জুমবাংলা ডেস্ক : নকল ফ্যামিলি কার্ড দিয়ে কিনে নেওয়া হচ্ছে ভর্তুকি মূল্যে দেওয়া টিসিবির পণ্য। বিষয়টি সরকারের নজরে আসায় এবার বাদ পড়তে যাচ্ছেন টিসিবির ১০ লাখ ভুয়া ফ্যামিলি কার্ড গ্রহীতা। নকল কার্ড দিয়েই সরকারি বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা- টিসিবি থেকে প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকার পণ্য তুলে নেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ টিসিবির কার্ডেও জালিয়াতি করা হচ্ছে! এতে করে বঞ্চিত হচ্ছেন দেশের নিম্ন আয়ের মানুষ।
খাদ্যপণ্য বিতরণে টিসিবিতে বছরে আট থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়া হলেও প্রকৃতপক্ষে দরিদ্র মানুষের জন্য নেওয়া সামাজিক সুরক্ষার এই কর্মসূচি ব্যাহত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় টিসিবিকে ত্রুটিমুক্ত তালিকা করার পরামর্শ দিয়ে দ্রুত সবার হাতে স্মার্ট কার্ড তুলে দেওয়ার তাগিদ দিয়েছে বাংলাদেশ ফরেন ট্রেড ইনস্টিটিউট (বিএফটিআই)।
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং ভোগ্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইচ্ছায় দুই বছর আগে নি¤œ আয়ের কোটি পরিবারের হাতে সাশ্রয়ী মূল্যে টিসিবির পণ্য বিক্রি কার্যক্রম শুরু হয়। এজন্য তাদের দেওয়া হয় ফ্যামিলি কার্ড। বাজার মূল্যের চেয়ে প্রায় অর্ধেক দামে টিসিবি থেকে প্রতি মাসে একবার করে ভোজ্যতেল, চিনি, ডাল, চাল এবং ছোলার মতো নিত্যপণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। আবার রমজান সামনে রেখে পেঁয়াজ এবং খেজুরের মতো পণ্য বিক্রি করা হয় টিসিবির কার্ডধারীদের কাছে। এই কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে বছরে সরকারকে প্রায় আট থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। শুধু তাই নয়, উদ্যোগটি চলমান থাকায় নিত্যপণ্যের বাজারের ওপর চাপ কমছে এবং ভোগ্যপণ্য সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে রয়েছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এই কার্যক্রম ইতোমধ্যে জনপ্রিয়তা পেয়েছে এবং একইসঙ্গে প্রশংসিতও হয়েছে।
তবে কার্ড বিতরণে অনিয়ম, সময়মতো পণ্য না দেওয়া এবং ডিলারদের পণ্য চুরি করে বিক্রি করে দেওয়াসহ নানা অভিযোগ রয়েছে টিসিবির কার্যক্রমে। এসব অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ফ্যামিলি কার্ডের পরিবর্তে এবার কার্ডধারীদের দেওয়া হচ্ছে স্মার্ট কার্ড। টিসিবি কার্ডধারীদের তালিকা হালনাগাদ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু। এতে প্রকৃত অর্থে যারা টিসিবির পণ্য পাওয়ার যোগ্য সেইসব নিম্ন আয়ের মানুষকে নিয়ে আসা হবে। আর যারা অনিয়ম করে কার্ড নিয়েছে তাদের বাদ দেওয়া হবে।
এদিকে, আগামী জুন মাসের মধ্যে টিসিবি ৭৫ লাখ পরিবারের হাতে স্মার্ট কার্ড তুলে দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করেছে। পর্যায়ক্রমে কোটি পরিবার পাবেন সরকারি বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) স্মার্ট কার্ড।
সম্প্রতি নিম্ন আয়ের এক কোটি পরিবারের কাছে ভর্তুকি মূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পৌঁছে দেওয়া শীর্ষক উদ্যোগের প্রভাব মূল্যায়ন করেছে বিএফটিআই। টিসিবির এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে বেশকিছু চ্যালেঞ্জের কথা উঠে এসেছে সংস্থার গবেষণায়।
