদার ও ভদ্র কন্যাকে কোনো পাপাচারীর সঙ্গে বিয়ে দিল সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করল। (মুজাকারাতুল ফিকহ : ৩/২০৬)
২. কোমল হৃদয় পাত্র খোঁজা : কন্যাসন্তানের বিয়ে দেওয়ার সময় অভিভাবকের দায়িত্ব হলো কোমল হৃদয়ের পাত্র অনুসন্ধান করা। এক ব্যক্তি হাসান বসরি (রহ.)-কে বলেন, ‘আমার কন্যার ব্যাপারে একাধিক ব্যক্তি বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে। আমি কার সঙ্গে বিয়ে দেব?’
তিনি বলেন, যে আল্লাহকে ভয় করে। তাদের ভেতর যে তাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসবে, যে সবচেয়ে ব্যক্তিত্ব বোধসম্পন্ন আর কন্যার প্রতি ক্ষুব্ধ হলেও যে তার প্রতি জুলুম করবে না। (মিনহাজুল কাসিদিন, পৃষ্ঠা ৩২৮)
৩. মেয়ের পছন্দকে গুরুত্ব দেওয়া : কন্যাসন্তান যদি উপযুক্ত কোনো পাত্রকে পছন্দ করে তবে তার পছন্দকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন, ‘যদি মেয়ে এমন কোনো পুরুষকে পছন্দ করে যার সঙ্গে কুফুর (দ্বিনদারি, বংশমর্যাদা, অর্থবিত্ত ও সৌন্দর্যের) মিল আছে, তবে অভিভাবকের দায়িত্ব তার সঙ্গে বিয়ে দেওয়া।
এই দায়িত্ব ধারাবাহিকভাবে বর্তাবে বাবা, ভাই ও চাচার ওপর। শরয়ি অপারগতা ছাড়া কন্যার পছন্দের পাত্রকে প্রত্যাখ্যান করা কিংবা কন্যার অপছন্দের কারো সঙ্গে বিয়ে দেওয়া উচিত নয়। (মাজমুউল ফাতাওয়া : ১৮/৩১)
৪. স্বার্থসিদ্ধির জন্য বিয়ে না দেওয়া : নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য কন্যাকে কোনো পাত্রের হাতে তুলে দেওয়া জুলুম। আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন, ‘অজ্ঞ ও জালেমরাই তাদের কন্যাকে নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য কারো সঙ্গে বিয়ে দেয়। তারা কন্যার কল্যাণ বিবেচনা করে না।
তারা অপছন্দের পাত্রের সঙ্গে কন্যাকে বিয়ে করতে বাধ্য করে। এমনকি পূর্বশত্রুতার কারণে উপযুক্ত পাত্রের বিয়ের প্রস্তাব তারা ভেঙে দেয়। কন্যাসন্তানের প্রতি এমন জুলুম ইসলাম হারাম করেছে।’ (মাজমুউল ফাতাওয়া : ১৮/৩১)
৫. উপযুক্ত পাত্র পেলে প্রস্তাব দেওয়া : অভিভাবক যদি কোনো উপযুক্ত পাত্র পান, তবে তাদের উচিত নিজ থেকে প্রস্তাব পেশ করা। পাত্রপক্ষের প্রস্তাবের অপেক্ষা না করা। যেমন—কন্যা হাফসা (রা.)-এর বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে প্রথমে উসমান (রা.)-এর কাছে যান। অতঃপর আবু বকর (রা.)-এর কাছে যান। সর্বশেষ রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পক্ষ থেকে প্রস্তাব এলে তিনি হাফসা (রা.)-কে তাঁর সঙ্গে বিয়ে দেন।
কন্যাসন্তান আল্লাহর আমানত
সন্তান আল্লাহর পক্ষ থেকে মা-বাবা ও অভিভাবকের জন্য আমানত। বিশেষত কন্যারা যেহেতু অভিভাবকের একটু বেশি নির্ভরশীল এবং তারা অভিভাবকের ইচ্ছা-অনিচ্ছার বিরুদ্ধে স্পষ্ট ভাষী নয়, তাই তাদের ব্যাপারে অধিক সতর্কতা কাম্য।
মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন আমানত তার হকদারকে প্রত্যর্পণ করতে। তোমরা যখন মানুষের ভেতর বিচার করবে, তখন ন্যায়পরায়ণতার সঙ্গে বিচার করবে। আল্লাহ তোমাদের যে উপদেশ দেন তা কত উত্কৃষ্ট! আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ৫৮)
আল্লাহ সবাইকে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনের তাওফিক দিন। আমিন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।