কোনো এক সন্ধ্যায় ঢাকার গুলশান লেকে দাঁড়িয়ে তরুণ উদ্যোক্তা আরিফের চোখে জল। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কোটি টাকা, লাক্সারি গাড়ি, সোস্যাল মিডিয়ায় হাজারো ফলোয়ার—তবুও তার বুকের ভেতর এক অমোচনীয় শূন্যতা। “এটাই কি সফলতা?” প্রশ্নটার ভার তাকে প্রতিদিন ক্লান্ত করে। আরিফের মতো লক্ষ বাঙালির হৃদয়ে আজ একই জিজ্ঞাসা: বস্তুগত সম্পদে ভরপুর হয়েও কেন জীবনে আসল শান্তি পাচ্ছি না? উত্তর খুঁজতে হলে আমাদের ফিরে যেতে হবে ঐশী বাণীর আলোকে—যেখানে ইসলামী দৃষ্টিকোণে সফলতা কোনো গন্তব্য নয়, বরং এক নিত্য চলমান রূপান্তরের যাত্রা। এই পথে সাফল্য পরিমাপ হয় ব্যাংক স্টেটমেন্টে নয়, বরং আত্মার পরিশুদ্ধি, সমাজের কল্যাণ এবং আল্লাহর সান্নিধ্যে উত্তরণের মাধ্যমে। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে: “নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি শুদ্ধচিত্ত হয়ে তার প্রতিপালকের দিকে ফিরে আসবে, তার জন্যে রয়েছে সন্তুষ্টি আর তার জন্যে রয়েছে উৎকৃষ্ট প্রতিদান।” (সূরা কাহাফ, আয়াত ৮৮)। এই আয়াতের মর্মার্থই হল ইসলামী সফলতার ভিত্তিভূমি—যে সফলতা শুধু ইহকালীন নয়, চিরস্থায়ী পরকালীন মুক্তির সোপান।
ইসলামী দৃষ্টিকোণে সফলতার মৌলিক সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য
পাশ্চাত্য সংস্কৃতি আমাদের শিখিয়েছে সফলতা মানেই প্রমোশন, ফাস্ট কার আর পাঁচতারা হোটেলের ভ্যাকেশন। কিন্তু ইসলাম এই সংকীর্ণ সংজ্ঞাকে আমূল পালটে দেয়। এখানে সফলতা হল এক বহুমাত্রিক ধারণা—আধ্যাত্মিক, নৈতিক, সামাজিক ও ব্যক্তিগত উন্নতির সমন্বিত রূপ। বিশ্বের ১.৯ বিলিয়ন মুসলিমের জীবনদর্শনের কেন্দ্রে থাকা এই ধারণা অনুযায়ী, ইসলামী দৃষ্টিকোণে সফলতা অর্জিত হয় যখন একজন মানুষ আল্লাহর সাথে (হক্কুল্লাহ), মানুষের সাথে (হক্কুল ইবাদ) এবং নিজের আত্মার সাথে (হক্কুন নফস) তার দায়িত্ব পালনে ভারসাম্য রক্ষা করে। নবীজি (সা.)-এর সেই অমোঘ বাণী: “সেই সফল যে ইসলাম গ্রহণ করেছে, পর্যাপ্ত রিজিকপ্রাপ্ত হয়েছে এবং আল্লাহ তাকে যা দান করেছেন, তাতেই তাকে সন্তুষ্ট রাখেছেন।” (সহীহ মুসলিম)।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই সংজ্ঞার তাৎপর্য অপরিসীম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. ফরিদ আহমেদের গবেষণা ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত দেখায়, ৭২% তরুণ মনে করে “সফলতা” বলতে তারা শুধু ক্যারিয়ার অগ্রগতিকেই বুঝে। অথচ ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গিতে সফলতার পাঁচটি স্তম্ভ:
- আধ্যাত্মিক পরিপূর্ণতা: নামাজ, রোজা, হজ্জ ও যাকাতের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ
- নৈতিক অখণ্ডতা: সততা, আমানতদারিতা ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা
- জ্ঞানার্জনের অদম্য স্পৃহা: “ইকরা” (পড়) বাণীকে জীবনের মন্ত্রে পরিণত করা
- পরিবার ও সমাজে দায়িত্বশীল ভূমিকা: পিতামাতার খেদমত, প্রতিবেশীর হক আদায়
