আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিতে আবারও উত্তেজনার সঞ্চার হয়েছে যখন ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা ইসরায়েলের দিকে দুটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। শুক্রবার ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা একটি ক্ষেপণাস্ত্র সফলভাবে প্রতিহত করেছে এবং দ্বিতীয়টিরও প্রতিরোধ প্রক্রিয়া চলছে।
Table of Contents
ইসরায়েল লক্ষ্য করে হুথিদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
ইসরায়েল সর্বশেষ হামলার খবর নিশ্চিত করেছে এবং জানিয়েছে যে, প্রথম ক্ষেপণাস্ত্রটি প্রতিরোধ করা হয়েছে এবং দ্বিতীয়টি এখনও তদন্তাধীন। হুথি মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারি জানিয়েছেন, তারা একটি হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে এবং লক্ষ্যবস্তু সফলভাবে আঘাত করেছে। এই হামলাটি রামাত ডেভিড বিমানঘাঁটি এবং তেল আবিব এলাকাকে লক্ষ্য করে পরিচালিত হয়।
এই সামরিক পদক্ষেপটি এমন এক সময়ে হয়েছে যখন গাজায় ইসরায়েলি অভিযান চলমান রয়েছে এবং সেখানে শত শত নিরীহ মানুষ নিহত হয়েছে। হুথিরা দাবি করেছে, যতক্ষণ না গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত তারা ইসরায়েল ও পশ্চিমা মিত্রদের ওপর হামলা চালিয়ে যাবে।
মধ্যপ্রাচ্যের সাম্প্রতিক উত্তেজনা এবং আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী পিট হেগসেথ ঘোষণা দিয়েছেন যে, USS Harry S. Truman ক্যারিয়ার স্ট্রাইক গ্রুপের মধ্যপ্রাচ্যে মোতায়েন আরও এক সপ্তাহ বাড়ানো হয়েছে। এর ফলে এই অঞ্চলে দুইটি স্ট্রাইক গ্রুপ সক্রিয় থাকবে।
হুথি নিয়ন্ত্রিত ইয়েমেনে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক হামলাগুলো শুধু অবকাঠামো নয়, বরং হুথি নেতৃত্বের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের উপরও বিস্তৃত হয়েছে। মার্চ মাসে যুক্তরাজ্যভিত্তিক পর্যবেক্ষক Airwars জানিয়েছে, অন্তত ২৭ থেকে ৫৫ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে এবং এপ্রিল মাসে এই সংখ্যা আরও বেড়েছে।
রস ইসা বন্দরে এপ্রিলের এক হামলায় অন্তত ৮০ জন নিহত হয়েছে এবং ১৫০ জনেরও বেশি আহত হয়েছে। হুথি মিডিয়া জানিয়েছে, সোমবার রাতে আফ্রিকান অভিবাসীদের উপর এক হামলায় ৬৮ জন নিহত হয়েছে।
জাতিসংঘ এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এই বেসামরিক হতাহতের ঘটনা নিয়ে। জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক বলেন, “আমরা সব পক্ষকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন মেনে চলার আহ্বান জানাচ্ছি।”
ইসরায়েল-হুথি সংঘর্ষে ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা
এই সংঘর্ষের ফলে মধ্যপ্রাচ্যে সামগ্রিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। হুথিদের ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা, বিশেষ করে হাইপারসনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, ইসরায়েল ও এর মিত্রদের জন্য একটি বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। হুথিদের দাবি অনুযায়ী, তারা মার্কিন ও ব্রিটিশ জাহাজগুলোকেও লক্ষ্যবস্তু করছে এবং এই অবস্থা চলতে থাকলে আন্তর্জাতিক জলপথ ও বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
ইসরায়েলের নিরাপত্তা প্রস্তুতি
ইসরায়েল প্রতিক্রিয়া হিসেবে তার আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আরও জোরদার করেছে এবং সম্ভাব্য হুমকির বিরুদ্ধে সক্রিয় নজরদারি বাড়িয়েছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কূটনৈতিক আলোচনা জোরদার করা হচ্ছে যাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
মানবিক বিপর্যয় ও আন্তর্জাতিক সহায়তার প্রয়োজন
গাজায় চলমান ইসরায়েলি অভিযানের ফলে স্বাস্থ্যসেবা, খাদ্য এবং আশ্রয়ের মারাত্মক সংকট দেখা দিয়েছে। মানবিক সংস্থাগুলো এই মুহূর্তে জরুরি সহায়তা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে। একই সঙ্গে ইয়েমেনেও ক্রমবর্ধমান মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
FAQs
- ইসরায়েলের দিকে হুথিদের হামলার কারণ কী? হুথিরা দাবি করছে তারা ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়াতে এই হামলা চালাচ্ছে। তারা বলেছে যতক্ষণ না গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি হয়, হামলা চলবে।
- এই হামলায় ইসরায়েলের ক্ষয়ক্ষতি কী? ইসরায়েল দাবি করেছে প্রথম ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করা হয়েছে, দ্বিতীয়টির ফলাফল এখনো পর্যালোচনাধীন।
- হুথিদের ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি কতটা উন্নত? হুথিরা হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে বলে দাবি করেছে, যা প্রযুক্তিগত দিক থেকে বেশ উন্নত।
- আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কী প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে? জাতিসংঘ এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলো বেসামরিক হতাহতের জন্য গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং সব পক্ষকে সংযমের আহ্বান জানিয়েছে।
- মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা পরিস্থিতি কেমন? বর্তমান পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। একদিকে গাজা ও অন্যদিকে ইয়েমেনে উত্তেজনা মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।