জুমবাংলা ডেস্ক : সরবরাহ কম থাকার অজুহাতে হঠাৎ বেড়ে গেছে পেঁয়াজের দাম। চট্টগ্রামের পাইকারি মোকাম খাতুনগঞ্জেও দাম বাড়ছে এক সপ্তাহ ধরে। কেজিপ্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা দাম বাড়িয়ে গত এক সপ্তাহে পেঁয়াজ সিন্ডিকেট ভোক্তার পকেট থেকে হাতিয়ে নিয়েছে শতকোটি টাকা। চট্টগ্রাম, বেনাপোল, হিলি, সোনামসজিদ, ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি করা পেঁয়াজের সরবরাহ কমিয়ে দিয়ে প্রথম ধাপে দাম বাড়াচ্ছে আমদানিকারকরা। এর পরের ধাপে দাম বাড়াচ্ছে কমিশন এজেন্টরা। তৃতীয় ধাপে দাম বাড়াচ্ছে পাইকারি মোকামের ব্যবসায়ীরা। খুচরা বাজারে যেতে যেতে আরও দু-তিন দফায় বেড়ে যাচ্ছে দাম। সব মিলিয়ে ৬০ জনের মতো ব্যবসায়ী এ সিন্ডিকেটে জড়িত।
পেঁয়াজের এই সিন্ডিকেটে আছে ভোমরা স্থলবন্দরের ২০-২৫ জন, সোনামসজিদ স্থলবন্দরের ২০-২২ জন ও হিলি স্থলবন্দরের ১২-১৫ আমদানিকারক। গোয়েন্দা সংস্থা বলছে, এই চক্রে আছে খাতুনগঞ্জের ১০ থেকে ১২ জন বড় কমিশন এজেন্টও। সরবরাহ কম থাকার অজুহাতে এখন তারাই মিলেমিশে পেঁয়াজের দাম বাড়াচ্ছে।
এফবিসিসিআই প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম বলেন, ‘দেশে পেঁয়াজের দাম বাড়ার কথা ধীরে ধীরে। এখন যেভাবে হচ্ছে, তা অস্বাভাবিক। এখানে কারও কারসাজি থাকলে তাদের চিহ্নিত করা উচিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর।’
তবে খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিয়া মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস জানান, খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের কোনো আমদানিকারক নেই; আছে কমিশন এজেন্ট। বড় আমদানিকারকরা বেনাপোল, হিলি, সোনামসজিদ ও ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি করে। সরবরাহ কমার উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, খাতুনগঞ্জে স্বাভাবিকভাবে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ ট্রাক পেঁয়াজ আসে। এখন আসছে ১০ থেকে ১৫ ট্রাক পণ্য। প্রতিটি ট্রাকে ১৩ থেকে ১৪ টন পেঁয়াজ।
এক সপ্তাহে শতকোটি টাকা বাড়তি মুনাফা
ক্যাবের সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, পরিবহন ও রক্ষণাবেক্ষণ খরচ ১০ টাকা যোগ করলেও প্রতি কেজি আমদানি করা পেঁয়াজে খরচ হয় ৬০ থেকে ৭০ টাকা। কিন্তু খুচরা বাজারে পেঁয়াজের বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকা। এ হিসাবে প্রতি কেজি পেঁয়াজে লাভ হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। শুধু খাতুনগঞ্জে দৈনিক ১৫ ট্রাকে আসা দুই লাখ কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হলে বাড়তি লাভ হচ্ছে প্রায় সোয়া কোটি টাকা। সাত দিনে এটি দাঁড়ায় সাত কোটি টাকা। খাতুনগঞ্জ শুধু চট্টগ্রাম জেলার চাহিদা মেটায়। পুরো দেশের হিসাব টানলে মুনাফা ছাড়িয়ে যাবে শতকোটি টাকা।
তবে রাঘববোয়াল এবারও ধরাছোঁয়ার বাইরে। পেঁয়াজ কারসাজিতে আগে যাদের নাম এসেছিল, তাদের শাস্তি হয়নি। গত দুই বছরে কারসাজির সঙ্গে অনেকের জড়িত থাকার প্রমাণ পায় প্রশাসন। এমন এক সিন্ডিকেটে আছে খাতুনগঞ্জের হোসেন ব্রাদার্স ও মেসার্স সৌরভ এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স আল্লার স্টোর, মেসার্স আজমীর ভান্ডার, কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট কাদের, টেকনাফের আমদানিকারক সজীব, জহির, সাদ্দাম এবং কক্সবাজারের টেকনাফের কে কে পাড়ার মেসার্স আলীফ এন্টারপ্রাইজ। বেনাপোল, হিলি, সোনামসজিদ, ভোমরা স্থলবন্দরের সঙ্গে যোগসাজশ আছে তাদেরও। এর আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে তাদের নাম-পরিচয়ও পাঠিয়েছিল চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসন। কিন্তু কারও টিকিটিও ছুঁতে পারেনি প্রশাসন।
ডিসি আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা নজরদারিতে রয়েছে। কারসাজি করে কেউ পার পাবে না।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।