- আত্মিক প্রশান্তি: দুনিয়ার প্রতি অনাসক্তি ও পরকালীন জীবনের প্রস্তুতি
“ইসলামে সফলতা কোনো ব্যক্তিগত কৃতিত্ব নয়, বরং সমষ্টিগত কল্যাণের যাত্রা—যেখানে ব্যক্তির অর্জন সমাজের উন্নয়নে কাজে লাগে।”
— ড. খন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর, ইসলামিক স্কলার ও লেখক, “হায়াতুস সাহাবা” গ্রন্থের রচয়িতা
সিলেটের এক কৃষক পরিবারের সন্তান রাশেদুল ইসলামের জীবনই এর জ্বলন্ত প্রমাণ। আইটি ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কানাডায় উচ্চবেতনের চাকরি ছেড়ে তিনি ফিরে এসেছেন নিজ গ্রামে। প্রতিষ্ঠা করেছেন “নূরানি শিক্ষালয়”, যেখানে গ্রামের শিশুরা পাচ্ছে আধুনিক শিক্ষার পাশাপাশি কুরআন ও নৈতিক শিক্ষা। তার ভাষায়: “মাসিক ৫ লাখ টাকার স্যালারি আমাকে যে তৃপ্তি দেয়নি, তা দিচ্ছে এই শিশুদের মুখে ‘উস্তাদজি’ ডাক শুনে। ইসলামী সফলতার আসল স্বাদ এখানেই।”
কুরআন-সুন্নাহর আলোকে সফলতার রোডম্যাপ: আয়াত ও হাদীসের বিশ্লেষণ
ইসলামী দৃষ্টিকোণে সফলতা অর্জনের জন্য পবিত্র কুরআন এক পরিপূর্ণ গাইডলাইন দিয়েছে। সূরা আল-আসরের শপথ: “সময়ের! নিশ্চয়ই মানুষ ক্ষতির মধ্যে নিমজ্জিত। কিন্তু তারা ছাড়া যারা ঈমান এনেছে, সৎকাজ করেছে, একে অপরকে সত্যের উপদেশ দিয়েছে এবং ধৈর্যের উপদেশ দিয়েছে।” (১০৩:১-৩)। এই চার স্তরের ফর্মুলাই ইসলামী সফলতার মূল সূত্র—ঈমান, আমল, তাবলিগ ও সবর। বাংলাদেশের মতো প্রতিযোগিতাময় সমাজে এই সূত্রের প্রয়োগ কীভাবে সম্ভব?
মক্কার কাফিরদের অত্যাচারে পর্যুদস্ত সাহাবায়ে কেরামের কাছে সূরা আদ-দুহার নাজিল হয়: “আমি কি তোমার জন্য তোমার স্ত্রীকে (খাদিজাকে) ছেড়ে দেইনি? আর তোমাকে দান করেছি সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি?” (৯৩:৮)। এই আয়াতে আল্লাহ তায়ালা নবীজি (সা.)-কে সান্ত্বনা দিচ্ছেন না, বরং সফলতার নতুন সংজ্ঞা দিচ্ছেন—আত্মীয়তার বন্ধন, আধ্যাত্মিক সঙ্গী ও নেক সন্তানই প্রকৃত সম্পদ। ঢাকার গুলশানে বসবাসকারী কর্পোরেট এক্সিকিউটিভ শারমিন আক্তারের জীবনে এই আয়াতের প্রতিফলন দেখা যায়। ছয় মাস আগে তিনি তার ৮০ বছর বয়সী মাকে নার্সিং হোমে রাখার সিদ্ধান্ত থেকে বিরত হন। ব্যস্ততার মাঝেও প্রতিদিন দুই ঘণ্টা মায়ের সেবায় ব্যয় করেন। তার কথায়: “সপ্তাহে ৭০ ঘন্টা অফিস করে যে শূন্যতা পেতাম, তা এখন মায়ের পায়ে ম্যাসাজ করতে করতেই মিলে গেছে।”
নবীজি (সা.)-এর জীবনই ইসলামী সফলতার প্রাতিষ্ঠানিক রূপরেখা। হিজরতের সময় মদিনায় পৌঁছানোর পর তাঁর প্রথম কাজ কী ছিল? মসজিদ নির্মাণ? না, বরং ভ্রাতৃত্ব বন্ধন (মুয়াখাত) প্রতিষ্ঠা। আনসার ও মুহাজিরদের মধ্যে তৈরি হয়েছিল আত্মিক বন্ধন, যা অর্থনৈতিক সহযোগিতায় রূপ নিয়েছিল। এই মডেল আজও প্রাসঙ্গিক—বাংলাদেশে সামাজিক সংগঠন “আল-ইখওয়া ট্রাস্ট” প্রতি মাসে ৫০০টি দুঃস্থ পরিবারকে ব্যবসায়িক সহায়তা দিচ্ছে, যেখানে সাহায্যদাতা ও গ্রহীতার মধ্যে গড়ে উঠেছে ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক।
