জুমবাংলা ডেস্ক : বিভিন্ন মন্ত্রীর একাধিকবার প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও ভারত থেকে একটি পেঁয়াজও আমদানি হয়নি। এর আগে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এমনকি অর্থমন্ত্রীও বলেছিলেন, রোজার আগেই ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হবে। কিন্তু বাস্তবে তার কোনো কিছুই ঘটেনি। এখন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলছেন, বর্তমানে ভারতে কত দাম দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি করা হবে তার দর কষাকষি চলছে।
এ দিকে, রমজান উপলক্ষে দেশে আমদানি করা খেজুরের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এতে অতি সাধারণ মানের খেজুর প্রতি কেজি ১৫০ থেকে ১৬৫ টাকা, বহুল ব্যবহৃত জাইদি খেজুরের দাম ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
গতকাল (মঙ্গলবার) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক চিঠিতে দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি ও বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনকে পাঠানো এক চিঠিতে দাম নির্ধারণের বিষয়টি জানানো হয়।
চিঠিতে নির্ধারিত মূল্যে খেজুর বিক্রির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়ে বলা হয়েছে, দেশে আমদানিকৃত বিভিন্ন খেজুরের আমদানি মূল্য, আরোপিত শুল্ক ও করাদি এবং আমদানিকারকদের অন্যান্য খরচ বিশ্লেষণ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় খেজুরের মানভিত্তিক যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করেছে।
খেজুরের অতিরিক্ত দাম নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, ধর্মীয় অনুভূতি নিয়ে কথা বলার দরকার নেই। এটা যার যার ব্যাপার। যে যেটা দিয়ে ইচ্ছা ইফতার করবেন। আমাদের চেষ্টা, বস্তার খেজুরটার শুল্ক কমানো হয়েছে। আমরা উঁচু জাতের দামি খেজুরের শুল্ক কমাইনি। সাধারণ মানুষ যেটা খায়, সেটার দাম কমাতে চিঠি দেয়া হয়েছে।
ভারতের পেঁয়াজের দাম নিয়ে আলোচনা চলছে : এ দিকে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন পাওয়া গেছে, এখন দাম নিয়ে আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু।
গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে বাংলাদেশ-জাপান ইকোনমিক পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট (ইপিএ) নিয়ে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের বাধা আমি চাইলেই সব কিছু নিরসন করতে পারি না। তবে আমাদের উদ্যোগ ও চেষ্টা আছে। পেঁয়াজ রফতানিতে মার্চ পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ভারত, তারপরও তারা রাজি হয়েছে। সামনে তাদের দেশে নির্বাচন, সেটাও দেখতে হবে। তাদের ভোক্তা আছে, সেটা মাথায় রাখতে হবে। সব কিছু বিবেচনা করে ৫০ হাজার টন পেঁয়াজের অনুমোদন আমরা পেয়েছি। তিনি জানান, ভারতে পেঁয়াজের শুদ্ধ বাংলাদেশের জন্য ৮০০ ডলার, আর যুক্তরাজ্যের জন্য ১২০০ ডলার। পেঁয়াজের দাম কমাতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ভারতীয় ব্যবসায়ীদের সাথে তিনদিন ধরে নিয়মিত যোগাযোগ করছেন, আলোচনা করছেন। দু-এক দিনের মধ্যে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। হয় আমরা সরকারিভাবে জিটুজি আনবো অথবা আমদানিকারকদের অনুমোদন দেবো। যত দ্রুত সম্ভব বাজারে যাতে স্বস্তি ফিরিয়ে আনা যায়, সেই চেষ্টা করবো।