এতে বলা হয়, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, কোভিড পরবর্তী সময়ে কর্মসংস্থানের চ্যালেঞ্জ এবং বিপুল সংখ্যক নিম্ন আয়ের মানুষের বর্তমান বাজারের পরিস্থিতি মোকাবিলায় এই কর্মসূচি সরকারের একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। এর মাধ্যমে নিম্ন আয়ের মানুষ এই কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে যা সামাজিক নিরাপত্তার পরিধিকে আরও ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত করার সুযোগ করে দিচ্ছে। তবে ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি কার্যক্রমে বেশকিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে মনে করে সংস্থাটি।
এ ছাড়া বণ্টন সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ, পণ্য সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ এবং প্যাকেজিং সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জের কথা বলেছে বিএফটিআই। ফ্যামিলি কার্ডের আওতায় পণ্য বিক্রি কার্যক্রমের মানোন্নয়নে উপকারভোগী নির্বাচন সংক্রান্ত সুপারিশ, বিতরণ সংক্রান্ত সুপারিশ, পণ্য সংক্রান্ত সুপারিশ এবং প্যাকেজিং সংক্রান্ত সুপারিশ করা হয়।
এ প্রসঙ্গে বিএফটিআইয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন বলেন, কোটি পরিবারের হাতে টিসিবির ভর্তুকি মূল্যের পণ্য বিক্রি কার্যক্রম মূলত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি মানবিক কর্মসূচি। এই কর্মসূচি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে দারিদ্র্য বিমোচনের পাশাপাশি বাজারের ওপর চাপ কমানো সম্ভব হবে। সামাজিক সুরক্ষার এই কর্মসূচির আওতায় দেশের ৫ কোটি মানুষ উপকৃত হচ্ছেন। এ কারণে যারা নিম্ন আয়ের মানুষ অর্থাৎ যারা কার্ড প্রাপ্তির যোগ্য তাদেরকেই বিএফটিআই স্মার্ট কার্ড দেওয়ার সুপারিশ করেছে।
তিনি বলেন, এত বড় কর্মসূচি বাস্তবায়নে বেশকিছু অনিয়ম ধরা পড়েছে গবেষণায়। বিশেষ করে নকল কার্ড তৈরি করে অনেকে টিসিবির পণ্য নিচ্ছেন। একই পরিবারে একাধিক ব্যক্তি টিসিবির পণ্য পাচ্ছেন। এসবই অনিয়ম। এগুলো কীভাবে দূর করা যাবে, কি ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে এবং তা মোকাবিলায় কি করতে হবে সেই বিষয়েও একটি গাইড লাইন দেওয়া হয়েছে। আশা করব টিসিবি সুপারিশগুলো গ্রহণ করে তা বাস্তবায়নে উদ্যোগী হবে।
বিএফটিআইয়ের গবেষণায় যেসব চ্যালেঞ্জ ও সুপারিশ ॥ বিএফটিআইয়ের গবেষণায় ফ্যামিলি কার্ড সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জের কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, ৯৪ শতাংশ উপকারভোগী জানান যে ফ্যামিলি কার্ড/ স্মার্ট ফ্যামিলি কার্ড সংগ্রহ করতে তারা কোনো সমস্যার সম্মুখীন হননি। বাকি ৬ শতাংশ কার্ড পাওয়ার জন্য বিভিন্ন জায়গায় ঘোরা এবং কাগজ জমা দেওয়া, বারবার খোঁজ নেয়া এবং সময় বেশি লাগা সমস্যার কথা ব্যক্ত করেন। স্মার্টকার্ড স্ক্যান এর সময় সার্ভার সমস্যার কারণে পণ্য বিতরণে বিলম্ব হয়।
এ ছাড়া এ সমস্যা সমাধানে নিযুক্ত কোনো কাস্টমার সার্ভিস সুবিধা বা কর্মী নেই। সবার স্মার্ট কার্ড না থাকায়, সবাই পণ্য পাচ্ছে কি না এটা নিশ্চিত করা যায় না। কার্ডের বাইরে অনেক নিম্ন আয়ের মানুষ পণ্য নিতে আসলেও তাদের দেওয়া যায় না, যেহেতু পণ্য শুধুমাত্র কার্ডধারীদের জন্য বরাদ্দ থাকে। নিম্ন আয়ের মানুষের সংখ্যার তুলনায় ফ্যামিলি কার্ড-এর সংখ্যা অনেক কম। কিছু কার্ড একাধিক পরিবার ভাগাভাগি করে পণ্য সংগ্রহ করে। কিছু ক্ষেত্রে নকল কার্ড দিয়ে পণ্য ক্রয় করে।
