আন্তর্জাতিক ডেস্ক : পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতির শহর গাজার ভেতরে প্রবেশের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত ইসরায়েলের পদাতিক সেনারা। এবার শুধু নির্দেশের অপেক্ষা। শহরের ভেতরে লুকিয়ে থাকা হামাস যোদ্ধাদের সঙ্গে লড়াই করবে তারা। গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের মাটিতে হামাসের হামলার জের ধরে এর আগে গাজা শহরে একের পর এক বিমান হামলা চালানো হয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে—শহরের পানি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থা।
আজ বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা গাজার ভেতরে স্থল অভিযান চালানোর জন্য সব প্রস্তুতি নিয়েছেন। কিন্তু দেশটির রাজনৈতিক নেতারা এখনো কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র রিচার্ড হেচ সংবাদ সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, ‘জরুরি স্থল অভিযানের বিষয়ে আমাদের রাজনৈতিক নেতারা কী সিদ্ধান্ত নেন তার জন্য অপেক্ষা করছি।’
স্থল অভিযানকে সামনে রেখে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হেলিকপ্টারের সহায়তা সহ ইসরায়েলি পদাতিক বাহিনী যদি গাজা উপত্যকায় প্রবেশ করে তাহলে সমুদ্রতীরবর্তী ওই এলাকাটির সরু রাস্তা ও অলি-গলিতে একটি ভয়ংকর যুদ্ধ শুরু হবে।
তবে এ ধরনের হামলা চালাতে গিয়ে ইসরায়েলি বাহিনী অন্তত পাঁচটি কৌশলগত বাধার মুখোমুখি হবে। এই বাধাগুলোর মধ্যে সবার ওপরে রয়েছে গাজা শহরের ঘনবসতির বিষয়টি। এই শহরের প্রতি বর্গকিলোমিটারে গড়ে সাড়ে ৫ হাজার মানুষ বসবাস করে। শহরের রাস্তাগুলো খুব সরু। এসব রাস্তা দিয়ে ভারী অস্ত্রে সজ্জিত আইএফভি যান এবং ট্যাংকগুলো বহন পরিচালনা করা খুব কঠিন হবে ইসরায়েলি বাহিনীর জন্য। গত কয়েক দিনের বিমান হামলায় বিধ্বস্ত ঘর-বাড়ি ও স্থাপনার ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এসব রাস্তার ওপর। এ ছাড়া গাজার বাসিন্দারাও নিশ্চিতভাবেই রাস্তার ওপর নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে রাখবে।
দ্বিতীয়ত, সংকুচিত জায়গার মধ্যে ‘বুবি ট্র্যাপ’ কিংবা পেতে রাখা ফাঁদগুলো ইসরায়েলি সেনাদের জন্য তীব্র মাত্রায় ঝুঁকি তৈরি করবে। হামাস সদস্যদের খুঁজে বের করতে ইসরায়েলি সেনাদের বিভিন্ন ভবন সহ বিভিন্ন স্থাপনায় প্রবেশ করতে হবে। গাজা উপত্যকার গোলকধাঁধায় এসব করতে গিয়ে সেনারা আশপাশের অসংখ্য ভবনের অন্ধকারাচ্ছন্ন জানালা থেকে স্নাইপার আক্রমণের শিকার হতে পারে।
তৃতীয়ত, সিরিয়া এবং ইউক্রেনের যুদ্ধে প্রমাণিত হয়েছে যে, ট্যাংক বিধ্বংসী মিসাইল ও রকেট হামলায় ভারী অস্ত্র সজ্জিত একটি বড় পদাতিক বাহিনীও ছোট বাহিনীর কাছে ধরাশায়ী হতে পারে।
চতুর্থত, পদাতিক বাহিনীর জন্য হেলিকপ্টারের সহায়তা নেওয়াও কঠিন হবে। কারণ হামাসের সহজে বহনযোগ্য নিজস্ব আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে। মুবার নামে এই প্রতিরক্ষা দিয়ে ইতিমধ্যেই তারা ইসরায়েলের চারটি অ্যাপাচি হেলিকপ্টার ভূপাতিত করেছে। ১৯৯৩ সালে এ ধরনের অভিযান চালাতে গিয়ে সোমালিয়ার মোগাদিশুতে দুটি মার্কিন হেলিকপ্টার ভূপাতিত হয়েছিল। ওই ঘটনা নিয়ে পরে ‘ব্ল্যাক হক ডাউন’ নামে একটি সিনেমাও রয়েছে।
পঞ্চমত, ইসরায়েলি সেনারা যদি সর্বাত্মক আক্রমণের জন্য গাজা উপত্যকায় প্রবেশ করে তাহলে সমান ক্ষতি এবং বেসামরিক হতাহতের সংখ্যা সীমিত রাখা কঠিন হয়ে যাবে। এমনিতেই ইসরায়েলি বাহিনীর ওপর আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠছে বিভিন্ন মহল থেকে।
ইসরায়েলের রাজনৈতিক নেতারা এই বিষয়গুলোর কথা চিন্তা করেই হয়তো স্থল অভিযানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।