জুমবাংলা ডেস্ক : চলছে বর্ষা, অথচ চাঁদপুরের পদ্মা ও মেঘনায় ইলিশসহ অন্যান্য মাছের দেখা নেই। জালে কাঙ্ক্ষিত মাছ ধরা না পড়ায় জেলেরা হতাশ। ফলে ধারদেনা পরিশোধের তাড়ায় দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে জেলেদের কপালে। মৎস্যবিজ্ঞানীরা বলেছে, জলবায়ু পরিবর্তন, বৃষ্টিপাত কম, চর-ডুবোচর এবং নদী দূষণের কারণে এমন পরিস্থিতি। তবে জেলেদের হতাশ হওয়ার কারণ নেই বলে নিশ্চিত করেছেন দেশের শীর্ষ মৎস্যবিজ্ঞানী।
দীর্ঘ অপেক্ষার পর নদীতে জাল ফেলছেন জেলেরা। কয়েক ঘণ্টা পর আবার সেই জাল পানি থেকে তুলে দেখছেন মাছ শূন্য জাল। এভাবে মাছের আশায় ছোটো বড় জেলে নৌকা চষে বেড়াচ্ছে পদ্মা ও মেঘনায়। তবে দীর্ঘ অপেক্ষার পর দুই একটি মাছের দেখা মিলছে।
ভরা বর্ষায় জালে মাছ ধরা না পড়ায় এতে হতাশ জেলেরা। কারণ, জাল ও নৌকা তৈরিতে ধারদেনা তো আছেই। তার সঙ্গে পরিবারের ভরন পোষণ। এমন বর্ষায় জীবিকার পথ বন্ধ হওয়ায় উপক্রম হওয়ায় দুশ্চিন্তার ভাঁজ এমন হাজারো জেলের কপালে। অতীতে কখনো এমন পরিস্থিতিতে পড়েননি তারা। তারপরও মাছের দেখা মিলবে। সেই আশায় বুক বেধে আছেন চাঁদপুরের জেলেরা। জেলার উত্তরের ষাটনল থেকে দক্ষিণের চরভৈরবী পর্যন্ত সেই একই চিত্র।
জেলে সাইফুল সরকার বলেন, ‘ধারদেনা করে জাল ও নৌকা তৈরি করেছি। নদীতে নামলেই প্রতিদিন নৌকার ইঞ্জিনের তেল খরচসহ প্রায় আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা খরচ হয়। কিন্তু ইলিশসহ অন্যান্য মাছ জালে ধরা না দেয়ায় ধারদেনার সেই ভার বেড়ে চলছে।’
৬০ বছরের বৃদ্ধ জেলে কালু দেওয়ান বলেন, ‘সেই শৈশব থেকে বাবার হাত ধরে ইলিশের নেশায় নদীতে। বছর ঘুরে বর্ষা ফিরে এলে মনে ঈদের মতো আনন্দ বিরাজ করতো। কারণ, নদীর পানিতে জাল ফেললেই ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ। কিন্তু গত কয়েক বছরে সেই চিত্র পাল্টে গেছে। এখন দুই একদিন অপেক্ষার পরও কাঙ্ক্ষিত সেই ইলিশ ধরা পড়ছে না।’
জেলে নেতা মানিক দেওয়ান বলেন, ‘মূলত কারেন্ট জালই জেলেদের সর্বনাশ করেছে। এই জাল যতদিন পর্যন্ত বন্ধ কিংবা পুরোপুরি নিষিদ্ধ না হবে। ততদিন পর্যন্ত জাটকা মৌসুম এবং অন্য সময় নির্বিচারে ইলিশসহ অন্যান্য মাছের পোনা ধ্বংস হবে।’
জলবায়ু পরিবর্তন ও বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ার সঙ্গে নদীতে চর-ডুবোচর এবং পানি দূষণের কারণে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন মৎস্যবিজ্ঞানী ও ইলিশ গবেষক ড. আনিছুর রহমান।
তবে ভারি বৃষ্টিপাত হলে দক্ষিণের সাগর থেকে ছুটে আসবে ইলিশের ঝাঁক। তাই জেলেদের হতাশ না হয়ে অপেক্ষায় থাকার পরামর্শ দিয়েছেন এ শীর্ষ মৎস্যবিজ্ঞানী ও ইলিশ গবেষক।
তিনি বলেন, ‘মূলত ইলিশ গভীর সাগরের মাছ। তার যখন খাবারের প্রয়োজন হয়, তখন ঝাঁক বেঁধে সাগর মোহনা এবং নদীর মিঠা পানিতে ছুটে আসার চেষ্টা করে। কিন্তু চর ও ডুবোচরে বাধা পায় এবং পানি দূষণ তো রয়েছে। আবার এর সঙ্গে যোগ হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব। তারপরও পদ্মা ও মেঘনা অববাহিকার জেলেদের হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। ভারি বৃষ্টিপাত এবং উজানের ঢলের পানির চাপ শুরু হলে গভীর সাগর পেরিয়ে মোহনা ও এই দুই নদীতে ইলিশের ঝাঁক ছুটে আসবে। যা মৎস্য বিজ্ঞানীদের গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে।’
প্রসঙ্গত, ইলিশ গবেষক ও মৎস্যবিজ্ঞানী ড. আনিছুর রহমান বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক ছিলেন। গত ৩৫ বছর ইলিশ মাছ নিয়ে দেশ ও বিদেশে গবেষণা করছেন তিনি।
চাঁদপুরের পদ্মা ও মেঘনায় মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন এমন জেলের সংখ্যা ৫০ হাজার। আর তাদের পরিবারের সদস্য মিলিয়ে দুই লাখেরও বেশি। ভরা মৌসুমে কাঙ্ক্ষিত মাছ ধরা না পড়ায় জেলেসহ এসব পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
![](https://inews.zoombangla.com/wp-content/uploads/2024/03/34-5.jpg)
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।