চিনির মূল্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে এর দাম ঊর্ধ্বমুখী। আমরা চাচ্ছি, চিনির দাম মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনতে। যে দাম আমরা নির্ধারণ করে দিয়েছি, রমজান মাসে দাম তাই থাকবে। খোলাবাজারের চিনির সর্বোচ্চ মূল্য ১৪০ টাকার বেশি হবে না। ব্যবসায়ীরা আমাদের কথা দিয়েছেন, তাদের যথেষ্ট মজুদ আছে। প্যাকেটজাত চিনির দামও ১৪৫ থেকে ১৪৬ টাকার বেশি হবে না। সেটা আমরা নিশ্চিত করতে পেরেছি। রমজানে চিনির দাম বাড়ার কোনো সুযোগ নেই।
প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, চিনি আমদানিতে ভারতের সাথেও আমাদের কথা চলছে। সেখানেও অগ্রগতি হতে পারে। দাম সব জায়গায়ই বেশি। আমি যদি ডলারে কনভার্ট করে বাণিজ্যিক ভিত্তিতেও চিনি আমদানি করি তাহলেও দাম কম পড়বে না। পাঁচ টাকা হয়তো এদিক- ওদিক হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাজারে চিনি, ডালসহ কোনো নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের স্বল্পতা বা সঙ্কট নেই। কাজেই এটিকে আমি অবশ্যই স্বস্তি বলবো। তিনি বলেন,
বাজারে চালে স্বস্তি আছে বলে আমি মনে করি। এ ক্ষেত্রে আমি কোনো অস্থিরতা পাইনি, আপনাদের কাছ থেকে কোনো অভিযোগও পাইনি। তেলের মূল্য ১৭৩ টাকা থেকে ১৬৩ টাকা আমরা নির্ধারণ করে দিয়েছি। খোলাবাজারে ১৪৯ টাকায় তেল বিক্রি হচ্ছে। বাজারে যাতে সরবরাহ ঠিক থাকে, সেটা আমরা নিশ্চিত করছি।
বাজারে লেবুর দাম ২০ টাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের কিছু মৌসুমি পণ্য আছে। লেবু একটি মৌসুমি পণ্য। কৃষিপণ্যগুলো মৌসুমি হয়। কৃষি উৎপাদিত পণ্য কৃষি বিপণন বিভাগ দেখে। আমরা বাজার তদারকি করি। কৃষি বিপণন অধিদফতরে বিষয়টি নিয়ে আমি কথা বলেছি। কৃষিমন্ত্রী, কৃষি সচিব ও জনপ্রশাসনের সাথে কথা বলেছি, যাতে তারা সক্রিয় ভূমিকা পালন করে।
প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, যারা উৎপাদন করছেন, সেখানে পরিবহন ব্যবস্থা আছে। পরিবহন ব্যবস্থা থেকে পাইকারি বাজার আছে। এগুলো আরো ভালো করার সুযোগ আছে। ছয়-সাত টাকার লেবু, ঢাকায় এসে ২০ টাকা হয় কেন? এটাই ভ্যালু চেইন, সাপ্লাই চেইনে আরো উন্নত করার জায়গা। এটা কি পরিবহনের কারণে বাড়ছে, নাকি আরো কোনো বাধা-বিপত্তি আছে? আর কোনো প্রতিবন্ধকতা আছে। আসার সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে কথা বলে এসেছি, পরিবহনের জায়গাটা যাতে স্বচ্ছ
থাকে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তিনটি কাজ। শুল্ক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আমদানি পণ্যের বাজারে বিতরণ নিশ্চিত করা। পণ্য আমদানি কিংবা উৎপাদন আমাদের কাজ না। দ্বিতীয় হলো, শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন যেসব পণ্য এখানে উৎপাদিত হচ্ছে, যেমন তেল, চিনিসহ অন্যান্য জিনিস, সেগুলোর বাজারে সরবাহ যাতে মসৃণ থাকে। অনেকেই আমাদের বাজারে যাওয়াটা লক্ষঝক্ষ মনে করছেন। কেউ মনে করছেন, নতুন আসছেন শিখতে, শিক্ষানবিস হিসেবে দেখছেন। আমরা এ সমালোচনাকে গুরুত্ব দিই না, আমরা নিজেদের চেষ্টার বিষয়টি দেখি। সামাজিক মাধ্যমে ট্রল হচ্ছে, আগে কি সাপ্লাই চেইন ছিল না? আমি কখনোই বলিনি, সাপ্লাই চেইন ছিল না, ভ্যালু চেইন ছিল না। এই ভেল্যু চেইনের উপকরণগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে। সূত্র : বিবিসি বাংলা
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।