সফলতার তিন কুরআনি স্তর:
১. তাজকিয়ায়ে নাফস (আত্মশুদ্ধি): “নিশ্চয়ই সফলকাম হয়েছে সে, যে শুদ্ধ হয়।” (৮৭:১৪)
২. খিদমাতে খাল্ক (সৃষ্টির সেবা): “তোমরা সর্বোত্তম উম্মত, মানবজাতির কল্যাণের জন্য তোমাদের আবির্ভাব।” (৩:১১০)
৩. রিদওয়ানুল্লাহ (আল্লাহর সন্তুষ্টি): “আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট। এটাই মহাসাফল্য।” (৯৮:৮)
বাস্তব জীবনের রূপান্তর: বাংলাদেশে ইসলামী সফলতার অনুপ্রেরণাদায়ক কেস স্টাডিজ
কেস ১: মোহাম্মদ আলীর নৈতিক বিপ্লব
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী ইন্ডাস্ট্রিয়াল এরিয়ায় আলী ছিলেন একজন সফল কাপড়ের ব্যবসায়ী। ২০১৯ সালে তিনি আবিষ্কার করেন তার কারখানায় শিশু শ্রমিক ব্যবহার করা হচ্ছে। কুরআনের নির্দেশ “অন্যায়ভাবে মানুষের সম্পদ ভক্ষণ করো না” (৪:২৯) তাকে নাড়া দেয়। তিনি সমস্ত শিশু শ্রমিককে স্কুলে ভর্তি করেন, তাদের পরিবারকে মাসিক বৃত্তি দেন। ব্যবসায় লোকসান হলেও আজ তার প্রতিষ্ঠান “নৈতিক বস্ত্র” দেশের শীর্ষ অর্গানিক কাপড়ের ব্র্যান্ড।
কেস ২: ড. ফাতেমার আত্মিক জাগরণ
ঢাকা মেডিকেল কলেজের এই কার্ডিওলজিস্ট বছরে ৩০০+ হার্ট সার্জারি করেন। ২০২০ সালে এক রাতে তিনি দেখেন তার এক রোগী, যাকে তিনি বিনা পারিশ্রমিকে অপারেশন করেছিলেন, তার জন্য দোয়া করছে। সেই মুহূর্তে তিনি বুঝতে পারেন ইসলামী দৃষ্টিকোণে সফলতা মানে শুধু পেশাদারিত্ব নয়, মানবসেবা। আজ তার “হৃদয় ফাউন্ডেশন” মাসে ৫০টি বিনামূল্যে হার্ট সার্জারি করে।
কেস ৩: রিকশাচালক রবিউলের আধ্যাত্মিক লড়াই
খুলনার দাকোপে রবিউল দিনে ১২ ঘন্টা রিকশা চালান। ২০২২ সালে তার ছেলে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। চিকিৎসার টাকা জোগাড় করতে তিনি রাতের শিফটে কাজ শুরু করেন। একদিন ফজরের আজান শুনে তিনি কাঁদতে শুরু করেন—নামাজ ছুটে যাচ্ছে। স্থানীয় মসজিদের ইমাম তাকে “সবরের বাগান” প্রকল্পে যুক্ত করেন, যেখানে ২০ জন রিকশাচালক পালা করে নামাজ আদায় করে। রবিউল বলেন: “আল্লাহর রিজিকের গ্যারান্টি আছে। আমার সন্তান সুস্থ হয়েছে, এখন আমি অন্য অসহায়দের সাহায্য করি।”
আধুনিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ইসলামী কৌশল: বাস্তব সমাধান
১. লোভ vs তাওয়াক্কুল:
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের বিনিয়োগকারীরা প্রায়ই লোভে পড়ে হারাম স্টকে বিনিয়োগ করেন। সমাধান: ইসলামিক ফাইন্যান্স বিশেষজ্ঞ ড. মাহমুদুল হাসানের পরামর্শ—
- শুধু শরিয়া-কমপ্লায়েন্ট ফান্ডে বিনিয়োগ করুন
- মাসিক আয়ের ১০% সদকাহ করুন লোভ কমাতে
- দৈনিক ১০ মিনিট ইস্তিগফার পাঠ করুন
২. সোশ্যাল মিডিয়া অহংকার vs তাওয়াজু:
ইনস্টাগ্রামে সেলফি কালচার আত্মম্ভরিতা বাড়াচ্ছে। ইসলামী সমাধান:
- প্রতিটি পোস্টের আগে “মা শা আল্লাহ” বলা
- সপ্তাহে একদিন “ডিজিটাল সিয়াম” (সোশ্যাল মিডিয়া বিরতি)
- অন্যের সাফল্যে ঈর্ষা না করে “বারাকাল্লাহ” বলা
