সুয়েব রানা, সিলেট : দেশের কৃষি খাতকে টেকসই, পুষ্টিকেন্দ্রিক ও উদ্যোক্তা-ভিত্তিক করার লক্ষ্যে সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলায় অনুষ্ঠিত হলো ‘পার্টনার কংগ্রেস ২০২৫’। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আয়োজনে আয়োজিত এই কংগ্রেসে মাঠপর্যায়ের কৃষি উন্নয়ন কার্যক্রম, কৃষকের সক্ষমতা বৃদ্ধির কৌশল ও সরকারি সহযোগিতার বাস্তবায়ন বিষয়ে বিস্তৃত আলোচনা হয়।
শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫ তারিখে জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এটি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের আওতায় “Programme on Agriculture and Rural Transformation for Nutrition, Entrepreneurship and Resilience in Bangladesh (PARTNER)” প্রকল্পের অংশ হিসেবে বাস্তবায়িত একটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি উদ্যোগ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খামারবাড়ি, সিলেট-এর উপ-পরিচালক মোস্তফা ইকবাল আজাদ। তিনি বলেন, “বর্তমান সরকার কৃষিকে আধুনিক ও লাভজনক খাতে রূপান্তরের জন্য মাঠপর্যায়ে নানা কার্যক্রম গ্রহণ করেছে।পার্টনার প্রকল্প সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।”
সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব জর্জ মিত্র চাকমা। তিনি বলেন, “কৃষকদের উন্নয়নে প্রশাসনের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও কৃষি বিভাগকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। কৃষির উন্নয়নের মাধ্যমে পুষ্টি ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা অর্জন সম্ভব।”
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন মোঃ নাছির আহমদ, সিনিয়র মনিটরিং অফিসার, পার্টনার প্রকল্প। তিনি বলেন, “মনিটরিং ও ফিল্ডভিত্তিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রকল্পের সফলতা নিশ্চিত হচ্ছে। স্থানীয় পর্যায়ে অংশগ্রহণকারীদের সহযোগিতাই প্রকৃত পরিবর্তনের নিয়ামক।”
বক্তব্য দেন দীপক কুমার দাস, জেলা প্রশিক্ষণ অফিসার, সিলেট। তিনি বলেন, “গুণগত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কৃষকরা আরও সচেতন ও দক্ষ হচ্ছে। প্রকল্পের মূল শক্তি হচ্ছে মাঠপর্যায়ের কৃষক ও সম্প্রসারণ কর্মীদের নিবেদন।”
শামীমা আক্তার, উপজেলা কৃষি অফিসার, জৈন্তাপুর বলেন, “জৈন্তাপুরে কৃষকদের মাঝে প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি পৌঁছে দিতে পার্টনার প্রকল্প বিশেষ ভূমিকা রাখছে। ভবিষ্যতে কৃষি সম্প্রসারণ আরও তৃণমূলভিত্তিক হবে।”
মো: ইশতিয়াক আহমদ, উপসহকারী কৃষি অফিসার, জৈন্তাপুর বলেন, “কৃষকদের হাতে বাস্তব জ্ঞান পৌঁছে দিতে আমরা ফিল্ড পর্যায়ে নিরবচ্ছিন্ন কাজ করে যাচ্ছি।পার্টনার প্রকল্প আমাদের সেই কার্যক্রমে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করছে।”
তিনি উপসহকারী কৃষি অফিসারদের পক্ষ থেকে গুড এগ্রিকালচারাল প্র্যাকটিস (GAP) বিষয়েও গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, মাঠপর্যায়ে GAP বাস্তবায়ন হলে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের পাশাপাশি কৃষকদের আয় বৃদ্ধি, উৎপাদন খরচ হ্রাস এবং পরিবেশ সংরক্ষণ—এই তিনটি দিকেই ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।
মামুনুর রশীদ, উপসহকারী কৃষি অফিসার, জৈন্তাপুর, সিলেট বলেন, “আমরা যারা মাঠপর্যায়ে কাজ করি, তারা জানি একজন কৃষকের আস্থা অর্জন করতে সময় লাগে। পার্টনার প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা সেই আস্থা তৈরি করতে পেরেছি। কৃষকরা এখন আধুনিক পদ্ধতিতে চাষ করতে আগ্রহী হয়ে উঠছে।”
কৃষক প্রতিনিধি হিসেবে বক্তব্য রাখেন আসমা বেগম, পার্টনার ফিল্ড স্কুলভুক্ত একজন সফল নারী কৃষাণী। তিনি বলেন, “এই প্রকল্পের মাধ্যমে আমি নতুনভাবে শিখেছি কীভাবে কম খরচে নিরাপদ সবজি চাষ করা যায়। এখন আমি শুধু নিজের পরিবারের চাহিদাই পূরণ করছি না, বরং বাজারেও বিক্রি করছি।”
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন নূরুল ইসলাম খান, উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ অফিসার, জৈন্তাপুর, সিলেট। তিনি বলেন, “ফসল সুরক্ষা ও কৃষি ব্যবস্থাপনায় পরিবেশবান্ধব চর্চা বাস্তবায়নের জন্য আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে।”
আয়োজনে অংশ নেন জৈন্তাপুর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগণ, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি, সাংবাদিক, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা, সরকারি চাকরিজীবী, এনজিও প্রতিনিধিসহ কৃষি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন শ্রেণির অংশগ্রহণকারীরা। বিশেষ করে পাটনার ফিল্ড স্কুলের প্রশিক্ষিত কৃষক-কৃষানী এবং বাইরের আগত অনুরূপ কৃষক প্রতিনিধি দলের সক্রিয় অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।
সুনির্দিষ্টভাবে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিলেন উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের নির্বাচিত পাঁচজন প্রতিনিধি, স্থানীয় পাঁচজন গণ্যমান্য ব্যক্তি, পাঁচজন সাংবাদিক, পাঁচজন উপসহকারী কৃষি অফিসার, পাঁচজন সরকারি কর্মকর্তা, পাঁচজন এনজিও কর্মী এবং পার্টনার ফিল্ড স্কুলভুক্ত কৃষক-কৃষানীর মধ্যে ৩৫ জন স্থানীয় ও ৩৫ জন বাইরের কৃষক-কৃষানী।
যদিও পার্টনার প্রকল্পে আন্তর্জাতিক অংশীদার হিসেবে রয়েছে IFAD ও বিশ্বব্যাংক, তবে কংগ্রেসটির আয়োজন ও বাস্তবায়ন পুরোপুরি ছিল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নেতৃত্বে এবং সরকারি ব্যবস্থাপনায়।
এ ধরনের কনফারেন্স মাঠপর্যায়ে নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে সরাসরি তথ্য বিনিময়ের সুযোগ করে দেয়, যা ভবিষ্যতের কৃষি নীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশা প্রকাশ করেন আয়োজকরা।
এছাড়াও কংগ্রেসে গুড এগ্রিকালচারাল প্র্যাকটিস (GAP) বিষয়েও গুরুত্বারোপ করা হয়। নিরাপদ ও টেকসই খাদ্য উৎপাদনে কৃষকদের দক্ষতা বাড়াতে কীভাবে পরিবেশবান্ধব, রাসায়নিক-মুক্ত ও বাজারোপযোগী চাষাবাদ সম্ভব তা নিয়ে আলোচনা হয়। অংশগ্রহণকারীদের জানানো হয়, GAP বাস্তবায়নের মাধ্যমে কৃষকদের আয় বৃদ্ধি, ভোক্তাদের জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণ এবং সার্বিক কৃষি অর্থনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।