খেলাধুলা ডেস্ক : ‘ইটস জাকের আলী শো… সুপারস্টার ইন দ্য মেকিং…’ জাকিরের ইনিংস দেখে এভাবেই বলছিলেন ধারাভাষ্যকার নিখিল উত্তামচান্দানি। পুরো ম্যাচে কিংসটাউনের আর্নোস ভ্যালিতে আনন্দ ছড়িয়েছেন জাকের আলী অনিক। গ্যালারিতে বসা ক্যারিবীয় সমর্থকরা প্রতিপক্ষ ব্যাটার জাকেরের এক একটি বাউন্ডারি প্রাণভরে উপভোগ করেছেন। সেন্ট ভিনসেন্টে বসবাস করা দুই বান্ধবী সিরিজের শেষ ম্যাচটি দেখতে পার্টি স্ট্যান্ডে বসেছিলেন। নিজের দলের বোলাররা যখন মার খাচ্ছিলেন, মন ঠিকই খারাপ হচ্ছিল তাদের। কিন্তু টি-টোয়েন্টির আসল রসদ চার-ছক্কার তালে তালে ঠিকেই নাচছিলেন দুই তরুণী। জাকের আলীর ছক্কা-চারের আনন্দ কিংসটাউন থেকে পৌঁছৈ গেছে ১৪ হাজার ৮৮১ কি.মি. দূরে বাংলাদেশেও।
ম্যাচ শেষে হতে সবাই ড্রেসিংরুমে ঢুকে গেছে। কিছুক্ষণ পর পুরস্কার বিতরণী। ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক লিটন দাস মাঠে ঢুকেই জাকের আলীকে কোলে তুলে নিলেন। প্রায় ১৫ সেকেন্ডের মতো আকাশে উঠয়ে রাখলেন সতীর্থকে। লিটনের সামান্য এই কষ্ট করতে কোন সমস্যা ছিল না। কেননা ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার যে ক্ষত সেটাতো দূর করেছেন জাকের আলীই। তিন ম্যাচের মধ্যে দুটি ম্যাচেই তার ব্যাটিং ছিল প্রভাব ফেলার মতো। তাই লিটনের কাছে জাকেরই মহা নায়ক।
আর্নোস ভেলে স্টেডিয়াম দুই হাত ভরে দিয়েছে বাংলাদেশকে। তিন ম্যাচের সিরিজ শুরুর আগে এই মাঠে ৩ ম্যাচ খেলে বাংলাদেশের জয় ছিল দুটি। বাকি একটি ম্যাচও জিততে পারতো বাংলাদেশ, কিন্তু ব্যাটারদের ব্যর্থতায় হার মানতে হয়েছে। এই মাঠে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে তিন ম্যাচ সিরিজের তিনটি জিতে আর্নোস ভেলেতে বাংলাদেশের জয়ের পরিসংখ্যান এখন ৫-১। শুক্রবার ৮০ রানে হারিয়ে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো ওয়েস্ট ইন্ডিজকে টি-টোয়েন্টিতে হোয়াইটওয়াশের স্বাদ নিয়েছে। এর আগে বিভিন্ন দলকে ৫বার এই ফরম্যাটে হোয়াইটওয়াশ করার কীর্তি আছে। সবমিলিয়ে সংখ্যাটা দাঁড়ালো ছয়ে।
শুক্রবার কিংসটাউনের আর্নোস ভেলেতে টপ অর্ডার ব্যাটারদের ব্যর্থতার পর তাণ্ডব চলেছে শুধু জাকের আলীর। তার বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৮৯ রান। এর আগে ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোর ছিল ৫ উইকেটে ১৬৩ রান। ২০২২ সালে গায়ানার প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামে এই স্কোর করেছিল বাংলাদেশ। এদিন লিটন দাসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ২ বছর আগের রেকর্ডও ভেঙে ফেলেছে।
সফরকারী দল সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে একটি পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নেমেছিল। ইনজুরিতে শেষ ম্যাচে ছিটকে যাওয়া সৌম্য সরকারের পরিবর্তে একাদশে ফেরেন পারভেজ হোসেন ইমন। এমন একাদশ নিয়ে টস জিতে ব্যাটিং নিয়ে দারুণ শুরু করে বাংলাদেশ। ইমনের সঙ্গে ২৮ বলে ৪৪ রানের জুটি গড়েন লিটন। সাম্প্রতিক ব্যর্থতাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে লিটন অবশেষে ভালো শুরুর ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন। কিন্তু ১৩ বলে ১৪ রানে সাজঘরে ফিরে আবার হতাশ করেছেন তিনি। লিটনের ভক্ত ভারতীয় এক দর্শক। তার এমন পারফরম্যান্সে তিনিও হতাশ। আর্নোস ভেলেতে খেলা দেখতে দেখতে বললেন, ‘তোমাদের এই ক্রিকেটারের কী হয়েছে। এতো ভালো ব্যাটার। বড় বড় বোলারদের বিপক্ষে ও যেভাবে রান করেছে। এই সিরিজে দেখছি, কিছুই হচ্ছে না। আমার ধারণা ওর মাথায় সমস্যা আছে।’ ভারতীয় এই সমর্থকের মতো অনেকই সেটি মনে করেন। দারুণ প্রতিভাবান, স্কিলফুল ক্রিকেটার লিটন। কিন্তু মাঠে গিয়ে ব্যর্থ হচ্ছেন। অবিশ্বস্য বটেই!
