জুমবাংলা ডেস্ক : এখনও মেরামত কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি ঘূর্ণিঝড় রিমালে ক্ষতিগ্রস্ত সাগরে ভাসমান এলএনজি টার্মিনালটির। যদিও চলতি মাসের মধ্যে সচল করে তা থেকে গ্যাস সরবরাহ করা হবে বলে জানিয়েছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। এটি সচল করতে আরও প্রায় ১০ দিন সময় লাগতে পারে। টার্মিনালটি সচল না হওয়া পর্যন্ত দেশে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হচ্ছে না। গভীর সমুদ্রে এর মেরামত কাজ চলমান রয়েছে। আবহাওয়া খারাপ হওয়ায় টার্গেট অনুযায়ী মেরামত কাজ চালানো সম্ভব হয়নি। মেরামত শেষ করে এটি সচল করতে আরও ৮ থেকে ১০ দিন লাগতে পারে। সে হিসাবে আগস্ট মাসের ১০ তারিখের আগে দেশে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হচ্ছে না। পেট্রোবাংলা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্রে জানা গেছে, দেশে দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল থেকে দৈনিক ১১০ কোটি ঘনফুটের মতো গ্যাস সরবরাহ করা হয়। এর একটি এক্সিলারেট এনার্জির, অন্যটি সামিটের। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে জাতীয় গ্যাস গ্রিডের আনোয়ারা-ফৌজদারহাট ৪২ ইঞ্চি পাইপলাইন দুর্ঘটনায় ছিদ্র হয়ে যায়। জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ায় অলস বসে থাকে এক্সিলারেট এনার্জির টার্মিনালটি। এতে প্রায় ৩৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ কমে যায়। তিন দিন পর এটি থেকে গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়। বর্তমানে ৬০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। এর আগে ঘূর্ণিঝড় রিমালে গত ২৬ মে সামিটের এলএনজি টার্মিনালটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে ৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এর মেরামত দেশে সম্ভব না হওয়ায় পাঠানো হয় সিঙ্গাপুরে। সেখান থেকে মেরামত শেষে দেশে ফেরে গত ১০ জুলাই। গত ১৭ জুলাই এটি দিয়ে এলএনজি সরবরাহ করার কথা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। কারণ টার্মিনালটি নোঙর করার জন্য যে রশি বা চেইন ব্যবহার করা হয় সেটি ছিঁড়ে যায়। তখন জানানো হয় চলতি মাসের ২৯ বা ৩০ তারিখে এটি সচল হবে। এটি থেকে গ্যাস সরবরাহ শুরু হলে ১১০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হবে। তখন দেশে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হবে। কিন্তু সেই লক্ষ্য পূরণ করতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গ্যাসের সংকট কাটাতে এলএনজি আমদানি বাড়ানোর সুযোগ নেই। কারণ এলএনজি টার্মিনালের সক্ষমতা ১১০ কোটি ঘনফুট। সরবরাহ বাড়ানোর আগে সক্ষমতা বাড়াতে হবে। এতে ২ থেকে ৩ বছর লাগবে।
পেট্রোবাংলার ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যানুযায়ী, সোমবার ২৬০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়েছে। এর মধ্যে এলএনজি মাত্র ৬০ কোটি ঘনফুট। আর দেশীয় কূপ থেকে উত্তোলন করে সরবরাহ করা হয়েছে ২০০ কোটি ঘনফুট। বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে চাহিদা ২৩০ কোটি ঘনফুট, সরবরাহ করা হয়েছে ৯৬ কোটি ঘনফুট। সরবরাহ কম হওয়ায় কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখতে হচ্ছে। দেশে গ্যাসের দৈনিক চাহিদা ৪০০ কোটি ঘনফুট ছাড়িয়েছে। সে হিসাবে ১৪০ কোটি ঘনফুটের মতো ঘাটতি রয়েছে। সামিটের এলএনজি টার্মিনাল থেকে ৫০ কোটি ঘনফুট সরবরাহ শুরু হলেও ১১০ কোটি ঘনফুটের মতো ঘাটতি থেকেই যাবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সোমবার বিকালে পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মাইনস) প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান খান বলেন, দিন দিন দেশে গ্যাসের চাহিদা বাড়ছে। সেই অনুপাতে সরবরাহ বাড়ছে না। তাই সংকট রয়ে যাচ্ছে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সরবরাহ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত এলএনজি টার্মিনালটি গভীর সমুদ্রে মেরামত করা হচ্ছে। খারাপ আবহাওয়ার কারণে গত কয়েক দিন কাজ করা সম্ভব হয়নি। এটি সচল করতে আরও ৭-৮ বা ১০ দিন সময় লাগতে পারে।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জ্ঞানেন্দ্রনাথ সরকার বলেছেন, আমরা এখন ১১০ কোটি ঘনফুট গ্যাস আমদানি করে সরবরাহ করছি। ঘূর্ণিঝড় রিমালে সামিটের এলএনজি টার্মিনালটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেটি সিঙ্গাপুর থেকে মেরামত শেষে গত ১০ জুলাই দেশে এসেছে। এটি দিয়ে গত ১৭ জুলাই গ্যাস সরবরাহ শুরু করার টার্গেট ছিল। কিন্তু টার্মিনালটি নোঙর করার যে রশি সেটি ছিঁড়ে গেছে। এটি থেকে সরবরাহ শুরু হলে সংকট অনেকটাই কেটে যাবে। এ ছাড়া নতুন নতুন কূপ খনন করে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোর কাজ চলমান রয়েছে।
তিনি বলেন, গত সপ্তাহে জাতীয় গ্যাস গ্রিডের আনোয়ারা-ফৌজদারহাট ৪২ ইঞ্চি পাইপলাইন দুর্ঘটনায় ছিদ্র হয়ে যায়। দুদিনের মধ্যে তা মেরামত করে সরবরাহ শুরু করা হয়েছে। শিল্পের গ্রাহকদের সর্বোচ্চ গ্যাস সরবরাহ করার চেষ্টা করে যাচ্ছে পেট্রোবাংলা।
প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, ক্ষতিগ্রস্ত এই টার্মিনাল গ্যাস সরবরাহে যুক্ত না হওয়ায় সংকট এখনও কাটেনি। এখন ৭০০ এমএমসিএফডি গ্যাস কম আসছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।