আন্তর্জাতিক ডেস্ক : কতজন অভিবাসী কাজের ভিসায় ইতালিতে যেতে পারবেন সেটি নিয়ে প্রতি বছর ডিক্রি জারি করে দেশটির সরকার। ইউরোপের বাইরের দেশগুলো অর্থাৎ তৃতীয় বিশ্বের দেশ থেকে অদক্ষ শ্রমিক ভিসা ও স্টার্টআপ ভিসায় ইতালিতে আসতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের সংখ্যা নির্ধারণ করে এই ডিক্রি জারি করা হয়েছে। ২০২৩ সালের জন্য এই সংখ্যা সাত হাজার বাড়ানো হয়েছে। প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি এই নিয়মে ইতালি যাওয়ার জন্য চেষ্টা করেন।
‘দেক্রেতো ফ্লুসি’ নামে পরিচিত এই বিজ্ঞপ্তিতে রোম কর্তৃপক্ষ এ বছরের জন্য সিজনাল বা মৌসুমি ভিসা এবং স্পনসর ভিসায় আসতে ইচ্ছুকদের জন্য ওয়ার্ক পারমিটের মোট সংখ্যা সাত হাজার বৃদ্ধি করে ৮২ হাজার ৭০৫-এ উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
দেশটির সরকারের মতে, এই পদক্ষেপটি ওয়ার্ক পারমিট কোটা বাড়িয়ে সারা দেশে শ্রমিক ঘাটতি মোকাবেলা করতে সহায়তা করবে। ওয়ার্ক পারমিট নির্দিষ্ট সেক্টরগুলোতে আবেদনকারীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। তবে ওয়ার্ক পারমিটের এই কোটা সুবিধা হাই স্কিল্ড বা দক্ষ বিদেশিদের জন্য প্রযোজ্য নয়।
যা আছে ডিক্রিতে
ইতালির শ্রম ও সামাজিক পরিকল্পনা বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রকাশিত এই ডিক্রি অনুযায়ী, এই বছরের জন্য ওয়ার্ক পারমিটের অধীনে ৪৪ হাজার কোটা মৌসুমি বা সিজনাল কাজের জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়েছে। এই খাতে সবচেয়ে বেশি আবেদন জমা পড়ে কৃষিখাতে।
অন্যদিকে, ২০২৩ সালে ৩৮ হাজার ৭০৫টি কোটা নন-সিজনাল বা স্পন্সর ভিসার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। স্পনসর ভিসা পর্যটন, টেলিযোগাযোগ এবং নির্মাণ খাতে আবেদন করতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের জন্য সংরক্ষিত।
নন-সিজনাল ভিসার ওপরে উল্লিখিত সংখ্যার মধ্যে সাত হাজার কোটা ইতালি বা ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে অবস্থানরতদের জন্য রাখা হয়েছে। এক্ষেত্রে ইতালিতে অবস্থানরত যারা তাদের রেসিডেন্স পারমিট নবায়ন করতে চান তারা এবং ইইউর কোনো দেশে থেকে যারা আবেদন করতে চান তারা আবেদনের সুযোগ পাবনে।
সর্বশেষ ৫০০টি কোটা রাখা হয়েছে স্ব-নিযুক্ত ব্যক্তি বা স্টার্ট-আপ ভিসার আওতায় ইতালিতে আসতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের জন্য। এই ক্যাটাগরিতে মালিক, উদ্যোক্তা, বিশিষ্ট শিল্পী, সিইও, অডিটর এবং কমপক্ষে তিন বছর ধরে কোন একটি ইতালীয় কম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হিসেবে আছেন এমন ব্যক্তিদের জন্য স্টার্ট আপ ভিসা প্রযোজ্য।
আবেদনে নতুন সংযোজন
২০২২ সালের তুলনায় চলতি বছরের ‘দেক্রেতো ফ্লুসিতে’ একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ও নিয়ম যুক্ত করা হয়েছে। নতুন নিয়মের ফলে ২০২৩ সাল থেকে যেসব ব্যবসায়ীরা বিদেশ থেকে নন-সিজনাল ভিসায় শ্রমিক আবেদন করবেন তাদেরকে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের কর্মসংস্থান কেন্দ্রের অনুমোদন লাগবে।
তবে সিজনাল বা মৌসুমি ভিসায় আসতে ইচ্ছুকদের জন্য এই নিয়মটি প্রযোজ্য নয়।
সক্রিয় শ্রম নীতির জন্য নির্ধারিত ইতালির জাতীয় সংস্থা (আনপাল) তাদের ওয়েবসাইটে জানিয়েছে, একজন ব্যবসায়ীর যদি তার ব্যবসার জন্য নন-সিজনাল খাতে বা স্পন্সর ভিসায় শ্রমিক আনতে চান, সেক্ষেত্রে উক্ত পদের জন্য সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে শ্রমিক ঘাটতি আছে বা যোগ্য কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না এটি প্রমাণ করতে হবে।
