ধর্ম ডেস্ক : জাকাত ইসলামের অন্যতম রুকন বা স্তম্ভ। ইসলাম মানব সমাজে অর্থনৈতিক সুব্যবস্থা নিশ্চিত করতে এবং সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠা করতে বিত্তশালীদের ওপর নির্দিষ্ট হারে জাকাত ফরজ করেছে। আর জাকাতকে বলা হয়েছে গরিবের অধিকার। এটা কোনোক্রমেই গরিবের প্রতি ধনীর দয়া বা অনুগ্রহ নয়।
ইরশাদ হয়েছে, ‘তাদের (ধনীদের) সম্পদে অধিকারবঞ্চিত দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অধিকার আছে।’ (সুরা : আল-মাআরিজ, আয়াত : ২৪)
ইসলামী বিশ্বকোষের তথ্যমতে, আল-কোরআনে প্রত্যক্ষভাবে জাকাতের কথা এসেছে ৩২ বার। এর মধ্যে নামাজ ও জাকাতের কথা একত্রে এসেছে ২৮ বার।
দ্বিতীয় হিজরিতে রোজা ফরজ হওয়ার পরপরই শাওয়াল মাসে জাকাত ফরজ হয় এবং নবম হিজরিতে এটি পূর্ণাঙ্গরূপে কার্যকর করা হয়।
জাকাতব্যবস্থা অতীতের সব নবীর উম্মতের ওপর অপরিহার্য পালনীয় ছিল। তবে সম্পদের পরিমাণ ও ব্যয়ের খাত বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ছিল। যেমন—ইবরাহিম (আ.) ও তাঁর বংশের নবীদের কথা উল্লেখ করার পর আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘আর তাদের করেছিলাম নেতা। তারা আমার নির্দেশ অনুসারে মানুষকে পথ প্রদর্শন করত।
তাদের ওহি প্রেরণ করেছিলাম সৎকর্ম করতে, নামাজ কায়েম করতে এবং জাকাত প্রদান করতে।’ (সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ৯৩)
ইসমাঈল (আ.) সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘সে তার পরিবার-পরিজনকে নামাজ ও জাকাতের নির্দেশ দিত।’ (সুরা : মারইয়াম, আয়াত : ৫৫)
ঈসা (আ.)-এর প্রসঙ্গে এসেছে, তিনি বলেছেন, ‘যেখানেই আমি থাকি না কেন, তিনি আমাকে বরকতময় করেছেন। তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, যত দিন জীবিত থাকি তত দিন নামাজ ও জাকাত আদায় করতে।’ (সুরা : মারইয়াম, আয়াত : ৩১)
মোটকথা, প্রাচীনকাল থেকেই সব নবী-রাসুলের উম্মতের ওপর নামাজ ও জাকাত ফরজ হিসেবে পালনীয় ছিল। তবে মুসলমানদের ওপর ধনীদের সম্পদ পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে হিসাব করে প্রতিবছর জাকাত আদায় বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
জাকাত কার ওপর ফরজ?
জাকাত স্বাধীন, পূর্ণবয়স্ক এমন মুসলিম নর-নারী আদায় করবে, যার কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ আছে। তবে এর জন্য শর্ত হলো—
এক. সম্পদের ওপর পূর্ণাঙ্গ মালিকানা থাকতে হবে।
দুই. সম্পদ উৎপাদনক্ষম ও বর্ধনশীল হতে হবে।
তিন. নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকতে হবে।
চার. সারা বছরের মৌলিক প্রয়োজন মেটানোর পর অতিরিক্ত সম্পদ থাকলেই শুধু জাকাত ফরজ হবে।
পাঁচ. জাকাত ফরজ হওয়ার জন্য ঋণমুক্ত হওয়ার পর নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকা শর্ত।
ছয়. কারো কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ পূর্ণ এক বছর থাকলেই শুধু ওই সম্পদের ওপর জাকাত দিতে হবে।
জাকাতের নিসাব
ক. সোনা ৭.৫ তোলা=৯৫.৭৪৮ গ্রাম প্রায়। খ. রুপা ৫২.৫ তোলা=৬৭০.২৪ গ্রাম প্রায়। (আহসানুল ফাতাওয়া : ৪/৩৯৪, আল ফিকহুল ইসলামী : ২/৬৬৯)
দেশি-বিদেশি মুদ্রা ও ব্যাবসায়িক পণ্যের নিসাব নির্ধারণে সোনা-রুপা হলো পরিমাপক। এ ক্ষেত্রে ফকির-মিসকিনদের জন্য যেটি বেশি লাভজনক হবে, সেটিকে পরিমাপক হিসেবে গ্রহণ করাই শরিয়তের নির্দেশ। তাই মুদ্রা ও পণ্যের বেলায় বর্তমানে রুপার নিসাবই পরিমাপক হিসেবে গণ্য হবে। তাই যার কাছে ৫২.৫ তোলা সমমূল্যের দেশি-বিদেশি মুদ্রা বা ব্যাবসায়িক পণ্য মজুদ থাকবে, তার ওপর জাকাত ওয়াজিব হবে।
যে সম্পদের ওপর জাকাত ফরজ, তার ৪০ ভাগের এক ভাগ বা ২.৫০ শতাংশ জাকাত দিতে হবে।
সম্পদের মূল্য নির্ধারণ করে শতকরা আড়াই টাকা বা হাজারে ২৫ টাকা হারে নগদ অর্থ কিংবা ওই পরিমাণ টাকার কাপড়চোপড় বা অন্য কোনো প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনে দিলেও জাকাত আদায় হবে। (আবু দাউদ, হাদিস : ১৫৭২; সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৬২৩)
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।