দারুণ শুরুর বার্তা দিয়ে লিটন আউট হলে কিছুটা চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। একের পর এক উইকেট হারাতে থাকে সফরকারীরা। প্রথম দুই ম্যাচ জয়ের নায়ক শেখ মেহেদী হাসান ও শামীম হোসেন পাটোয়ারী রান আউট হলে দুশ্চিন্তা বাড়ে বাংলাদেশ শিবিরে। কিন্তু সেই দুশ্চিন্তা তুরি মেরে উড়িয়ে দেন জাকের আলী অনিক। মোহাম্মদ সালাউদ্দিন কোচ হওয়ার আগেই জাকেরকে নিয়ে কাজ করেছেন। জাকেরের ব্যাটিংয়ের উন্নতির মূল কারিগর সালাউদ্দিন।
শামীমের রান আউটের সময় ১৮ রানে থাকা জাকের আলী পরে তানজিম সাকিবকে নিয়ে ২৭ বলে ৫০ রানের জুটি গড়ে দলকে বড় স্কোরে নিয়ে গেছেন। এর মধ্যে সাকিবের অবদান ১২ বলে ১৭। আলজারি জোসেফের করা শেষ ওভারে ঝড় বইয়ে দেন জাকের। তোলেন ২৫ রান! তৃতীয়, চতুর্থ ও ষষ্ঠ বলে ছক্কা মেরে নিজের স্কোরকে নিয়ে গেছেন ৭২ রানে। তার এই ইনিংসে ভর করেই মূলত বাংলাদেশ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে রেকর্ড ১৮৯ রান তুলতে পারে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ১৯০ রানের লক্ষ্যটা কিছুটা কঠিই মনে হচ্ছিল। কেননা আগের দুই ম্যাচে মামুলি লক্ষ্যে যেভাবে খাবি খেয়েছে, সেই স্মৃতি তরতাজাই ছিল। শুক্রবার কঠিন লক্ষ্যে খেলতে নেমে প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলেই তাসকিন আহমেদের শিকার হন ব্র্যান্ডন কিং। এমন শুরুতেই মোড়ক লাগা। এর পর আর থিতু হতে পারেননি ক্যারিবীয় ব্যাটাররা। জনসন চার্লস ও রোমারিও শেফার্ড যা একটু লড়াই করেছেন। স্কোরবোর্ডে যথেষ্ট রান থাকা পরও বাংলাদেশের বোলাররা শুরু থেকেই নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেছেন। ক্যারিবীয় ব্যাটারদের বিন্দুমাত্র সুযোগ দেননি। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের বোলারদের দারুণ বোলিংয়ে ১৬.৪ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ১০৯ রানে অলআউট হয় স্বাগতিকরা।
ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সঙ্গে দেখা করবেন পুতিন
দলের হয়ে সেরা বোলিং করেছেন রিশাদ হোসেন। ২১ রানে তার শিকার তিনটি উইকেট। তাসকিন আহমেদ ও শেখ মেহেদী হাসান প্রত্যেকে দুটি করে উইকেট নিয়েছেন। তানজিম হাসান সাকিব ও হাসান মাহমুদ প্রত্যেকে নেন একটি করে উইকেট।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২০১৮ সালে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশ। ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জেতা বাংলাদেশ এবার আর হোয়াইটওয়াশের সুযোগ হাতছাড়া করেনি। বছরের শেষটা যেভাবে রাঙিয়েছে, ক্রিকেটপ্রেমীদের প্রত্যাশা সেই আত্মবিশ্বাস নিয়েই তারা নতুন বছরের সূচনা করবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।