এই প্রক্রিয়ার জন্য একজন ব্যবসায়ীকে স্থানীয় কর্মসংস্থান কেন্দ্রে ‘স্টাফ রিকুয়েস্ট’ নামে একটি আবেদন করতে হবে। পরবর্তীতে উক্ত কেন্দ্র থেকে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত দিলে তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে আবেদন করতে পারবেন। তবে কিছু ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত অমান্য করার সুযোগ রয়েছে। বিশেষ করে কর্মসংস্থান কেন্দ্র যদি আবেদনের ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে উত্তর না দেয় এবং কোনো পদের জন্য তাদের পাঠানো কর্মচারী যদি অযোগ্য হয় সেক্ষেত্রে এই কেন্দ্রের সত্যায়ন প্রযোজ্য হবে না।
মূলত প্রকৃত শ্রমিক ঘাটতিতে থাকা ব্যবসায়ীদের সনাক্ত করা এবং ভিসা ব্যবসার মাধ্যমে অবৈধ অভিবাসন বন্ধে এ উদ্যোগ নিয়েছে ইতালির নতুন কট্টর ডান জোট সরকার। অতীতে অনেকেই সব ভিসায় লোক এনে পরবর্তীতে কাজে যোগ না দেওয়ায় সেটি অনিয়মিত অভিবাসীর সংখ্যা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
সর্বাবস্থায় একজন আবেদনকারীকে ইতালির সরকারি বেতন কাঠামো এবং থাকা-খাওয়াসহ যাবতীয় খরচ সম্পর্কে অবগত হয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ। বিপুল অংকের অর্থের বিনিময়ে ভিসার প্রস্তাব দেওয়া নিয়োগকর্তারা অনেক ক্ষেত্রেই অসাধু ব্যবসায়ী হয়ে থাকেন।
আবেদনের করতে পারবেন বাংলাদেশিরাও
দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশিরা ‘দেক্রেতো ফ্লুসির’ আওতায় আবেদন করে ইতালিতে যাচ্ছেন। চলতি বছরও বাংলাদেশিরা আবেদন করতে পারবেন। বাংলাদেশ ছাড়াও দক্ষিণ এশিয়ার ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার নাগরিকরাও আবেদনযোগ্য দেশের তালিকায় আছে।চ
ডিক্রিটি গ্যাজেট আকারে প্রকাশিত হয় ২৬ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখে। প্রকাশিত গেজেট অনুযায়ী, সিজনাল, নন-সিজনাল ওয়ার্কার, স্টার্ট আপ ভিসায় ইতালিতে আসতে আগ্রহীরা ৩০ জানুয়ারি থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত সরকারের নির্দিষ্ট দপ্তরে অনলাইনে প্রাক-আবেদন শুরুর সুযোগ পাবেন। আবেদনের জন্য নির্ধারিত ওয়েবসাইটটি সপ্তাহের সাত দিন সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।
প্রাক-আবেদনের পর পূর্ণাঙ্গ আবেদন পাঠানো যাবে ২৭ মার্চ থেকে। কারণ আইন অনুযায়ী ডিক্রি গ্যাজেট হিসেবে প্রকাশ হওয়ার ৬০ দিনের মাথায় পূর্ণাঙ্গ আবেদন জমা নেওয়ার বিধান রয়েছে।
এবার ডিক্রিতে প্রথমবারের মতো উল্লেখ করা হয়েছে, আবেদনগুলো জমা দেওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে প্রক্রিয়াকরণ করা হবে এবং সিদ্ধান্তটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নিজ দেশের ইতালীয় কূটনৈতিক মিশনে পাঠানো হবে। যেখান থেকে সফল প্রার্থীদের ভিসা ইস্যু করা হবে।
কোটা শেষ না হওয়া সাপেক্ষে ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই প্রক্রিয়ায় আবেদনের সুযোগ রয়েছে।
কইতালি তুস্কানি অঞ্চলে অভিবাসী এবং কৃষি নামে একটি সংস্থার পরিচালিত একটি প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, অঞ্চলটিতে কৃষি খাতে প্রায় ২৪ হাজার অভিবাসী শ্রমিক নিযুক্ত রয়েছে।
প্রতিবেদন অনুসারে, ইতালিতে শ্রমিক ঘাটতি মোকাবেলায় অভিবাসী শ্রমিকদের ভূমিকা বেশি। আগামী বছরগুলিতে এটি আরও বাড়তে পারে।
সরাসরি আবেদনের কোনো সুযোগ নেই
বরাবররে মতো ইতালি বা যে কোনো দেশে কর্মী নিয়োগের সার্কুলার দেওয়া হলে বাংলাদেশ থেকে আগ্রহী বেশিরভাগ আবেদনকারী সাধারণত বেসরকারি এজেন্সিগুলোতে ভিড় করেন। কিন্তু এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে মধ্যপ্রাচ্য বা অন্যান্য দেশগুলোর মতো ইতালিতে চাইলেই কোনো এজেন্সির মাধ্যমে আবেদন করা যায় না।
কৃষি, হোটেল-রেস্তোরাঁ, নির্মাণ খাতসহ সার্কুলারে তালিকাভুক্ত খাতগুলোতে মৌসুমি ও স্পন্সর উভয় ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন একমাত্র নিয়োগকর্তা। অর্থাৎ, ইতালিতে কৃষি বা অন্যান্য খাতে ব্যবসা করছেন এমন কোনো মালিক যদি তার প্রতিষ্ঠানের জন্য কর্মীর প্রয়োজন হয়, সেক্ষেত্রে তিনি আবেদনকারীর বিস্তারিত তথ্য ও যাবতীয় সরকারি নিয়ম অনুসরণ করে সরকারের নির্দিষ্ট দপ্তরে আবেদন করবে।
সূত্র : ইনফোমাইগ্র্যান্টস
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।