এ ছাড়া বণ্টন সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জে বিএফটিআই বলছে, দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, লাইনে বিশৃঙ্খলা হয়। কখনো কখনো লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও পণ্য পাওয়া যায় না। পণ্য সংগ্রহের সময় অনেকে টাকা দিয়ে লাইনে জায়গা রাখে। ডিলার তার পরিচিত মানুষদের জন্য পণ্য আলাদা করে রাখে এবং তারা পরে আসলেও তাদের লাইনে দাঁড়াতে হয় না। নির্ধারিত দিনের মধ্যেই পণ্য বিতরণ শেষ করতে হয়। যেসব উপকারভোগী উপস্থিত হতে পারে না, তারা আর ওই মাসে পণ্য পান না।
কিছু জেলায় ডিলারের সংখ্যা উপকারভোগীর সংখ্যার অনুপাতে কম হওয়ায় ডিলার ও উপকারভোগী উভয়েরই কষ্ট হয়। বান্দরবান পাহাড়ি এলাকায় হওয়ায় বেশ কয়েকটি উপজেলায় বিশেষ করে রোয়াংছড়ির মতো দুর্গম পাহাড়ে পণ্য পরিবহনে ও বণ্টনে সমস্যা দেখা দেয়। পণ্য লোড-আনলোডের ক্ষেত্রে শ্রমিক সংকট দেখা যায়। টিসিবির গুদামের সংকট রয়েছে। টিসিবির আঞ্চলিক অফিসের সংখ্যা কম, এক কোটি গ্রাহকের জন্য ১৪টি অফিসের মাধ্যমে সমন্বয় করা কঠিন। টিসিবি কর্তৃক টেন্ডারের মাধ্যমে পণ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে বিলম্ব হয়, এ ছাড়াও পণ্যের জোগান পেতেও দেরি হয় যা উপকারভোগীদের হাতে পণ্য তুলে দিতে বেশি সময় লাগায়।
উপকারভোগী নির্বাচনে অনেকের মতামত নেওয়ার সুযোগ নেই যেহেতু এর জন্যে নির্দিষ্ট কমিটি আছে। পণ্য সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জে বলা হয়, পণ্যের পরিমাণ যথেষ্ট নয়, চাহিদার তুলনায় পণ্য অনেক কম আসে এবং পণ্য খুব দ্রুত শেষ হয়ে যায়। অনেক সময় অন্য এলাকা থেকে পণ্য সংগ্রহ করতে হয়। চট্টগ্রামের মানুষের আতপ চাল খাওয়ার অভ্যাস। কিন্তু এখানে সিদ্ধ চাল বিক্রয় করা হয় যা তাদের খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। মাঝে মাঝে দুর্বল মানের পণ্যও আসে। প্যাকেজিং সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জে বলা হয়, টিসিবি থেকে বরাদ্দকৃত পণ্যগুলো সংগ্রহের ক্ষেত্রে বস্তার মাধ্যমে নিতে হয়। এতে ডিলারদের নতুন করে প্যাকেজিং করতে প্রচুর অর্থ এবং সময় ব্যয় হয়। প্যাকেজিং করে দিলে পণ্যের দাম বেড়ে যায়। এ ছাড়া ফ্যামিলি কার্ডের আওতায় পণ্য বিক্রয় কার্যক্রমের মানোন্নয়নে সুপারিশে বলা হয়, উপকারভোগীদের নির্বাচন মানদ- ঠিক করে যথাযথভাবে তালিকা প্রস্তুত ও উপকারভোগীদের তালিকা প্রতিবছর হালনাগাদ করা প্রয়োজন। নির্ধারিত মানদ-ের ভিত্তিতে উপকারভোগীদের তালিকা তৈরির সময় জনপ্রতিনিধিদের পাশাপাশি স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি যেমন স্কুল-কলেজের প্রধান শিক্ষক, এনজিওর সিনিয়র কর্মকর্তা, মসজিদের ইমাম- তাদের পরামর্শ গ্রহণ করা যেতে পারে। এতে সিলেকশনের ত্রুটি অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব।
এর মাধ্যমে নিম্ন আয়ের মানুষের পরিচয় নিশ্চিত করা যায় এবং যারা এ তালিকার যোগ্য নন তাদের বাদ দিয়ে সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে। স্মার্ট কার্ড বিতরণের ক্ষেত্রে যাদের স্মার্ট কার্ড দেওয়া হবে তাদের তালিকাটি ত্রুটিমুক্ত করা প্রয়োজন। কার্ডের মনিটরিং ব্যবস্থা অর্থাৎ এর ব্যবস্থাপনা, কার্যক্রম এবং হন্তান্তর এই বিষয়গুলোও বিবেচনায় রাখতে হবে। কার্ড পাওয়ার যোগ্য সুবিধাবঞ্চিত পরিবারগুলো নিয়ে তথ্যভান্ডার/ তালিকা হালনাগাদ করতে হবে।