৩. কাজের চাপ vs ইবাদতের সময়:
কর্পোরেট জগতে নামাজের সময় না পাওয়ার সমস্যায়:
- অফিসে মোবাইল অ্যাপ “সালাত আলার্ম” ব্যবহার
- দুপুরের খাবারের সময় ১০ মিনিট সংক্ষিপ্ত করে জোহরের নামাজ
- সাপ্তাহিক ওয়েবিনার “স্পিরিচুয়াল প্রোডাক্টিভিটি”
বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২৩ রিপোর্ট অনুযায়ী, ইসলামিক ব্যাংকিং খাতে গ্রোথ ১৮.৭%—যা প্রমাণ করে ইসলামী দৃষ্টিকোণে সফলতা শুধু ধর্মীয় বিষয় নয়, বরং অর্থনৈতিক বিকল্পও বটে।
পরকালীন সাফল্যের প্রস্তুতি: ইহজীবনের কর্মই চূড়ান্ত সফলতার মাপকাঠি
ইসলামে সফলতার চূড়ান্ত পরীক্ষা হয় মৃত্যুর পরে। কবরে তিনটি প্রশ্ন: “মান রবুক? মা দ্বীনুক? মান হাজা রাসুলুক?” (তোমার রব কে? তোমার দ্বীন কী? এই ব্যক্তি তোমার কাছে কে?)। এই মুহূর্তের উত্তরের জন্য আজকের জীবনযাপনই নির্ধারক। ময়মনসিংহের কৃষক জমির উদ্দিনের দৃষ্টান্ত: তিনি তার ৫ বিঘা জমির এক কোণে “মাকবারাতুল জান্নাহ” নামে একটি কবরস্থান তৈরি করেছেন, যেখানে বিনামূল্যে দাফন করা হয়। তার বিশ্বাস: “যে জমি মানুষের শেষ ঠিকানা হয়, তা আল্লাহর কাছে সবচেয়ে মূল্যবান বিনিয়োগ।”
ইসলামী স্কলার ইমাম গাজ্জালী (রহ.) বলতেন: “সফল ব্যক্তি সে, যে মৃত্যুকে স্মরণ করে, কবরের আঁধারকে ভয় পায়, পরকালের হিসাবের প্রস্তুতি নেয়।” বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই প্রস্তুতি কী রূপ নিতে পারে?
- আর্থিক প্রস্তুতি: হারাম উপার্জন বর্জন, সম্পদের জাকাত সঠিকভাবে আদায়
- আত্মিক প্রস্তুতি: দৈনিক তাওবার অভ্যাস, কুরআন তেলাওয়াতের রুটিন
- সামাজিক প্রস্তুতি: অসহায় প্রতিবেশীর সাহায্য, আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা
মরণোত্তর সফলতার তিন নিশ্চয়তা:
১. সদকায়ে জারিয়াহ: মসজিদ/স্কুল নির্মাণ, ওয়াকফ সম্পদ
২. সুবর্ণ সন্তান: যে সন্তান বাবা-মায়ের জন্য দোয়া করে
৩. জ্ঞান বিস্তার: এমন জ্ঞান যা মানুষের উপকারে লাগে
ইসলামী দৃষ্টিকোণে সফলতা কোনাে ব্যক্তিগত ম্যারাথন নয়, বরং এক সমষ্টিগত মহাযাত্রা যেখানে প্রতিটি পদক্ষেপ আল্লাহর সন্তুষ্টির দিকে পরিচালিত। এই সফলতা শেখা যায় না, অনুভব করা যায়—যখন ঈমানের আলোকে জীবনের প্রতিটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যখন টাকার থলি নয় বরং হৃদয়ের পরিশুদ্ধি হয় প্রাথমিক লক্ষ্য। বাংলাদেশের মাটিতে এই দর্শন বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন কুরআন-সুন্নাহর জ্ঞানের সাথে আধুনিক জীবনের সমন্বয়। আজই শুরু করুন আপনার রূপান্তরের যাত্রা: পরবর্তী নামাজেই আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করুন—”হে পরওয়ারদিগার! আমাদের দুনিয়ায় কল্যাণ দিন ও আখিরাতেও কল্যাণ দিন” (২:২০১)। আপনার হাতের সামান্য সাহায্যই হয়তো কারও জীবনে ইসলামী সফলতার দরজা খুলে দেবে। এগিয়ে যান, কারণ প্রকৃত সফলতার সন্ধানে আপনার যাত্রাই হতে পারে অন্যের পথের আলোকবর্তিকা।
জেনে রাখুন
ইসলামে সফলতার প্রধান শত্রু কী?
