বিনোদন ডেস্ক : বলিউডে অভিনেতাদের মধ্যে কখন বন্ধুত্ব হয় কখনই বা তাঁদের সম্পর্কে ছেদ পড়ে, তা বোঝা খুবই কঠিন। ছোট ছোট বিষয় কখন যে বিশাল আকার ধারণ করে তা নিয়ে সতর্ক থাকতে হয় অভিনেতাদের। কয়েক বছর ধরেই বলিউডের প্রথম সারির দুই তারকা— শাহরুখ খান এবং হৃতিক রোশনের মধ্যে মনোমালিন্য দেখা দেয়।
এক দিকে ‘কিং খান’ এবং অন্য দিকে ‘গ্রিক গড’। বলিপাড়ায় এই দুই অভিনেতার মধ্যে বিবাদ বাধে কাজের সূত্রেই। রাকেশ রোশনের প্রযোজনায় ২০০৮ সালে মুক্তি পায় ‘ক্রেজি ৪’ ছবিটি। এই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন আরশাদ ওয়ারসি, ইরফান খান, রাজপাল যাদব, জুহি চাওলা প্রমুখ। একটি ‘আইটেম সং’-এ নাচের দৃশ্যে অভিনয় করেছিলেন শাহরুখও।
এই ছবির ‘আইটেম সং’-এ অভিনয়ের জন্য প্রযোজকের প্রথম পছন্দ ছিলেন হৃতিক। কিন্তু হাঁটুতে চোট থাকায় তিনি পছন্দের তালিকা থেকে বাদ পড়েন। হৃতিকের বদলে সেই গানে অভিনয় করেন শাহরুখ।
পরে হাঁটুর সমস্যা থেকে সেরে উঠলে একই গানে হৃতিকও অভিনয় করেন। তবে, এই নাচের দৃশ্য শ্যুট করার জন্য বাজেট ছিল কম। তাই কম বাজেটেই দৃশ্যটি শ্যুট করে কাজ শেষ করা হয়। কিন্তু এর ফলে মুশকিলে পড়েন ছবির পরিচালক-প্রযোজকেরা।
একই গানের উপর ভিত্তি করে ছবির জন্য দুটো আইটেম সং বানানো হয়েছে। এ ছাড়াও রাখি সবন্ত এই ছবিতে একটি আইটেম সংয়ের দৃশ্যে অভিনয় করেছেন। একটি ছবিতে তিনটি আইটেম সংয়ের ব্যবহার কী ভাবে করবেন তা নিয়ে ধন্দে পড়ে যান তাঁরা।
অবশেষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, ছবির প্রথমে শাহরুখ অভিনীত আইটেম সংটি রাখা হবে। এমনকি ছবির প্রচারের সময়েও এই নাচের দৃশ্যই দেখানো হবে। হৃতিককে যে নাচের দৃশ্যে দেখা যাবে তা রাখা হবে ছবির অন্তিম পর্বে। কিন্তু এই নাচের দৃশ্য ছবির প্রচারের সময় দেখানো হবে না।
কিন্তু ছবি প্রচারের সময় এই নিয়ে ঝামেলা শুরু হয়। ছবির প্রচারের সময় শাহরুখের সঙ্গে সঙ্গে হৃতিক অভিনীত নাচের দৃশ্যও দেখানো হতে থাকে। শাহরুখ এই বিষয়ে মুখ ফুটে কিছু না বললেও মনে মনে ক্ষুণ্ণ হন ।
এই ঘটনার ন’বছর পর প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় রাকেশ রোশন প্রযোজিত ‘কাবিল’ ছবিটি। রোম্যান্টিক-থ্রিলার ঘরানার এই ছবিতে মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করেছিলেন হৃতিক রোশন এবং ইয়ামি গৌতম।
এই ছবির কা়জ বহু দিন আগে শেষ হলেও প্রযোজক চাইছিলেন, অন্য কোনও বড় ছবির সঙ্গে যেন ‘কাবিল’ ছবিটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি না পায়। তাই তিনি সব ছবির মুক্তির দিন লক্ষ করে ২০১৭ সালের ২৫ জানুয়ারি দিনটিকে ছবি মুক্তির দিন হিসাবে বেছে নেন।