সুবিধাভোগী তালিকা তৈরির প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে কঠোর সরকারি তত্ত্বাবধানের প্রয়োজন। অনলাইনে কার্ডের জন্য আবেদনের সুযোগ রাখা এবং আবেদনের পর কার্ডের আপডেট জানিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। এ ছাড়া ডিলারদের পণ্য বিতরণ প্রক্রিয়া মনিটরিং জোরদার করা যাতে নিয়ম অনুযায়ী ডিলাররা উপস্থিত সকল উপকারভোগীকে পণ্য বিক্রয় করেন। ডিলারের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে। ডিলারের সংখ্যা উপকারভোগীর সংখ্যার সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে। স্মার্টকার্ড স্ক্যান এর সময় সার্ভার সমস্যা সমাধানে কাস্টমার সার্ভিস সুবিধা চালু করা প্রয়োজন। খাদ্য অধিদপ্তরের ডিলার এবং টিসিবি’র ডিলারদের মধ্যে সমন্বয় বাড়ানো যেতে পারে। এ ছাড়া স্মার্ট কার্ড বিতরণ এবং সরেজমিন ও ডিজিটাল মনিটরিং মাধ্যমে চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবিলা করা সম্ভব। ন্যায্যতার ভিত্তিতে উপকারভোগীদের তালিকা নিয়মিত হালনাগাদ করা হলে কর্মসূচিটি আরও বেশি কার্যকর হবে।
টিসিবির পণ্য কিনতে দেওয়া হচ্ছে এক কোটি স্মার্ট কার্ড ॥ টিসিবির পণ্য কিনতে ফ্যামিলি কার্ডের পরিবর্তে এক কোটি স্মার্ট কার্ড দেওয়া হবে। এতে করে কার্ড বিতরণে অনিয়ম দূর হবে বলে আশা করা হচ্ছে। স্মার্ট কার্ড বিতরণের সময় প্রায় ১০ শতাংশ ফ্যামিলি কার্ডে অনিয়ম ধরা পড়ছে বলে জানিয়েছে টিসিবির একটি সূত্র। এদেরকে পুরোপুরি বাদ দিয়ে যারা প্রকৃত অর্থে নিম্ন আয়ের মানুষ তাদেরকে স্মার্ট কার্ড দেওয়া হবে। স্মার্ট কার্ড সবধরনের অসঙ্গতি দূর করবে এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বাড়াবে। এই কার্ড দেখিয়ে উপকারভোগীরা বাজারের চেয়ে সাশ্রয়ী দামে টিসিবির বিক্রি করা চাল, ডাল, পেঁয়াজ ও ভোজ্যতেল কিনতে পারবেন।
স্মার্ট কার্ড তৈরির কাজটি করছে ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ফ্যাসিলিটেশন কোম্পানি (আইআইএফসি) নামের একটি তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) প্রতিষ্ঠান। ইতোমধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন ও বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকায় টিসিবির কার্ড স্মার্ট কার্ডে রূপান্তরের পরীক্ষামূলক কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে হাতে লেখা সব কার্ডই কিউআর কোড সংবলিত স্মার্ট কার্ডে রূপান্তরিত হবে। টিসিবির সূত্রগুলো জানায়, কিউআর কোডে স্ক্যান করলে সেকেন্ডের মধ্যেই গ্রাহকদের সব তথ্য চলে আসবে।
এ কার্ডে থাকা তথ্য মেলানো থাকবে জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) সঙ্গে। ফলে টিসিবির প্রধান কার্যালয়ের পাশাপাশি জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও) মুহূর্তের মধ্যেই বুঝতে পারবেন কারা পণ্য পাচ্ছেন, কারা পাচ্ছেন না।
