আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস নেতাদের পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন করার ঘোষণা দিয়েছেন ইসরায়েল। ইসরায়েলের নেতারা সেইসঙ্গে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, গাজা আগে যা ছিল সেই অবস্থায় আর কখনো ফিরে যাবে না।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, প্রতিটি হামাস সদস্য একজন মৃত ব্যক্তি। ইতিমধ্যে গাজায় স্থল, আকাশ ও নৌ পথে হামলার ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েল। গাজার সম্ভাব্য অভিযানের নাম দিয়েছে ইসরায়েল- দ্যা অপারেশন সোর্ডস অফ আয়রন। ধারণা করা হচ্ছে, গাজার ইতিহাসে যত সামরিক পরিকল্পনা এর আগে হয়েছে, এটি হবে তার যেকোনটির চেয়ে অনেক বেশি জোরালো অভিযান।
গাজা উপত্যকায় স্থল অভিযান মানে হলো, শহরের ঘরে ঘরে লড়াই, যা বেসামরিক নাগরিকদের জীবন ভয়াবহ ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলতে পারে। ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্স বা আইডিএফ হারজি হালেভি হামাসকে ‘বিলুপ্ত’ করে দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন এবং এর একজন নেতাকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করেছেন।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর বেতারের সামরিক বিশ্লেষক আমির বার শালম বলেছেন, ইসরায়েল হামাসের সব সদস্যকে বিলুপ্ত বা অকার্যকর করা সম্ভব হবে বলে মনে করি না। কিন্তু আপনি তাদের দুর্বল করতে পারেন যাতে করে এর কোন অভিযান চালানোর সক্ষমতা না থাকে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেঃ কর্নেল জোনাথন কনরিকাস বলেছেন, যুদ্ধের পর কোনো ইসরায়েলি নাগরিককে হত্যা বা হুমকির সামরিক সক্ষমতা আর হামাসের থাকবে না। ইসরায়েলের আক্রমণের জন্য প্রস্তুত থাকবে হামাসের সামরিক শাখা আল কাশাম ব্রিগেড। বিভিন্ন জায়গায় বিস্ফোরক বসানো হবে। সেট করা হবে অ্যামবুশ। গাজার বিস্তৃত টানেল নেটওয়ার্ক ইসরায়েলি সৈন্যদের ওপর হামলায় ব্যবহৃত হবে।
ইসরায়েল এবার সতর্ক করে বলেছে যুদ্ধ কয়েক মাস স্থায়ী হতে পারে। তারা রেকর্ড সংখ্যক ৩ লাখ ৬০ হাজার রিজার্ভ সেনাকে জড়ো করেছে। ইসরায়েলের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা বিষয়ক সাংবাদিক ইয়সি মেলমান বলেছেন, সরকার ও সামরিক বাহিনী মনে করছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তাদের সঙ্গে আছ- বিশেষ করে পশ্চিমা নেতারা। এখন চিন্তা হলো অবস্থান সংহত করো, আমাদের হাতে অনেক সময় আছে।
ইসরায়েলের ইন্সটিটিউট ফর ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্টাডিজের অফির উইন্টার বলছেন, গাজায় ইসরায়েলি সামরিক অভিযান যত বাড়বে, মিশরও তত বেশি চাপে পড়বে এটা প্রমাণের জন্য যে তারা ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছেনা।
এখন যদি হামাস ব্যাপকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে তাহলে প্রশ্ন উঠবে যে তার জায়গায় কী হবে। ইসরায়েল ২০০৫ সালে তার সামরিক বাহিনী ও হাজার হাজার বসতি স্থাপনকারীকে সেখান থেকে সরিয়ে নিয়েছিল গাজা উপত্যকা থেকে এবং দখলদার বাহিনী হিসেবে সেখানে ফিরে যাওয়ার পরিকল্পনা তাদের নেই।
অফির উইন্টার মনে করেন, ক্ষমতার পালাবদল ক্রমশ ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষকে সেখানে ফিরিয়ে আনার পথ তৈরি করবে। হামাস তাদের ২০০৭ সালে বিতাড়িত করেছিল। এই কর্তৃপক্ষ এখন পশ্চিম তীরের একাংশ পরিচালনা করে। তার মতে মিশরও আরও বাস্তববাদী প্রতিবেশীকে স্বাগত জানাবে।
গাজার ধ্বংস হওয়া অবকাঠামো আবারো আগের মতো পুনঃনির্মাণ করতে হবে। ইসরায়েলে হামাসের হামলার আগে গাজায় প্রবেশে বেশ কড়াকড়ি ছিলো। এখন ইসরায়েল আরও বেশি কড়াকড়ি আরোপ করতে পারে।
শিনবেত সিকিউরিটি সার্ভিসের সাবেক একজন প্রধান ইয়োরাম কোহেন বলছেন প্রায় দু কিলোমিটারের ‘দেখা মাত্র গুলির’ এলাকাটি প্রতিস্থাপন করতে হবে। তবে যুদ্ধের ফল যাই হোক না কেন, এবারের মতো হামলা যেন আর কখনো না হয় সেটিই নিশ্চিত করতে চাইবে ইসরায়েল।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।