ইসলামী দৃষ্টিকোণে সফলতার তিন প্রধান শত্রু হল: অহংকার (কিব্র), লোভ (হির্স) এবং অতীত ভুলে আত্মহনন (হাসরাত)। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে: “নিশ্চয়ই আল্লাহ অহংকারীদেরকে পছন্দ করেন না।” (১৬:২৩)। সমাধান: নিয়মিত ইস্তিগফার, সদকা ও আত্মসমালোচনা।
ক্যারিয়ারে উন্নতি ইসলামী সফলতার পরিপন্থী কি?
মোটেও না। ইসলাম সম্পদকে নিষিদ্ধ করেনি, শুধু হারাম উপায়ে অর্জন ও অসৎ ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। নবীজি (সা.) বলেছেন: “উত্তম রিজিক সে, যা অর্জিত হয় স্বীয় শ্রমে” (বুখারী)। শর্ত: হালাল উপার্জন, জাকাত প্রদান, অহংকার না করা এবং সামাজিক দায়িত্ব পালন।
ইবাদত করেও কেন সফলতা আসে না?
সফলতা শুধু ইবাদতের উপর নির্ভরশীল নয়, বরং এটি একটি সমন্বিত প্রক্রিয়া। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে: “নিশ্চয়ই আল্লাহ কোন জাতির অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে” (১৩:১১)। ইবাদতের পাশাপাশি ইলম অর্জন, পরিশ্রম ও তাওয়াক্কুল জরুরি।
সফল নারীদের ইসলামী মডেল কারা?
খাদিজা (রা.) ব্যবসায়ী হিসেবে, আয়েশা (রা.) জ্ঞানী হিসেবে, ফাতিমা (রা.) মা হিসেবে—ইসলামী ইতিহাসে নারী সফলতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। রাসূল (সা.) বলেছেন: “সর্বোত্তম নারী সে, যার দেখলে তুমি আনন্দিত হও, যে আদেশ করলে আনুগত্য করে এবং তোমার অনুপস্থিতিতে তোমার সম্পদ ও সম্ভ্রম রক্ষা করে” (ইবনে মাজাহ)।
ইসলামী সফলতা পরিমাপের বাস্তব উপায় কী?
১. আত্মপর্যালোচনা: দৈনিক ৫ মিনিট নিজেকে জিজ্ঞাসা—আজ কতজন মানুষের উপকার করেছি?
২. রিজিকের বরকত: আয় বাড়ার চেয়ে ব্যয় কমাতে পারা ও তাতে তৃপ্তি পাওয়া
৩. সমাজের মূল্যায়ন: মানুষ আপনার সততা ও দায়িত্বশীলতার জন্য সম্মান দেয় কি?
পরীক্ষায় ফেল করলে কি ইসলামী সফলতা ব্যর্থ হয়?
ইসলামে ব্যর্থতা বলে কিছু নেই, আছে শিক্ষার সুযোগ। নবীজি (সা.) বলেছেন: “মুমিনের বিষয় আশ্চর্যজনক! তার সব কাজই কল্যাণকর। যদি সে সুখ পায়, শুকরিয়া আদায় করে—এটা তার জন্য ভালো। আর যদি কষ্ট পায়, ধৈর্য ধরে—এটাও তার জন্য ভালো” (মুসলিম)। ব্যর্থতাকে আল্লাহর পরীক্ষা মনে করে ধৈর্য ধরুন, পরিকল্পনা সংশোধন করুন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।