আন্তর্জাতিক ডেস্ক : দফায় দফায় বৈঠক আর চিঠি চালাচালির পর চূড়ান্ত হলো ২৫টি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমেই বাংলাদেশি কর্মী নেবে মালয়েশিয়া। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নিবন্ধিত ১ হাজার ৫২০টি রিক্রুটিং এজেন্সিকে কর্মী পাঠানোর সুযোগ প্রদানের দাবি করা হলেও সফররত মালয় মানসম্পদ মন্ত্রী দাতুক সেরি এম সারাভানান তা নাকচ করে দিয়েছেন। তাদের পছন্দের ২৫টি রিক্রুটিং এজেন্সি এবং ২৫০টি সাব এজেন্টের মাধ্যমে কর্মী নিতে তিনি বদ্ধপরিকর।
বৃহস্পতিবার ঢাকায় দুই দেশের মধ্যে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের (জেডব্লিউজি) বৈঠক শেষে মালয়েশিয়ার মন্ত্রী এম সারাভানান বলেন, ‘বাংলাদেশের জন্য মালয়েশিয়ায় শ্রমবাজার দ্রুত উন্মুক্ত হচ্ছে। বাংলাদেশি কর্মীদের মালয়েশিয়ায় পাঠাতে হলে নির্দিষ্ট ২৫টি রিক্রুটিং এজেন্সি এবং ২৫০টি সাব-এজেন্টের মাধ্যমেই এই শ্রমিকদের মালয়েশিয়া আসতে হবে। এই সিদ্ধান্তে আমার দেশ অটল।’
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্হান বিষয়ক মন্ত্রী ইমরান আহমদ জানিয়েছেন, চলতি জুন মাসেই কর্মী পাঠানো শুরু হচ্ছে দেশটিতে। চুক্তি অনুযায়ী প্রথম বছরেই ২ লাখ কর্মী যাওয়ার কথা। এছাড়া পাঁচ বছরে ৫ লাখ কর্মী যাওয়ার কথা। কিন্তু তাদের চাহিদা এবং পরিস্হিতি অনুযায়ী আশা করি ৫ লাখ কর্মী আমরা দ্রুত পাঠিয়ে দিতে পারব। জনপ্রতি খরচ হবে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা।
বৈঠক শেষে মন্ত্রী বলেন, মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে আর কোনো বৈঠকের হয়তো প্রয়োজন হবে না। সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী সব শর্ত মেনেই দেশটিতে কর্মী পাঠানো হবে। সরকারের ডাটা ব্যাংক থেকে কর্মী পাঠানো হবে। তার আগে সংবাদপত্র ও টিভিতে বিজ্ঞাপন দেওয়া হবে।
ইমরান আহমদ বলেন, দেশে সরকারিভাবে বৈধ ১ হাজার ৫২০ এজেন্সি রয়েছে। তাদের তালিকা আমরা আগেই পাঠিয়েছি। সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী তালিকা থেকে বাছাই করার অধিকার মালয়েশিয়ারই। আমাদের নয়। কারণ তারা বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেবে। সিন্ডিকেটের কথা সমঝোতা চুক্তিতেও নেই, আজকের আলোচনাতেও ছিল না। মালয়েশিয়ার বাছাই করা এজেন্সির বাইরে যেসব এজেন্সি থাকবে, তারা কী করে ব্যবসা করবে—জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, মানুষ ব্যবসার চিন্তা করেই লাইসেন্স নেয়। তারা নিজ নিজ ব্যবসা খুঁজে নেবে।
বলা হচ্ছে, জি-টু-জি সমঝোতার ভিত্তিতে বাংলাদেশের কর্মীরা বিনা খরচে মালয়েশিয়া যেতে পারবেন। এ বিষয়টির ব্যাখ্যায় মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, সম্ভাব্য ব্যয়টা নির্ধারণ করা না হলেও আগের তুলনায় খরচ কম হবে বলে আশা করছি। এটা নিশ্চিত করবে দেশটি।
তিনি বলেন, মেডিক্যাল, পাসপোর্ট ও করোনা টেস্টের খরচ কর্মীরা বহন করবেন এবং মালয়েশিয়ায় গিয়ে কোয়ারেন্টাইনের খরচও কর্মীকে বহন করতে হবে। কর্মীদের যাওয়া আসার বিমান খরচ বহন করবে মালয়েশিয়ার নিয়োগকর্তা। বাংলাদেশসহ ১৩টি দেশ থেকে মালয়েশিয়া জনশক্তি নেয়। কিন্তু বাংলাদেশ ছাড়া আর সব দেশ নিজেরাই রিক্রুটিং এজেন্ট ঠিক করে দেয়। বাংলাদেশ তার ব্যতিক্রম কেন? এর জবাবে ইমরান আহমেদ বলেন, আমাদের সঙ্গে মালয়েশিয়ার যে এমওইউ হয়েছে তাতে মালয়েশিয়া রিক্রুটিং এজেন্টদের বাছাই করবে বলা আছে।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্হান মন্ত্রণালয়ের সচিব আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন বলেন, কর্মীদের বেতন সর্বনিম্ন ১ হাজার ৫০০ রিংগিত হবে। এছাড়া কর্মীর থাকা ও চিকিত্সাসহ অন্যান্য সুবিধা থাকবে।
এর আগে ২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর শ্রমিক পাঠানোর বিষয়ে বাংলাদেশ-মালয়েশিয়ার সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়। এতে বাংলাদেশের শ্রমিকদের জন্য মালয়েশিয়ার দুয়ার উন্মুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখেছিল সরকার। কিন্তু এর এক মাস পর মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে জানিয়ে দেওয়া হয় যে এসব শ্রমিককে নির্বাচিত ২৫টি রিক্রুটিং এজেন্সি ও ২৫০টি সাব-এজেন্টের মাধ্যমে আসতে হবে। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে টানাপড়েন শুরু হয়। চুক্তির এক মাসের মধ্যেই কর্মী পাঠানোর কথা থাকলেও সিন্ডিকেট ইসু্যতে তা গত ছয় মাস ধরে ঝুলে থাকে।
‘২৫ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টায় সিন্ডিকেট’
এদিকে জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) সম্মিলিত সমন্বয় ফ্রন্ট গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে বলেছে, মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানিতে কথিত ২৫টি এজেন্সির সিন্ডিকেট ২৫ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। কর্মী প্রেরণে সকল বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য বাজার উন্মুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন তারা।
৩ লাখ টাকা আমের কেজি, সিসি ক্যামেরায় নজরদারি করেও ঘুম হচ্ছে না চাষির
বায়রা সম্মিলিত সমন্বয় ফ্রন্টের সভাপতি ড. মোহাম্মদ ফারুক বলেন, মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানিতে কথিত ২৫টি এজেন্সির সিন্ডিকেটের বাজার দখলের ষড়যন্ত্রকে নস্যাত্ করতে হবে। ২০১৬, ২০১৭ ও ২০১৮ সালে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে শ্রমিক রপ্তানির ফলে দেশের বিপুল পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে। সে সময় শ্রমিক রপ্তানি হওয়ার কথা ছিল ১৫ লাখ। কিন্তু হয়েছে মাত্র ২ লাখ ৭৪ হাজার ৫০০ জন। এতে আরো বক্তব্য রাখেন সংগঠনের মহাসচিব মোস্তফা মাহমুদ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।