সুয়েব রানা, সিলেট : জৈন্তাপুরে আধুনিক প্রযুক্তি ছোয়ায় অত্যাধুনিক চাষ যন্ত্র ট্রাক্টর ব্যবহার করে অনাবাদী বিন্নাউরা পতিত জমিকে কৃষি চাষযোগ্য করে তুলা হচ্ছে। এতে করে স্বাধীনতার পরবর্তী দীর্ঘ ৫৩ বছরের বেশী সময় অনাবাদি জমি যেগুলো জংলী বিন্নাউরা হিসেবে পড়ে ছিলো সেই জমি নিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে উপজেলার প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকরা।
কৃষকদের এমন স্বপ্ন বাস্তবায়নের এই যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ” ফ্লাড রিকনস্ট্রাকশন ইমারজেন্সি এসিস্টেন্ট প্রজেক্ট বা ফ্রিপ প্রকল্পের মাধ্যমে।
এই প্রকল্পের হাত ধরে চলতি বছর জৈন্তাপুরের প্রান্তিক পর্যায়ে কৃষকদের একটি গ্রুপকে দ্রুত সময়ের মধ্যে জমির চাষযোগ্য একটি ট্রাক্টর বিতরণ করা হয়েছে। ভর্তুকি মূল্যে কৃষকদের গ্রুপে সরবরাহকৃত এই ট্রাক্টরটি এসিআই সোনালিকা ব্রান্ডের। সেই সাথে যন্ত্রটির হর্স পাওয়ার হচ্ছে এইচপি আর এক্স ৬০। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য মতে এই যন্ত্রের ব্যবহার করে ১দিনে এক হেক্টর জমি তিনবার চাষ করা সম্ভব। ফ্রিপ প্রকল্পের আওতায় কৃষক পর্যায়ে গত ৩০শে সেপ্টেম্বর ভূর্তুকি মূল্যে ৩০ জনের গ্রুপের কৃষকদের এই যন্ত্রটি সরবরাহ করা হয়েছে। কৃষকদের এই গ্রুপটি জৈন্তাপুর উপজেলার ৫ নং ফতেহপুর ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত হেমু এলাকায় যারা হেমু ফ্রিপ কৃষক গ্রুপ নামে পরিচিত।
বুধবার (১৩ই নভেম্বর) বেলা ১১:০০ ঘটিকায় ফ্রিপ প্রকল্পের আওতায় দেয়া ট্রাক্টরটির মাধ্যমে বিন্নাউরা জমিতে চাষ শুরুর মাধ্যমে এর উদ্বোধন করা হয়। এ সময় হেমু ফ্রিপ কৃষক গ্রুপ ৩০ জন কৃষক সহ আরো উপস্থিত ছিলেন জৈন্তাপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও ফ্রিপ প্রকল্পের কর্মকর্তাবৃন্দ। প্রথম দিনে হেমু এলাকায় ১৫ হেক্টর বিন্নাউরা জমিকে কৃষি চাষের আওতায় টাক্টর দিয়ে চাষাবাদের কাজ শুরু করা হয়।
এ বিষয়ে হেমু ফ্রিপ কৃষক গ্রুপের প্রধান স্হানীয় কৃষক মোহাম্মদ নাঈমুল্লাহ্ বলেন, এটা আমাদের জন্য খুব আনন্দের দিন। আমরা ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকেরা এত অর্থ ব্যায় করে কোনদিন এরকম দামী ট্রাক্টর কিনতে পারতাম না। ফ্রিপ আমাদের সেই সুযোগের পাশাপাশি এখন দীর্ঘদিনের অনাবাদী বিন্নাউরা জমি গুলো চাষযোগ্য করার সুযোগ করে দিয়েছে। তিনি আরো বলেন আপাতত আগামী কয়েকদিনের মধ্যে ১৫ হেক্টর বিন্নাউরা জমি চাষযোগ্য করা লক্ষ্যে তারা সবাই মিলে কাজ করছেন। তিনি বলেন এই জমিগুলোতে চলতি মৌসুমে বোরো, ভূট্টা ও সরিষা চাষের জন্য প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। এদিকে উক্ত ফসল চাষের পূর্বে জৈন্তাপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রণোদনায় সার, বীজ সহ প্রয়োজনীয় উপকরণ তারা বুঝে পেয়েছেন।
এ বিষয়ে জৈন্তাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামীমা আক্তার বলেন, এটা কৃষকদের জন্য একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ যা বাস্তবায়ন করছে ফ্রিপ প্রকল্প। তিনি বলেন জৈন্তাপুর উপজেলায় ছয়টি ইউনিয়ন আনুমানিক ২২০ হেক্টর বিন্নাউরা বা অনাবাদি জমি রয়েছে। যা কয়েকযুগ ধরে কোন চাষাবাদের আওতায় আনা সম্ভব হয় নি। বর্তমানে এই প্রথম কৃষক পর্যায়ে ভর্তুকির মাধ্যমে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ট্রাক্টর বিতরণের ফলে দ্রুত সময়ে এই অনাবাদি বিন্নাউরা জমিগুলোকে চাষের আওতায় আনা সম্ভব হবে।
তিনি আরো বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে ১৫ হেক্টর জমিকে চাষযোগ্য করা শেষে বাকি বিন্নাউরা জমিগুলোতে কৃষকরা ট্রাক্টরটি স্বল্প ভাড়ায় নিয়ে চাষের কাজে ব্যবহার করতে পারবেন।
তিনি বলেন, ফ্রিপ প্রকল্প শুধু উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন যন্ত্র সরবরাহ নয় বরং প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকদের সেচ সুবিধা নিশ্চিতে সৌর প্যানেলের মাধ্যমে সেচ প্রকল্প চালু করেছে। তিনি জানান ইতিমধ্যে উপজেলার ২ টি সেচ প্রকল্প চালু হয়েছে। এই দুইটি সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে উপজেলার বালিপাড়া,শিকার খাঁ,দিঘিরপাড় এলাকায় প্রায় ৪০০ হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। ভবিষ্যৎতে কৃষকের অসুবিদার কথা চিন্তা করে আরো সেচ প্রকল্প চালু পরিকল্পনা রয়েছে।
জৈন্তাপুরে অবৈধ বালু ও লাল পাথর মিলের বিরুদ্ধে অভিযান, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা
এবং উক্ত ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা উপ সহকারী কৃষি অফিসার জনাব, মো: ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, এই ট্রাক্টরের সুবিধা উক্ত ইউনিয়নের সকল কৃষক ভাই গ্রহণ করতে পারবেন, এতে করে অনাবাদি জমি চাষের আওতায় আসবে, এই এলাকার জন্য বিভিন্ন নতুন নতুন ফসল যেমন, ভূট্রা, বাদাম, পিয়াজ, রসুন, গম, সরিষা,অড়হড়, তিল ইত্যাদি চাষাবাদ হবে বলে তিনি আশাবাদী। এবং তিনি ইতিমধ্যে এইসব ফসল চাষাবাদের জন্য কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।