জুমবাংলা ডেস্ক : চলতি বছরের ১৮ জুন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়ে ২২ জুন শেষ হয়। গত ১৮ সেপ্টেম্বর এবারের ভর্তি কার্যক্রম শেষ হয়েছে। তবে ভর্তি পরীক্ষা শেষ হওয়ার পাঁচ মাসেও প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এতে ক্লাস শুরুর আগেই সেশন জটে পড়েছে শিক্ষার্থীরা।
দেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইতোমধ্যে ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ হয়ে ক্লাস শুরু হলেও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস কবে শুরু হবে তা জানেনা প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম নভেম্বরে প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরুর আশ্বাস দিলেও এখন পর্যন্ত তারিখ নির্ধারণ করতে পারেনি ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা কমিটি।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কার্যক্রম পর্যালোচনা করে জানা যায়, এ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ১৬ আগস্ট, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩ সেপ্টেম্বর, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৫ সেপ্টেম্বর ও চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ অক্টোবর থেকে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস কত তারিখ থেকে শুরু হবে এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি প্রশাসন।
বিগত বছরগুলোতেও একই অবস্থা পরিলক্ষিত হয়েছে। ২০২২ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, ১ নভেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে, ১ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং ২০২৩ সালের ২২ জানুয়ারি থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ক্লাস শুরু হয়। অপরদিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি থেকে একই শিক্ষাবর্ষের ক্লাস শুরু হয়।
করোনার কারণে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় সমসাময়িক সময়ে (২০২১ সালের ডিসেম্বর-২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি) স্বশরীরে ক্লাস শুরু হলেও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে একমাস পর ২০২২ সালের ৯ মার্চ অনলাইনে ক্লাস শুরু হয়। পরে ২৩ মে থেকে স্বশরীরে ক্লাস শুরু হয়। এছাড়া ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং ২১ জানুয়ারি থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ক্লাস শুরু হয়। অথচ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে একই শিক্ষাবর্ষের ক্লাস শুরু হয় সে বছরের ১০ মার্চ।
এতে স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি কার্যক্রমে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় পিছিয়ে পড়ছে বলে মতামত সংশ্লিষ্টদের। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী সজীব আহমেদ জেনিচ বলেন, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস অনেক আগেই শুরু হয়েছে, এতে করে আমরা শুরুতেই সেশন জটে পড়ে যাচ্ছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের চেয়ে অনেক এগিয়ে গেছে। যেহেতু এখন আমাদের হলের কোনো সংকট নেই। প্রশাসন চাইলেই সঠিক সময়ে ক্লাস শুরু করতে পারত। প্রশাসনের গাফিলতিই এই সংকটের মূল কারণ বলে আমরা মনে করি।
শুধু ক্লাস নয়, ভর্তি আবেদনও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেরিতে শুরু হয়। এবছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, ২০ মার্চ থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে, ৯ এপ্রিল থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ও ১৫ এপ্রিল থেকে গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি আবেদন শুরু হয়। তবে একই শিক্ষাবর্ষে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন শুরু হয় ৯ মে।
দেরিতে ক্লাস শুরু ও ভর্তি কার্যক্রমে ধীরগতির ফলে পিছিয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। এর প্রভাব পড়ছে প্রতিযোগিতামূলক চাকরি পরীক্ষাগুলোতে। একই শিক্ষাবর্ষে পড়াশোনা করেও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করতে পারছে না জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ফলে অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক চাকরি পরীক্ষাগুলোতে অংশগ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে না তারা।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সচিব ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার সৈয়দ মোহাম্মদ আলী রেজা বলেন, প্রথম বর্ষের ক্লাস কবে থেকে শুরু হবে এই বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আর এ বিষয়ে কোনো তথ্যই আমার কাছে নাই। ভর্তি কার্যক্রমে পিছিয়ে পড়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার কারণে এক শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের বের হওয়া সাপেক্ষে নতুন শিক্ষার্থীদের ভর্তির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এছাড়া বিভিন্ন সময় বারবার ভর্তি বাতিল, হলে আসন ফাঁকা না থাকাসহ নানা জটিলতার কারণে সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হওয়া ভর্তি কার্যক্রমে পিছিয়ে পড়ার অন্যতম একটি কারণ।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলমের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। তবে এর আগে সাংবাদিকদের তিনি নভেম্বরে ক্লাস শুরুর কথা বলেছিলেন। সে সময় তিনি আরও বলেছিলেন, আমরা চাচ্ছি না নবীন শিক্ষার্থীরা গণরুমে উঠুক। এ সংস্কৃতি বন্ধ করতে আমরা তৎপর। এছাড়া নবনির্মিত হলগুলোতে আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে লোকবল নিয়োগের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। আশা করি এ কাজ শেষ হলে নভেম্বরের মধ্যে হল চালু করে নতুন ব্যাচের ক্লাস শুরু করা যাবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।