এ প্রসঙ্গে টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আরিফুল হাসান বলেন, কার্ডটি হবে ছোট এবং সহজে ব্যবহারযোগ্য। ইতোমধ্যে ৪০ ভাগ গ্রাহকের হাতে স্মার্ট কার্ড তুলে দেওয়া হয়েছে। এই স্মার্ট কার্ড সবধরনের অসঙ্গতি দূর করবে এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বাড়াতে ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন, স্মার্ট করতে গিয়ে বেশকিছু অনিয়ম ধরা পড়েছে। এ কারণে তথ্য যাচাই-বাছাই করে প্রকৃত গ্রাহকদের নামে স্মার্ট কার্ড করা হচ্ছে। যারা এতদিন অনিয়ম করে কিংবা নকল ফ্যামিলি কার্ড দিয়ে পণ্য নিয়েছেন তারা এবার বাদ পড়বেন। টিসিবিতে অনিয়মের কোনো সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, প্রতিবছর সরকার আট থেকে ১০ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি দিচ্ছে টিসিবিতে। এর ফলে নিম্ন আয়ের মানুষ কমমূল্যে খাদ্যপণ্য পাচ্ছেন। যাতে বাজারেও ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে। মূল্যস্ফীতি কমে আসছে। তিনি বলেন, ভোজ্যতেল ও চিনির মতো পণ্য আমরা নিজেরাই উৎপাদনের কথা ভাবছি। বিষয়টি নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। এর বাইরে গার্মেন্টস কর্মীদের মধ্যে যারা এতদিন টিসিবির কার্ড পায়নি তাদের সবাইকে নিয়ে আসা যায় কি না সে বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে।
এদিকে, টিসিবির স্মার্ট কার্ড বিতরণে উপকারভোগীদের সঠিক তালিকা প্রণয়নে স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তালিকা প্রণয়নে স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা বজায় রাখার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। যারা অসহায় এবং পিছিয়ে পড়া প্রান্তিক জনগোষ্ঠী শুধু তারাই যেন টিসিবির স্মার্ট কার্ড পান সে বিষয়ে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয়েছে। ঢাকা মহানগরীতে দিন দিন স্বল্প আয়ের ভাসমান মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। এসব মানুষের দিক চিন্তা করেই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় ৭ লাখ এবং উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার জন্য ৫ লাখ স্মার্ট কার্ড দেওয়া হবে। যারা সত্যিকার অর্থেই নি¤œ আয়ের মানুষ তারাই যেন স্মার্ট কার্ড পান সে বিষয়ে জোর দেওয়া হচ্ছে। সরকারের পাশাপাশি অর্থনীতিবিদরাও এ বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন।
এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারি পদক্ষেপগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো টিসিবির পণ্য বিক্রি কার্যক্রম। তবে এটা দিয়ে পুরো দেশের বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। কারণ টিসিবির যে সক্ষমতা আছে তা দিয়ে বাজারের চাহিদা ও সরবরাহের ক্ষুদ্র একটা অংশ পূরণ করা সম্ভব। যারা টিসিবির পণ্য কিনতে পারবেন তারাই সুবিধা পাবেন। তিনি বলেন, টিসিবির কার্যক্রম আরও বাড়াতে হবে। বর্তমানে কোটি পরিবার টিসিবি থেকে উপকৃত হচ্ছেন। আগামীতে এ সংখ্যা আরও বাড়াতে হবে। এ ছাড়া কার্ড বিতরণে যেসব অনিয়ম করা হয়েছে তা দূর করে প্রকৃত নিম্ন আয়ের মানুষকে স্মার্ট কার্ড দিতে হবে। জানা গেছে, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাহায্যে তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। কার্ড প্রণয়নে তাদের সহায়তা করেছেন জেলা প্রশাসক ও থানা নির্বাহী অফিসাররা। এরপরও সারাদেশে প্রায় ১০ শতাংশ কার্ড বিতরণে জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন এসব অনিয়ম দূর করা গেলে টিসিবি থেকে আরও বেশি সংখ্যক মানুষ উপকৃত হতে পারবেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।