ধর্ম ডেস্ক : এক পরিপূর্ণ জীবন বিধানের নাম ইসলাম। ইসলাম শান্তি, স্বস্তি ও মানবতার কল্যাণ সুনিশ্চিত করার অনন্য আদর্শ। উগ্রতা, মারামারি, কাটাকাটি, সন্ত্রাস, রাহাজানি কিংবা উচ্ছৃঙ্খল আচরণ ইসলাম সমর্থন করে না। অহমিকা, ক্রোধ, হিংসা, কলহ থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দেয় ইসলাম।
ইসলামের সঙ্গে উগ্রতার কোনো সম্পর্ক নেই। ইসলাম সীমা লঙ্ঘনকারীদের কখনোই সমর্থন করে না। অথচ আমাদের সমাজে উগ্রতা আজ মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়ছে। হাটে-মাঠে-ঘাটে যেখানেই যাই সব জায়গায় আজ উগ্রতা আর উচ্ছৃঙ্খলতার ছড়াছড়ি।
মাহফিলের নামে উগ্রতা, রাজনীতির নামে উগ্রতা, রাষ্ট্র পরিচালনার নামে উগ্রতা, বিরোধিতার নামে উগ্রতা, প্রতিদ্বন্দ্বিতার নামে উগ্রতা, প্রতিশোধের নামে উগ্রতা, মতাদর্শ প্রচারের নামে উগ্রতা—এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে উগ্রতার বিষবৃক্ষ মাথা চাড়া দিয়ে দাঁড়িয়ে নেই। কিন্তু কেন এ ধ্বংসাত্মক প্রচেষ্টা? কেন এ আত্মঘাতী পদক্ষেপ? এ জাতি কি জীবনভর এমন চক্রেই আবদ্ধ থাকবে? কী ধর্মীয়, কী জাগতিক—সব বিষয়ে আমরা যেন অসহিষ্ণু এক কুৎসিত জাতিতে পরিণত হয়েছি।
অথচ আল্লাহ তাআলা বান্দাকে উগ্রতা নয়, নম্রতা গ্রহণ করার আদেশ করে বলেন, ‘রহমানের বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে বিনম্রভাবে চলাফেরা করে এবং অজ্ঞ লোকেরা যখন তাদের সম্বোধন করে তখন তারা বিতর্ক এড়িয়ে বলে সালাম।’ (সুরা : ফুরকান, আয়াত : ৬৩)
রহমানের বান্দাদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে এখানে আল্লাহ ‘হাওনানা’ শব্দ ব্যবহার করেছেন।
অভিধানে এর অর্থ স্থির, গাম্ভীর্য, বিনয় ইত্যাদি উল্লেখ করা আছে। রহমানের বান্দারা যখন রাস্তায় চলে তখন তারা গর্বভরে চলে না। অহংকারীর মতো জমিনে পা ফেলে না। অহংকারীর মতো বুক ফুলিয়ে চলে না। তারা আত্মগর্বে বিভোর, স্বৈরাচারী ও বিপর্যয়কারীর মতো নিজের চলার মাধ্যমে শক্তি দেখানোর চেষ্টা করে না, বরং তাদের চালচলন হয় ভদ্র, মার্জিত ও সৎ স্বভাবসম্পন্ন ব্যক্তির মতো।
নম্রতার তাৎপর্য বোঝার জন্য একটি উদাহরণ দিচ্ছি। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ওপর আল্লাহর অনুগ্রহগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, কোমলতা ও নম্রতা। কেননা আর দ্বিন প্রচারের জন্য নম্রতাই বেশি প্রয়োজন। রাসুল (সা.) যদি কোমল না হয়ে কঠিন হৃদয়ের অধিকারী হতেন, তাহলে মানুষ হজরতের কাছে না এসে আরো দূরে সরে যেত। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ রহমত এই যে আপনি তাদের প্রতি নম্রতা দেখাচ্ছেন। যদি আপনি কঠোর স্বভাবের হতেন, তবে তারা আপনার আশপাশ থেকে সরে পড়ত। সুতরাং তাদের ক্ষমা করুন এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। আর কাজকর্মে তাদের সঙ্গে পরামর্শ করুন। অতঃপর যখন সংকল্প করবেন, তখন আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওয়াক্কুলকারীদের ভালোবাসেন।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৫৯)
রুক্ষ, কর্কশ ভাষা ও উগ্র আচরণ সব সময় ঘৃণিত। মুসলমানের অন্যতম কাজ হলো তারা সব সময় দাঈ ইলাল্লাহ। শুধু নিজেই ইসলাম মানে না, বরং অন্যদেরও ইসলামের প্রতি আহ্বান করা তার দায়িত্ব। আর আল্লাহর পথে আহ্বানকারীদের প্রথম গুণ হতে হবে নরম ভাষায় কথা বলা। আল্লাহ যখন মুসা (আ.)-কে ফেরাউনের কাছে পাঠান তখন আল্লাহ বলেদিয়েছেন, অবশ্যই তার সঙ্গে যেন নরম ভাষায় কথা বলা হয়। আল্লাহ বলেন, ‘তার সঙ্গে নরম কথা বলো, হয়তো সে উপদেশ গ্রহণ করবে অথবা ভয় করবে।’ (সুরা : তহা, আয়াত : ৪৪)
হজযাত্রী ও মুসল্লিদের সহায়তায় মক্কা-মদিনায় টোল ফ্রি নম্বর চালু
আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ নিজে কোমল, তিনি কোমলতা ভালোবাসেন। আর তিনি কোমলতার প্রতি যত অনুগ্রহ করেন, কঠোরতা এবং অন্য কোনো আচরণের প্রতি তত অনুগ্রহ করেন না।’
(মুসলিম, হাদিস : ২৫৯৩)
আসুন! আমরা সর্বত্র উগ্রতা পরিহার করি।
লেখক : মাওলানা হাফেজ আল আমিন সরকার
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।