মুক্তির দিন ঘোষণা করার পর জানা যায়, শাহরুখ অভিনীত ‘রইস’ ছবিটিও একই দিনে মুক্তি পেতে চলেছে। এই প্রসঙ্গে হৃতিক এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, কোনও ছবি মুক্তির দিন যেন এক না হয়ে যায়, তা এড়ানোর জন্য রোশনরা ভেবেচিন্তে তারিখ বেছেছিলেন। এই সহযোগিতা বিপরীত দিক থেকেও পাওয়ার আশা রেখেছিলেন অভিনেতা।
হৃতিকের এই মন্তব্য নিয়ে যেন তাঁর আর শাহরুখের মধ্যে সম্পর্ক খারাপ না হয়ে যায় তাই তিনি বলেন, শাহরুখ রোশন পরিবারের ঘনিষ্ঠ। এই ঘটনায় শাহরুখের কোনও দোষ নেই। পরিচালক-প্রযোজকেরা যা ঠিক করবেন, তা-ই অন্তিম সিদ্ধান্ত হিসাবে গ্রহণ করা হবে।
পরে শাহরুখের কাছে এই মন্তব্য অন্য ভাবে পেশ করা হয় এবং বলিউডের ‘বাদশা’ হৃতিককে উপেক্ষা করতে শুরু করেন। হৃতিক এই ঘটনায় আশাহত হয়েছিলেন। বার বার শাহরুখের সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক করার চেষ্টা করেও কোনও লাভ হয়নি।
পরবর্তী কালে শাহরুখ-পুত্র আরিয়ানের নাম মাদক কাণ্ডে জড়িয়ে পড়ায় বলিপাড়ার অধিকাংশ তারকা শাহরুখের পাশে ছিলেন না। সেই সময় আরিয়ানের উদ্দেশে নেটমাধ্যমে একটি পোস্ট করেন হৃতিক। কঠিন সময়ে হৃতিক এ ভাবে পাশে দাঁড়িয়েছিলেন দেখে মান ভাঙে শাহরুখের।
কর্ণ জোহর তাঁর আত্মজীবনী ‘অ্যান আনস্যুটেবল বয়’-এ শাহরুখের সঙ্গে হৃতিকের খারাপ সম্পর্কের ইঙ্গিত দিয়েছেন। ২০০১ সালে কর্ণ জোহরের পরিচালনায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘কভি খুশি কভি গম’। কর্ণ জানান, এই ছবিটি পারিবারিক হলেও শ্যুটিং চলাকালীন টিম ইউনিটের সদস্যদের মধ্যে সেই সম্পর্ক ছিল না।
অমিতাভ ও জয়া বচ্চন নিজেদের মতো থাকতেন। শাহরুখ ও কাজল অনেক আগে থেকেই কর্ণের টিমের সঙ্গে পরিচিত ছিলেন বলে তাঁরা অধিকাংশ সময় একসঙ্গেই থাকতেন। কিন্তু সকলের মাঝে একা পড়ে গিয়েছিলেন হৃতিক।
পরিস্থিতি বুঝে অভিনেতাকে সঙ্গ দিতে শুরু করেন কর্ণ। হৃতিক তখন বলিউডের উঠতি নায়ক। ‘কভি খুশি কভি গম’ ছবি মুক্তির পরে অভিনেতার আরও নাম হতে শুরু করে। বর্তমানে তিনিই বলিউডের ‘গ্রিক গড’।
কিন্তু শাহরুখের সঙ্গে হৃতিকের প্রথম পরিচয় ‘কভি খুশি কভি গম’-এর সেটে নয়। তাঁদের আলাপ হয়েছিল ‘কর্ণ অর্জুন’ ছবির সেটে। ১৯৯৫ সালে মুক্তি পাওয়া এই ছবির পরিচালনা ও প্রযোজনার দায়িত্বে ছিলেন রাকেশ রোশন। শাহরুখ ও সলমন এই ছবিতে মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। ছবির বিভিন্ন কাজে বাবাকে সাহায্য করতে সেটে থাকতেন হৃতিকও। অভিনেতাদেরও সাহায্য করতেন তিনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।